কোরবানির ঈদ মানে মাংস খাবারের বাড়তি চাপ। সকাল থেকে রাত, দিনব্যাপী খাবারের মেন্যুতে মাংসের একাধিক পদ থাকে। আর মাংস খাবার পরে দাঁতের ফাঁকে আটকাবে না তা কি হয়?
আর দাঁত যদি হয় আঁকাবাঁকা কিংবা গর্তযুক্ত, তাহলে তো আর কথাই নেই! এরপরে খোঁজ দ্যা সার্চ; শক্ত-সুঁচালো কাঠি-টুথপিক কিংবা এ ধরনের যা কিছু হাতের কাছে পাওয়া যায়, তাই খুঁজে বের করে আয়েশ করে খুঁচিয়ে আটকে পড়া মাংস বের করার মিশন শুরু হয়।
এতে করে মাড়িতে প্রদাহ, রক্তক্ষরণ, ব্যথা হতে পারে। পাশাপাশি দুই দাঁতের মাঝের ফাঁকা বেড়ে যেতে পারে। দাঁতের গোঁড়া ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এমনকি মাড়ি দেবে যেতে পারে। আবার এই আটকে পড়া মাংস বের না করলেও বিপদ। মুখের ভেতরে পঁচে দূর্গন্ধ হতে পারে, মাড়ি ফুলে যেতে পারে।
তাহলে সমাধান কি?
ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হবে। এগুলো ফার্মেসীতে কিনতে পাওয়া যাবে। শুধুমাত্র কোরবানির ঈদেই নয়, কখনও কোনো খাবার আটকে গেলে অযথা খোঁচাখুঁচি না করে ফ্লসিং করুন।
শুধু মাংস খেলেই চলবে? হাড্ডি চাবাতে হবে না!
এই হাড্ডি চাবাতে গিয়েই বিপত্তি ঘটে। সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে শক্ত হাড্ডি চাবাতে গেলে দাঁতের কোণা ভেঙ্গে যেতে পারে। দাঁতে ফাটল ধরতে পারে। দাঁত নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে। গর্তযুক্ত দাঁত বা রূট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট এর পরে ক্রাউন করা হয়নি, এমন দাঁত ভেঙ্গে যেতে পারে।
ধারালো হাড্ডি ফসকে গিয়ে গালের ভেতরে, জিহ্বায় কিংবা দাঁতের গোড়ায় মাড়িতে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। তাই হাড্ডি চাবানোর পূর্বে সতর্কতা প্রয়োজন। কোনো দাঁতে ফিলিং, ডেন্টাল ক্রাউন বা ক্যাপ করা থাকলে সেটা দিয়ে হাড্ডি না চাবানোই ভালো।

দীর্ঘদিন স্কেলিং না করানো রক্তপড়া, প্রদাহ, মুখের দূর্গন্ধের অন্যতম প্রধান কারণ , ছবি : মেডপালট্রিপ
নিকটস্থ ডেন্টিস্টকে দেখিয়ে দাঁতের কন্ডিশন জেনে নিন। রূট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট করা দাঁতে ক্রাউন না করা থাকলে ক্রাউন বসিয়ে নিন। অতিরিক্ত শক্ত হাড্ডি না চিবিয়ে কিছুটা নরম হাড্ডি চাবাতে পারেন। অনেক বড় হা করে হাড্ডি চাবাতে গিয়ে কিংবা অনেক বেশী শক্তি প্রয়োগ করতে গিয়ে TMJ তে বা নীচের চোয়ালের সাথে কানের সংযোগস্থলে সমস্যা হতে পারে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ।
ঈদকে ঘিরে সৌন্দর্য সচেতন ছেলেরা সেলুনে যান। মেয়েরা পার্লারে যান। চুলের যত্ন আর মুখমণ্ডল এর রূপচর্চায় বেচারা দাঁত সবসময়ই অবহেলিত। দাঁতও যে প্রকাশ্য সৌন্দর্যের অংশ, সেটা অনেকেই বেমালুম ভুলে যান। সামনের দিকের দাঁতের গোড়ায় জমে থাকা ক্যালকুলাস বা পাথর, সিগারেট-পান-আয়রন যুক্ত পানির কালচে-লালচে দাগ দাঁতের সৌন্দর্যকে কমিয়ে দেয়। সেদিকে অনেকেই লক্ষ্য করেন না।

দাঁতে খাবার আটকে গেলে অযথা খোঁচাখুঁচি না করে ফ্লসিং করুন, ছবি : সোকলিডেন্টাল
আর মুখের দূর্গন্ধের কথা না হয় বাদই দিলাম। যত দামী পারফিউমই ব্যবহার করেন না কেনো আর যতই ক্লোজআপ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন না কেনো, শেষমেশ মুখের দূর্গন্ধ ফিচারিং “দূরে সরে যাবার গল্প রচিত হবে। যদি কোনো সমাধান না করা হয়।
যদিও দূর্গন্ধ আরো কিছু কারনেও হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন স্কেলিং না করানো অন্যতম প্রধান কারন। তাই ঈদের পূর্বে নিকটস্থ বিডিএস ডিগ্রীধারী ডেন্টিস্টের নিকট গিয়ে স্কেলিং এবং পলিশিং করিয়ে নিন। আর ঈদের পরে গাঁটছড়া বাঁধার আয়োজন থাকলে হোয়াইটেনিংও করিয়ে নিতে পারেন।
জম্পেশ খাওয়াদাওয়া হলে সাথে কোমল পানীয় না থাকলে কি আর চলে? আমরা সবাই জানি এসব দাঁতের জন্যে কতটা ক্ষতিকর। তাই যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। কোমল পানীয় খাওয়ার সাথে সাথে দাঁতব্রাশ না করে, ঘন্টাখানেক পরে ব্রাশ করতে পারেন। আর যারা ডায়াবেটিকস, হাই প্রেসার, ফ্যাটি লিভার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগে ভূগছেন, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমিত পরিমাণে আহার করুন।
ঈদের সময়ে নাড়ির টানে অনেক ডেন্টিস্টই ছুটি কাটাতে গ্রামে আপনজনদের নিকটে চলে যান। তাই অধিকাংশ ডেন্টাল চেম্বারই বন্ধ থাকে। সম্ভব হলে ঈদের আগেই দাঁতের সমস্যার সমাধান করে ফেলুন। আর মাংস-হাড্ডি খাওয়া জনিত কিংবা অন্য কোনো কারনে দাঁতের সমস্যায় পড়লে ঘরোয়া সমাধান খুঁজে সমস্যাকে জটিলতর না করে নিকটস্থ ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করুন।
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
লেখক: বিডিএস, সাপ্পোরো ডেন্টাল কলেজ