আমরা কমবেশি সবাই ‘কমফোর্ট ফুড’ কথাটির সঙ্গে পরিচিত। কাজ বা পড়াশোনার চাপ, স্ট্রেস, হৃদয়ভাঙ্গন- সবকিছু থেকে যখনই মানুষ একটু স্বস্তি পেতে চায়, তখনই সবাই এমন কিছু খাবারের খোঁজ করে, যা তার মনকে প্রশান্ত ও চাঙা করে। মূলত এসব খাবার গুলো পশ্চিমে কমফোর্ট ফুড বলে। আমেরিকায় এই শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯৬৬ সালে পাম বিচ পোস্ট পত্রিকায় ও বিসিটি বিষয়ক একটি নিবন্ধে। তাতে বলা হয়, যখন কেউ প্রচণ্ড স্ট্রেসে থাকে, তখন কমফোর্ট ফুডে শুধু স্বস্তিই নয়, একধরনের নিরাপত্তাবোধ হয়। সেখানে আরও বলা হয়েছে যে, যেসব মানুষ বেশি দুঃখে থাকে, তাঁদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা বেশি এই খাবারের কারণেই।

দেশভেদে কমফোর্ট ফুড
বিভিন্ন দেশের আছে নিজস্ব কমফোর্ট ফুড। আমাদের দেশে যেমন ফুচকা। এরপর চটপটি, ঝালমুড়ি, মোমো, হালিম, বিরিয়ানি ইত্যাদি। বর্ষাকালে খিচুড়ি, বেগুন ভাজি, আর ইলিশ মাছকেও কমফোর্ট ফুড বলা যায়। আবার কারো পছন্দ সাদা ভাত ও গরুর মাংস। আমেরিকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় কমফোর্ট ফুড হচ্ছে আইসক্রিম। এরপরই আসে চকলেট, চকলেট কেক, ব্রাউনি, ম্যাক এন চিজ, ম্যাশড পটেটো, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বার্গার ইত্যাদি।

কী আছে কমফোর্ট ফুডে?
কমফোর্ট ফুডের হেলথ বেনিফিট খুব একটা বেশি নয়। কারণ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো হাই কার্বোহাইড্রেট, হাই ফ্যাট, হাই ক্যালরি সমৃদ্ধ এবং অস্বাস্থ্যকর। তার ওপর ক্যালরিও অনেক বেশি। একটি নরমাল চিজ বার্গারে রয়েছে ৩০০ ক্যালরি, ফ্যাট আছে ১২ গ্রাম এবং কার্বোহাইড্রেট ৩৩ গ্রাম। ২টি নরমাল সাইজের ব্রাউনিতে আছে ৪৬৬ ক্যালরি, ২৯ গ্রাম ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেট ৫০ গ্রাম। ১০০ গ্রাম চকলেট আইসক্রিমে আছে ২১৬ ক্যালরি, ২৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ১১ গ্রাম ফ্যাট। নরমাল ১ পিস চকলেট কেকে আছে ৩৭১ ক্যালরি, ফ্যাট আছে ১৫ গ্রাম এবং কার্বোহাইড্রেট ৫৩ গ্রাম। এক স্লাইস পিৎজায় আছে ২৮৪ ক্যালরি, ফ্যাট ১০ গ্রাম এবং কার্বোহাইড্রেট ৩৬ গ্রাম।

কমফোর্ট ফুড কি স্বাস্থ্যকর?
বোঝাই যাচ্ছে, একটু মানসিক স্বস্তির আশায় কি পরিমাণ ফ্যাট, কার্ব ও ক্যালরি শরীরে ঢোকানো হচ্ছে। তার ওপর আপনি যদি ঠিকমতো ব্যায়াম বা নিয়মমাফিক হাঁটাচলা না করেন, বাড়বে ওজন, সঙ্গে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিস এমনকি ক্যানসার হওয়ার ঝুঁঁকি। হতে পারে গ্যাস্ট্রিক, আলসার বা হজমে সমস্যা। শরীরে বেড়ে যাবে টক্সিন। তৈলাক্ত ও অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবারের জন্য বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে ত্বকে। যেমন ব্রণের প্রকোপ বাড়তে পারে, এমনকি অল্প বয়সে মুখে দেখা দিতে পারে বয়সের ছাপ। তাই আমাদের উচিত এসব কমফোর্ট ফুড খাওয়ার আগে সতর্ক থাকা।

যদি প্রায়ই এসব খান, তাহলে নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটাচলা করতে হবে। খাওয়ার পর অবশ্যই অতিরিক্ত ক্যালরি ও ফ্যাট ঝরিয়ে ফেলতে হবে।