ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানো আর জমিয়ে খাওয়াদাওয়া। আর এই খাওয়ার আয়োজনটা যদি হয় খানদানি, ঐতিহ্যবাহী এবং একটু ভিন্নস্বাদের—তাহলে তো উৎসবের রঙ আরও গাঢ় হয়ে ওঠে। তাই এই ঈদে খাসির মাংসে তৈরি করুন অতীতের স্মৃতি জাগানো ‘রেলওয়ে মাটন কারি’। একসময় ট্রেনে প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের জন্য পরিবেশিত হতো এই মশলাদার কিন্তু ভারসাম্যপূর্ণ এক পদ। ব্রিটিশ সাহেবদের হালকা স্বাদ ও ভারতীয় বাবুর্চিদের মশলার সংমিশ্রণে এই কারি হয়ে উঠেছিল এক অনন্য রেসিপি—যা আজও রসনার রাজা হয়ে আছে।
রেলওয়ে মাটন কারির পেছনের গল্প
১৯০০ সালের দিকে ভারতের রেলপথে শুরু হয় বিলাসবহুল রেলসেবা। বড়লাট, সাহেব ও অভিজাত ভারতীয় যাত্রীরা এই ট্রেনে যেতেন শহর থেকে শহরে। তাদের খাবার ছিল চূড়ান্ত যত্নে প্রস্তুত—ভারতীয় স্বাদে তৈরি হলেও ব্রিটিশ রুচি মেনে একটু হালকা ঝাল ও কম তেল-ঘিয়ে রান্না করা হতো। এই ‘রেলওয়ে মাটন কারি’ ছিল এমন এক পদ, যা মাটনের সমস্ত স্বাদকে ধরে রাখে হালকা টক-ঝালের মেলবন্ধনে।
উপকরণ
- খাসির মাংস – ১ কেজি (হাড়সহ)
- পেঁয়াজ – ৩টি (কুচানো)
- রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ
- আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
- টমেটো – ২টি (কুচানো)
- শুকনা মরিচ – ৩টি (ভেজে গুঁড়া করে)
- ধনে গুঁড়া – ১ চা চামচ
- জিরা গুঁড়া – ১ চা চামচ
- দই – ১/২ কাপ
- তেঁতুল – ১ টেবিল চামচ (পানি ভিজিয়ে রস বের করা)
- গরম মসলা গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
- তেজপাতা, এলাচ, দারচিনি – পরিমাণমতো
- সরিষার তেল/সাদা তেল – ১/২ কাপ
- লবণ – স্বাদমতো
- পানি – প্রয়োজন অনুযায়ী

‘রেলওয়ে মাটন কারি’ ছিল এমন এক পদ, যা মাটনের সমস্ত স্বাদকে ধরে রাখে হালকা টক-ঝালের মেলবন্ধনে, ছবি: ইওর প্ল্যাটফর্ম
প্রণালী:
- প্রথমে খাসির মাংস ধুয়ে নিন এবং দই, আদা-রসুন বাটা, অল্প লবণ দিয়ে মেরিনেট করে রাখুন কমপক্ষে ১ ঘণ্টা।
- কড়াইয়ে তেল গরম করে তেজপাতা, এলাচ, দারচিনি দিয়ে ফোড়ন দিন।
- এরপর পেঁয়াজ দিয়ে হালকা বাদামি করে ভাজুন।
- টমেটো, ধনে-জিরা গুঁড়া, শুকনো মরিচের গুঁড়া দিন এবং ভালোভাবে কষান।
- এবার মেরিনেট করা মাংস দিন এবং অল্প আঁচে ভালোভাবে কষাতে থাকুন যতক্ষণ না তেল ছাড়ে।
- পানি দিন, ঢেকে দিন এবং মাংস সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
- তেঁতুলের রস ও গরম মসলা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ রান্না করে নামিয়ে ফেলুন।
এই রাজকীয় রেলওয়ে মাটন কারি পরিবেশন করুন বাসমতী পোলাও, পরোটা বা নানরুটির সঙ্গে। সাথে রাখুন লেবুর টুকরো, সালাদ আর ঠান্ডা বোরহানি।
ঈদের দাওয়াতে খাসির মাংসের নানান পদ থাকলেও এই রেসিপিটি আলাদা কারণ এটি একদিকে ঐতিহ্যবাহী, আবার অন্যদিকে একটু ব্যতিক্রমী। ঘন ঝোল, সুগন্ধি মসলা, নরম খাসির মাংস এবং হালকা টক স্বাদ—সব মিলিয়ে এটি হতে পারে ঈদের মেন্যুর সেরা চমক।