এলাচি-লবঙ্গ-দারুচিনি, রান্নাঘরে এই মশলার উপাদান থাকবে না, তা তো ভাবাই যায় না। তবে এদের ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহারও কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। লবঙ্গ সাধারণত ব্যবহার করা হয় এশিয়া, আফ্রিকা, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে ঝাল এবং মিষ্টি জাতীয় খাবারে । তবে বেশ কয়েক হাজার বছর থেকে এই অঞ্চলগুলোতে ঔষধি উপাদান হিসেবেও এর ব্যবহার হয়ে আসছে। লবঙ্গের ভেতর রয়েছে ‘ইউজেনল’ নামের একটি যৌগ, যা এর সুগন্ধের মূল কারণ। এর ৭২ থেকে ৯০ শতাংশই ইউজেনলে ভরপুর। যৌগটি জীবাণু ও ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। এতে আরও আছে ক্যারিওফিলিন নামের আরেকটি যৌগ যা একধরনের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান। চলুন জেনে নেওয়া যাক লবঙ্গের সব ঔষুধি গুনাগুণের কথা-
দাঁতের নানা সমস্যার সমাধানে
শোনা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব তিন শতকে চীনে যখন হান রাজবংশের শাসন চলছে, তখন নাকি সেখানকার রাজ্যসভায় মুখে লবঙ্গ রেখে প্রবেশ করতে হতো। কারণ, এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। আর আমাদের এই উপমহাদেশে দাঁতে সামান্য ব্যথা হলেই দাদি–নানিরা লবঙ্গ খেতে বলতেন। এতে নাকি ব্যথার উপশম হয়। নানা রকমের পরীক্ষা–নিরীক্ষা করার পর এর সত্যতা মিলেছে। ৪০ জনকে নিয়ে করা ২১ দিনের একটি গবেষণার জন্য সবাইকে লবঙ্গ, টি ট্রি ওয়েল আর তুলসীমিশ্রিত ভেষজ মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে বলা হয়। এরা সবাই দাঁতের কোনো না কোনো সমস্যায় ভুগছিলেন। ২১ দিন পর দেখা যায়, দাঁতের সমস্যা, যেমন দুর্বল মাড়ি, দুর্গন্ধ, প্ল্যাক সবকিছুই প্রায় সেরে গেছে। এ জন্য দন্ত্য চিকিৎসকেরা প্রায়ই রোগীদের ওষুধের পাশাপাশি লবঙ্গ চা বা আস্ত লবঙ্গ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বর্তমানে অনেক টুথপেস্টের প্রধান উপাদান হিসেবে এই মসলা ব্যবহার হয়।
ক্যানসার প্রতিরোধে
লবঙ্গ অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের আধার। আগেই বলা হয়েছে ইউজেনলের কথা। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা ভিটামিন ই–এর চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি কার্যকরভাবে শরীরে ফ্রি র্যাডিকেলের ফলে হওয়া অক্সিডেটিভ ক্ষতি থামাতে পারে। অক্সিডেটিভ ক্ষতির কারণে ক্যানসার হয়ে থাকে। নিয়মিত লবঙ্গ খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায়
লো বোন মাস বা হাড়ের কম ঘনত্ব এমন একটি অবস্থা, যা বয়স্কদের অস্টিওপরোসিস রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে, ইউজেনল হাড়ের ঘনত্ব বাড়িয়ে এটি মজবুত করে। এছাড়া লবঙ্গ ম্যাঙ্গানিজের উৎকৃষ্ট উৎস। ক্যালসিয়ামের মতো এটিও হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপকারী।
যেভাবে খাওয়া যায়
মসলা হিসেবে রান্নায় তো দেওয়া যায়ই। লবঙ্গের অন্যান্য উপকারিতা ভালোভাবে পেতে প্রতিদিন অন্তত এক কাপ লবঙ্গের চা খেতে পারেন। বানানোর পদ্ধতি খুবই সহজ। এক কাপ গরম পানিতে ৫-৬টি লবঙ্গ জ্বাল দিলেই তৈরি লবঙ্গ চা। সর্দি–কাশিতেও এটি বেশ উপকারী। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা না থাকলে সামান্য লবণ দিয়ে এটি চিবিয়ে খেতে পারেন।

লবঙ্গের ইউজেনল হাড়ের ঘনত্ব বাড়িয়ে এটি মজবুত করে
সতর্কতা
লবঙ্গের ইউজেনলের গুণাগুণ অনস্বীকার্য। তবে মনে রাখতে হবে যে এটি বেশ টক্সিক একটি উপাদান। অতিরিক্ত লবঙ্গ খেলে যকৃতের ক্ষতি হতে পারে। এ জন্য এটি নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খাওয়া উচিৎ। ১৫ বছরের নিচের শিশুদের আলাদা করে লবঙ্গ বা এর চা থেকে দূরে রাখুন।