Home সর্বশেষ নারীদের ক্যান্সার সচেতনতা

নারীদের ক্যান্সার সচেতনতা

এই উপসর্গ হলে অবহেলা নয়

উপমা ইসলাম রুপা
১১ views

নারী ও পুরুষের দেহগত গঠন, হরমোন এবং জীবনধারায় ভিন্নতা রয়েছে। যে কারণে ক্যানসারের উপসর্গগুলোও অনেক সময় আলাদা হয়ে থাকে। যেমন স্তন ক্যানসার, জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার নারীদের মাঝে বেশি দেখা যায়। কারণ এগুলো নারীর প্রজনন অঙ্গের সাথে সম্পর্কিত। আবার পুরুষদের জন্য রয়েছে প্রস্টেট ক্যানসার। হরমোনের ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের পার্থক্য ক্যানসারের গঠন এবং লক্ষণে প্রভাব ফেলে।

এ ছাড়া ধূমপান, খাদ্যাভ্যাস, কাজের পরিবেশ এবং জীবনযাপন নারীদের মাঝে ক্যানসারের ঝুঁকি ও উপসর্গে ভিন্নতা আনতে পারে।

চলুন জেনে নিই নারীদের মাঝে দেখা ক্যানসারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা-
নারীদের মধ্যে সাধারণ ক্যান্সারের ধরন

নারীদের মাঝে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় স্তন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, কোলোরেক্টাল (মলদ্বার ও বৃহদান্ত্র) ক্যান্সার, জরায়ু মুখ (সার্ভিকাল) ক্যান্সার, এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার (জরায়ুর ভেতরের স্তর), ওভারিয়ান (ডিম্বাশয়) ক্যান্সার, ত্বকের ক্যান্সার।
এগুলো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে প্রভাবিত করে। তাই প্রতিটি ছোট পরিবর্তনেও মনোযোগ দেওয়া জরুরি।

🔴 হঠাৎ ও অকারণে ওজন হ্রাস
যদি ডায়েট বা ব্যায়াম না করেও দ্রুত ওজন কমে যায় (শরীরের ৫% বা তার বেশি), তবে এটি ডিম্বাশয়, প্যানক্রিয়াস বা হজম-সংক্রান্ত ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে। ক্যানসার কোষ প্রচুর শক্তি ব্যবহার করে বা বিপাকীয় (মেটাবলিক) গোলযোগ সৃষ্টি করে।

🔴 দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরেও যদি বেশি রকমের দুর্বলতা অনুভব করেন, তবে তা কোলন ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। দেহের শক্তি ক্যানসার প্রতিরোধে ব্যবহার হওয়ায় বা রক্তাল্পতা থাকলে এমন হয়।

multiplesclerosisnewstoday

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরেও দুর্বলতা অনুভব করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, ছবি ; মাল্টিপল স্কেলেরোসিস নিউজ।

🔴 স্তনে পরিবর্তন
স্তনে চাকা, নিপল থেকে দুধ ছাড়া অন্য রকম তরল নিঃসরণ, ত্বকে অস্বাভাবিক টান বা লালচে ভাব, এই উপসর্গগুলো স্তন ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে। নিয়মিত সেলফ এক্সাম ও ম্যামোগ্রাম অত্যন্ত জরুরি। স্তনে যেকোনো পরিবর্তন যেমন- গাঁট, ফোলা, ত্বক ডিম্পল হয়ে যাওয়া বা স্তনবৃন্তে পরিবর্তন হলে দেরি না করে পরীক্ষা করান।

🔴 লম্বা সময় ধরে মাথাব্যথা
যদি আপনি সাধারণত মাইগ্রেন না ভোগেন কিন্তু হঠাৎ করে নিয়মিত ও তীব্র মাথাব্যথা শুরু হয়, তাহলে সেটা মস্তিষ্কের ক্যান্সারের একটি সম্ভাব্য লক্ষণ হতে পারে।

🔴 অনিয়মিত বা অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ
মাসিকের বাইরে রক্তপাত বা অতিরিক্ত মাসিক হতে পারে জরায়ু বা সার্ভিক্স ক্যানসারের লক্ষণ। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

🔴 পেটে বা পেলভিকে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা
যদি দীর্ঘদিন ধরে তলপেটে ব্যথা থাকে। সঙ্গে পেট ফাঁপা অনুভব হয়। তবে তা ডিম্বাশয় বা জরায়ু ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে।
মেনোপজের পর রক্তপাত, অত্যন্ত ভারী পিরিয়ড, অথবা তলপেটে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এগুলো ওভারিয়ান ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

ukposters

দীর্ঘদিন ধরে পেটব্যথা বা অজীর্ণতা ডিম্বাশয়, যকৃত বা পাকস্থলী ক্যান্সারের পূর্বাভাস হতে পারে, ছবি ; ইউকেপোস্টার ডট কম।

🔴পেটে ব্যথা বা বমি বমি ভাব
দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা পেটব্যথা বা অজীর্ণতা ডিম্বাশয়, যকৃত বা পাকস্থলীর ক্যান্সারের পূর্বাভাস হতে পারে।

🔴 ত্বকে পরিবর্তন
নতুন আঁচিল, আঁচিলের রঙ বা আকৃতির পরিবর্তন, রক্তপাত বা দীর্ঘদিনে না শুকানো ক্ষত সবই ত্বকের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। রোদে বেশি যাওয়া বা ট্যানিং বেড ব্যবহারের কারণে ঝুঁকি বাড়ে।

🔴 দীর্ঘস্থায়ী বদহজম বা গিলতে কষ্ট
অনেক দিন ধরে গলায় ব্যথা বা গিলতে কষ্ট হলে তা খাদ্যনালী বা থাইরয়েড ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। নিয়মিত গ্যাস, বুকজ্বালা পাকস্থলি বা অন্ননালী ক্যানসারের লক্ষণ। এমন বারবার হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

🔴 প্রস্রাবে রক্ত বা ঘনঘন প্রস্রাব
যদি প্রস্রাবের পরিমাণ বা ফ্রিকোয়েন্সি হঠাৎ বদলে যায় বা রক্ত দেখা যায়, তবে তা কিডনি বা মূত্রাশয়ের ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে।

🔴 রক্তযুক্ত মল বা যোনি স্রাব
রক্তযুক্ত মল কোলন ক্যান্সারের ইঙ্গিত হতে পারে। একইভাবে, অস্বাভাবিক রঙ বা গন্ধযুক্ত যোনি স্রাব জরায়ু বা যোনি ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

medicalnewstoday

তিন সপ্তাহের বেশি কাশি, গলাব্যথা হলে চিকিতসকের পরামর্শ নিন, ছবি ; মেডিকেল নিউজটুডে।

🔴 দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলার স্বর বসে যাওয়া
তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি হলে। গলা বসে যাওয়া এবং তা রক্ত বা ওজন কমার সাথে যুক্ত হলে, তা ফুসফুস বা গলার ক্যানসার হতে পারে। ধূমপায়ীরা এসব ক্ষেত্রে বিশেষ ঝুঁকিতে থাকেন।

সচেতনতা জরুরি
ক্যানসার যত দ্রুত ধরা পড়ে, তত বেশি সম্ভাবনা থাকে সফলভাবে চিকিৎসার। তাই নারীদের উচিত শরীরের যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।

ক্যান্সার নামটাই যেন ভয় ধরিয়ে দেয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ক্যান্সার ধরা পড়লে জীবন শেষ হয়ে যায় না, যদি সেটা সময়মতো ধরা পড়ে। অনেক ক্ষেত্রেই ক্যান্সার জিন, বয়স বা শরীরের স্বাভাবিক পরিবর্তনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কিন্তু আমরা যদি ক্যান্সারের লক্ষণগুলো আগে থেকেই চিনে নিতে পারি, তাহলে প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসা শুরু করে এই রোগ থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব।

নজর দিন
যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ যদি ২ সপ্তাহের বেশি সময় স্থায়ী হয়। তবে দেরি না করে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কারণ যত তাড়াতাড়ি রোগ ধরা পড়ে, তত বেশি সফল হয় চিকিৎসা।

পেট ফুলে থাকা, অস্বস্তি, দ্রুত পেট ভরে যাওয়া বা মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন — এসব লক্ষণ অনেক সময় সাধারণ সমস্যা মনে হলেও, এগুলো ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের পূর্বাভাস হতে পারে। অনেক নারী এসব লক্ষণকে অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া ভেবে নিজেরাই ওষুধ খেয়ে থাকেন। ফলে সঠিক রোগ নির্ণয়ে দেরি হয়। তাই এসব উপসর্গ অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

সূত্র: আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ক্যান্সার সচেতনতা নির্দেশিকা ২০২৫

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ