পিতৃত্ব শুধুই একটি সম্পর্ক নয়, এটি দায়িত্ব, আত্মত্যাগ ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক অনন্য প্রতীক। বিশ্ব চলচ্চিত্রে বাবা সন্তানের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে হৃদয়স্পর্শী সিনেমা, যা দর্শকের মনে গেঁথে থাকে বহুদিন। কখনো এই সম্পর্ক এসেছে বন্ধুর মতো, কখনো বা এক কঠিন রূপে। নিচে তুলে ধরা হলো বাবা-সন্তানের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে নির্মিত এমন ১০টি অনবদ্য সিনেমা—
দ্যা পারস্যুট অব হ্যাপিনেস (২০০৬)
উইল স্মিথ অভিনীত এই সিনেমা একজন একাকী বাবার সংগ্রামের অনন্য দলিল। নিজের ছেলেকে নিয়ে গৃহহীন অবস্থায় জীবনের নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে পাড়ি দেওয়া একজন বাবার আশা ও সাহসের গল্প এটি। বাস্তব জীবনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত এ ছবি নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণাদায়ক। মজার বিষয় হলো এই ছবিতে ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেন উইল স্মিথের নিজের সন্তান জ্যাডেন স্মিথ।
লাইফ ইজ বিউটিফুল (১৯৯৭)
ইতালিয়ান এই মাস্টারপিসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যে এক পিতা কীভাবে তার ছেলেকে মানসিকভাবে রক্ষা করেন, তার অসাধারণ চিত্রণ দেখা যায়। বাবা চরিত্রটি যেন ছায়ার মতো ছেলেকে আগলে রাখে।

দ্যা পারস্যুট অব হ্যাপিনেস সিনেমায় উইল স্মিথ ও জাডেন স্মিথ, ছবি: প্লাগড ইন
ইন্টারস্টেলার (২০১৪)
সাই-ফাই ঘরানার হলেও এই সিনেমার আবেগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বাবা-মেয়ের সম্পর্ক। মহাকাশ অভিযানে অংশ নেওয়া এক বাবার নিজের মেয়ের জন্য ফিরে আসার তীব্র আকুতি সিনেমাটিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
ফাইন্ডিং নিমো (২০০৩)
অ্যানিমেটেড সিনেমা হলেও এক পিতার ভালোবাসা ও সাহসিকতার এক অসাধারণ উপস্থাপন এটি। হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে খুঁজতে এক মাছের সমুদ্রজুড়ে যাত্রা—এমন গল্প শিশু ও বড়দের মনে সমানভাবে নাড়া দেয়।
দ্যা লায়ন কিং (১৯৯৪)
ডিজনির এই ক্লাসিক সিনেমায় বাবা মুফাসা ও ছেলে সিমবার সম্পর্ক একদিকে নেতৃত্ব, দায়িত্ব ও আত্মত্যাগের গল্প বলে, অন্যদিকে সম্পর্কের গভীরতা ও প্রেরণাও জাগায়।

ডিজনির জনপ্রিয় অ্যানিমেশন সিনেমা ‘দ্যা লায়ন কিং’, ছবি: বিউমন্ট ইভেন্টস
আই অ্যাম স্যাম (২০০১)
একজন মানসিক প্রতিবন্ধী বাবার তার মেয়েকে কাছে রাখার জন্য লড়াই এই সিনেমার মূল বিষয়। সমাজ, আদালত ও বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে বাবার নিঃশর্ত ভালোবাসা যেন প্রশ্ন তোলে—বাবা হবার জন্য বুদ্ধি দরকার, না ভালোবাসা?
বিগ ফিস (২০০৩)
এক পিতার রূপকথাময় জীবনগল্পের খোঁজে বের হয় তার ছেলে। বাবা-ছেলের দূরত্ব, ভুল বোঝাবুঝি ও পুনর্মিলনের অসাধারণ একটি চিত্র উপস্থাপন করে এই সিনেমাটি।

‘আই অ্যাম স্যাম’ সিনেমার একটি দৃশ্য, ছবি: প্লাগড ইন
রোড টু পারডিশন (২০০২)
মাফিয়া জগৎকে পেছনে ফেলে একজন বাবা তার ছেলেকে নিরাপদে রাখতে চায়। অপরাধ আর ভালোবাসার এই দ্বন্দ্বময় সিনেমা এক গভীর সম্পর্কের গল্প বলে।
লাইক ফাদার, লাইক সান (২০১৩)
জাপানি এই চলচ্চিত্রে দেখা যায় দুটি পরিবার ভুলবশত সন্তান বদলে ফেলার পর তাদের মানসিক দ্বন্দ্ব ও সম্পর্কের বাস্তবতা। এই সিনেমা প্রশ্ন তোলে—রক্তের সম্পর্ক বড়, না লালন-পালনের?
মিরাকেল ইন সেল নাম্বার সেভেন (দক্ষিণ কোরিয়া ২০১৩, তুরস্ক ২০১৯)
একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বাবা ও তার ছোট্ট মেয়ের সম্পর্কের উপস্থাপন এতটাই আবেগপূর্ণ যে এটি প্রথমে দক্ষিণ কোরিয়ায় নির্মিত এবং পরবর্তীতে তুরস্কে রিমেক হওয়া অন্যতম সফল সিনেমা। বাবার ভালোবাসা, বঞ্চনা আর মমতার এক অসাধারণ চিত্র এ সিনেমা।
এই সিনেমাগুলোর প্রতিটিই আমাদের মনে করিয়ে দেয়—পিতৃত্ব শুধুই একটি সামাজিক বন্ধন নয়, এটি এক মহৎ দায়িত্ব, এক জীবন্ত অনুভব। বাবারা হয়ত সবসময় অনুভূতি প্রকাশ করেন না, কিন্তু সন্তানের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা গভীর, নিঃশর্ত এবং চিরন্তন। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমরা সেই অনুভবকে আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারি।