Home লাইফস্টাইল যেভাবে এলো বাবা দিবস

যেভাবে এলো বাবা দিবস

ফাহমিদা শিকদার
৮৪ views

প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার পালিত হয় ‘বাবা দিবস’ বা ফাদার’স ডে। পিতৃত্ব, পিতার ত্যাগ, দায়িত্ব এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা জানাতেই এই দিনটি পালিত হয় বিশ্বজুড়ে। তবে এই দিবসের পেছনে রয়েছে এক আবেগঘন ইতিহাস, একজন মেয়ের ভালোবাসা, আর একটি অনুরোধ—যা বদলে দিয়েছে বিশ্বের লাখো সন্তানের উপলব্ধি।

বাবা দিবসের সূচনা: এক মেয়ের আবেগময় অনুরোধ
বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে বিশ্বজুড়ে পিতৃ দিবস উদযাপন শুরু হয়। মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে সন্তানদের প্রতি দায়িত্বশীল ও ভালোবাসাপূর্ণ—এই বার্তাটি পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এই দিবসের সূচনা। পৃথিবীর সব বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাতেই এই উদ্যোগ।

ধারণা করা হয়, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্ট শহরের একটি গির্জায় প্রথম পিতৃ দিবস পালন করা হয়। তবে আলাদাভাবে আরও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে ওয়াশিংটনের বাসিন্দা সনোরা স্মার্ট ডড-এর মাধ্যমে। মা হারানোর পর তার একাকী বাবার ত্যাগ দেখে অভিভূত হন। তার বাবা উইলিয়াম স্মার্ট, আমেরিকান সিভিল ওয়ারের প্রাক্তন সৈনিক, যিনি স্ত্রী মারা যাওয়ার পর একাই ছয় সন্তানকে লালনপালন করেন।

63056EAA 176D 4172 BEB8 910D3FCB

সনোরা স্মার্ট ডড এবং তাঁর বাবা উইলিয়াম স্মার্ট, ছবি: ফক্স নিউজ

তিনি ১৯০৯ সালে গির্জায় একজন পুরোহিতের বক্তৃতা শুনে অনুপ্রাণিত হন, যেখানে মা’দের প্রশংসা করা হচ্ছিল। সনোরা মনে করেন—বাবাদের জন্যও তেমনি সম্মান জানানোর প্রয়োজন রয়েছে। এই ভাবনা থেকেই তিনি নিজ উদ্যোগে পরের বছর, অর্থাৎ ১৯ জুন ১৯১০ সালে প্রথমবারের মতো ফাদার’স ডে উদযাপন করেন।

শুরুতে বাধা, তারপর ধীরে ধীরে স্বীকৃতি
প্রথমদিকে পিতৃ দিবস নিয়ে মানুষের আগ্রহ খুব বেশি ছিল না। অনেকে একে হাস্যকর বলেও মনে করতেন। মা দিবসের তুলনায় বাবা দিবসের গুরুত্ব সমাজে তেমনভাবে প্রতিফলিত হয়নি।

তবে সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। ১৯১৩ সালে মার্কিন কংগ্রেসে বাবা দিবসকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণার একটি বিল উত্থাপিত হয়। পরে ১৯২৪ সালে প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ এই প্রচেষ্টায় সমর্থন জানান।

চূড়ান্তভাবে, ১৯৬৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে ফাদার’স ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। আর ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন বাবা দিবসকে স্থায়ী রাষ্ট্রীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা দেন। সেই থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এই দিনটিকে পিতৃ দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এই দিনে সন্তানেরা তাদের বাবাকে শুভেচ্ছা জানায়, উপহার দেয়, অনেক সময় পরিবারের সঙ্গে দিনটি উদযাপন করে। স্কুল বা অফিসে বাবাদের জন্য সম্মাননা অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে।

fathers day concept with daughte

বাবা দিবসে সন্তানেরা তাদের বাবাকে শুভেচ্ছা জানায়, উপহার দেয়, অনেক সময় পরিবারের সঙ্গে দিনটি উদযাপন করে, ছবি: ফ্রিপিক

বাবা দিবসের তাৎপর্য

আপাতভাবে অনেকের কাছেই মা দিবস বা পিতৃ দিবসের মতো দিবসগুলো তেমন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে না-ও হতে পারে। তবে তাই বলে এসব দিবস একেবারে অপ্রয়োজনীয়—এমনটা বলা ঠিক নয়। সন্তানের প্রতি একজন বাবার ভালোবাসা গভীর ও নিঃস্বার্থ। পিতৃ দিবস উপলক্ষে সন্তানদের একটি বিশেষ সুযোগ তৈরি হয়—নিজের বাবাকে হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানোর।

এমন আয়োজনের মাধ্যমে সমাজে ও পরিবারের মধ্যে বাবাদের অবদানকে সম্মান জানানো হয়, যা বাবাদের মনে আনন্দ এবং গর্বের অনুভূতি এনে দেয়। অনেক সন্তানের মধ্যেও এমন দিবস সচেতনতা জাগাতে পারে—যারা সাধারণত পিতা-মাতার যত্ন নেওয়া বা খেয়াল রাখার ব্যাপারে উদাসীন। এই ধরনের দিবস তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা মনে করিয়ে দেয়, যা পারিবারিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে তোলে। সারকথা, পিতৃ দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো—পিতার সামাজিক ও পারিবারিক ভূমিকা ও গুরুত্বকে বিশেষভাবে সম্মান জানানো এবং তা নতুন করে সকলের সামনে উপস্থাপন করা।

বাবা দিবস শুধু এক দিনের আয়োজন নয়—এটি একজন বাবার সারাজীবনের স্নেহ, দায়িত্ব ও ভালোবাসার প্রতীক। তাই এই দিনে কেবল উপহার নয়, দিনটিকে সময় ও কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ করে তোলাটাই হোক সত্যিকারের উদযাপন।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ