Home লাইফস্টাইল কোরবানির বর্জ্য অপসারণে করণীয়

কোরবানির বর্জ্য অপসারণে করণীয়

উপমা ইসলাম রুপা
৪১ views

প্রতি বছর ঈদুল আজহার সময় দেশের শহর ও গ্রামে লক্ষ লক্ষ পশু কোরবানি দেওয়া হয়। এই ধর্মীয় উৎসব যেমন আত্মত্যাগ ও সহানুভূতির প্রতীক, তেমনি এর পরবর্তী প্রভাব পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হতে পারে ভয়াবহ। তাই কোরবানির বর্জ্য যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা করা জরুরি।

ঢাকা শহরে কোরবানির সময় গড়ে কয়েক হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য সৃষ্টি হয়। যার মধ্যে রক্ত, হাড়, চামড়া, চর্বি ও না খাওয়া পশুর অংশবিশেষ থাকে। এগুলোর দ্রুত অপসারণ না হলে দুর্গন্ধ, কীটপতঙ্গের বিস্তার, ড্রেনেজ ব্লক ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

এমনকি আবাসিক এলাকাকে ভয়াবহভাবে দূষিত করে ফেলে। বর্জ্য পচে ডেঙ্গু বা অন্যান্য রোগবাহী মশার বিস্তার ঘটে এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়ে। শিশু-বৃদ্ধদের স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, কোরবানি ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে পরিচালনা করা গেলে কোরবানির বর্জ্যই সম্পদে পরিনত হতে পারে। কোরবানির বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলা হলে তা পানিতে মিশে নদী ও খাল দূষিত করে।

এসব জৈব বর্জ্য থেকে মিথেন ও অ্যামোনিয়ার মতো গ্যাস নির্গত হয়। যা জলবায়ু পরিবর্তনে অবদান রাখে। অথচ সৌদি আরবে কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (IsDB) কর্তৃক পরিচালিত একটি প্রকল্প রয়েছে।

যা পরিবেশ দূষণ রোধ ও দরিদ্রদের মাঝে মাংস বিতরণে সহায়তা করে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় এক মিলিয়ন পশু জবাই করা হয় এবং মাংস দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এর মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ কমানো ও মাংস অপচয় রোধ করা সম্ভব হচ্ছে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

ঢাকা শহরে কোরবানির সময় কয়েক হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য সৃষ্টি হয়

আমাদের দেশে কোরবানি দেয়ার স্থান নির্ধারিত থাকে না। যে যার যার মত বিচ্ছিন্নভাবে পশু কোরবানি করেন। যার ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পালন কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে মাংস প্রক্রিয়াকরণ ও বিতরনও সঠিকভাবে মেনে চলা হয় না। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে পশু কোরবানির পর মাংস বিতরণ পর্যন্ত যেতেই অনেক সময় লেগে যায়। ফলে এই মাংস খাওয়ার উপযোগিতা অনেকাংশে কমে যায়।

অথচ কাতারের মন্ত্রণালয় কোরবানির সময় পশু জবাইয়ের জন্য অনুমোদিত স্থানগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে। এতে পশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বর্জ্য অপসারণ ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকে।

সৌদি আরব ও কাতারে কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে, যা পরিবেশ সুরক্ষা ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে এই ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরো যোগ করেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকার এখনো জনসচেতনতা তৈরি করতে পারেনি। মানুষ জানে না কোনটি বর্জ্য আর কোনটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য সম্পদ।

কোরবানির বর্জ্য

কোরবানির বর্জ্য থেকে মিথেন ও অ্যামোনিয়ার মতো গ্যাস নির্গত হয়

সচেতনতা বাড়াতে হবে
শুধু সিটি কর্পোরেশনকে দায়িত্ব দিলেই হবে না। নাগরিকদেরও জানতে হবে কোন বর্জ্য কোথায় ফেলতে হবে। কিভাবে ফেললে তা পরিবেশ বান্ধব হয়। কিছু জায়গায় এখন ‘কমিউনিটি সলিউশন’ চালু হচ্ছে। যেখানে স্বেচ্ছাসেবক দল আগে থেকেই সুনির্দিষ্ট পয়েন্টে বর্জ্য সংগ্রহ করে।

কুরবানির আগে সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত জায়গায় কুরবানি দেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বর্জ্য অপসারণে নির্দিষ্ট ব্যাগ ও পাত্র ব্যবহার করুন। কুরবানির পরপরই জায়গাটি পানি ও জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করুন।

সামাজিকভাবে প্রতিবেশীদের সঙ্গে এক হয়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে পারেন। শিশুদেরও এই পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা দিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মসজিদে খুৎবা, লিফলেট বিতরণ ইত্যাদির মাধ্যমে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

কোরবানির আগেই ওয়ার্ডভিত্তিক বর্জ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা করা উচিত। সিটি কর্পোরেশন থেকে পরিবেশ বান্ধব ব্যাগ বিতরণ করলে তা পরিবেশ সুরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে। কমিউনিটি ক্লিনিং গ্রুপ ও তরুণদের নিয়ে কাজ করার সুযোগ তৈরি করতে হবে।

রিসাইক্লিং ও কম্পোস্টিং
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোরবানির হাড় ও চর্বি থেকে গ্লিসারিন, পশুখাদ্য এবং জৈব সার তৈরি সম্ভব। বর্জ্য থেকে কম্পোস্ট সার তৈরি করে কৃষিখাতে ব্যবহার করা যায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোরবানির বর্জ্য অপসারণে উদ্যোগ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদের সভাপতিত্বে গত ১৫ মে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়-

কোরবানির প্রাণির নির্ধারিত হাটের বর্জ্য ও কোরবানি পরবর্তী বর্জ্য পরিবেশসম্মতভাবে অপসারণের লক্ষ্যে সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা বিনামূল্যে পরিবেশসম্মত ব্যাগ সরবরাহ করবে। স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রতিটি হাটে মনিটরিং সেল স্থাপন করা হবে।

কোরবানি বর্জ্য

বাংলাদেশে কোরবানি দেয়ার স্থান নির্ধারিত থাকে না

এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোারেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কোরবানির বর্জ্য ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

২৭ মে এক তথ্য বিবরণীতে আরো জানানো হয়- পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির বর্জ্য পরিবেশসম্মতভাবে অপসারণের জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশের সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় প্রচারপত্র বিতরণের জন্য চার লাখ প্রচারপত্র মুদ্রণ করা হবে।

এ ছাড়া, নির্দিষ্ট স্থানে প্রাণি কোরবানিসহ সুষ্ঠুভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি ঈদের আগের জুমা ও ঈদের নামাজের খুতবার সময় প্রচার করা হবে।

তাছাড়া, পরিবেশ দূষণ রোধে স্থানীয় হাট-বাজার ও উন্মুক্ত এলাকায় গণযোগাযোগ অধিদফতরের সহযোগিতায় প্রচারপত্র বিতরণ করা হবে।

কুরবানি শুধু মাংস খাওয়ার উৎসব নয়। বরং এটি এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে সমাজের দরিদ্রদের সহায়তা করার সুযোগও সৃষ্টি হয়। ঠিক তেমনি, কুরবানির সময় পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা, বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও একটি সামাজিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ