Home বিশ্ব যেভাবে বন্ধু থেকে শত্রু হয়ে গেল ইরান ও ইসরায়েল

যেভাবে বন্ধু থেকে শত্রু হয়ে গেল ইরান ও ইসরায়েল

১৮ views

একটা সময় ছিল মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত রাজনীতির মধ্যেও ইরান ও ইসরায়েল ছিল পরস্পরের ঘনিষ্ঠ মিত্র। একসঙ্গে হাত মিলিয়েছে গোয়েন্দা সহযোগিতায়, উন্নয়নচুক্তিতে, এমনকি সামরিক সহায়তায়ও। কিন্তু সময় ঘুরে গেছে। পাল্টে গেছে সরকার, বদলেছে আদর্শ। আর সেই বন্ধুত্ব রূপ নিয়েছে চরম শত্রুতায়।

আজ দুই দেশ যেন একে অপরের অস্তিত্বকেই হুমকি মনে করে। এই উত্তেজনার পেছনে কী রয়েছে? কীভাবে ঘনিষ্ঠতা থেকে জন্ম নিলো চরম বৈরিতা? অতীতের পাতা উল্টালে মেলে অনেক অজানা গল্প বন্ধুত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা, আদর্শিক দ্বন্দ্ব ও আধিপত্যের লড়াইয়ের এক বিস্ময়কর ইতিহাস।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পর থেকেই ইরান ছিল মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি মুসলিম দেশের একটি যারা ইসরায়েলকে পরোক্ষভাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ১৯৫৩ সালে মোহাম্মদ রেজা পাহলভী শাহের ক্ষমতা পুনঃস্থাপনের পর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে ওঠে ইরান। ফলে ইসরায়েলের সঙ্গেও একধরনের ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে।

সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে, ইরান তেল রপ্তানি করত ইসরায়েলে। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও গোয়েন্দা সহযোগিতা ছিল। তেল পাইপলাইন পর্যন্ত নির্মাণ হয়েছিল পারস্পরিক চুক্তিতে।

সবকিছুর বদল আসে ১৯৭৯ সালে ইরানে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে। রাজতন্ত্র উৎখাত হয়ে গঠিত হয় ইসলামি প্রজাতন্ত্র। এই নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা ইসরায়েলকে ‘শয়তানের রাষ্ট্র’ আখ্যা দিয়ে তার বৈধতা প্রত্যাখ্যান করে।

ইরান ভেঙে দেয় ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক। তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলনের প্রতি জোরালো সমর্থন জানায় দেশটি। এরপর থেকে সম্পর্ক শুধু খারাপই হয়েছে।

শত্রুতার গভীরে ধর্মীয় ও ভূরাজনৈতিক মতাদর্শ
ইরানের শিয়া ইসলামি বিপ্লব এবং ইসরায়েলের জায়নবাদী রাষ্ট্রনীতি, এই দুই আদর্শের সংঘর্ষ শত্রুতার মূলে। ইরান মনে করে, ইসরায়েল মুসলিম ভূখণ্ড দখল করে রাষ্ট্র গঠন করেছে আর ইসরায়েল মনে করে, ইরান মধ্যপ্রাচ্যে হেজবুল্লাহসহ বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মাধ্যমে তার অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলছে।

কেন এত বৈরিতা
ইরানের পরমাণু প্রকল্প ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির চেষ্টা ইসরায়েলের জন্য বড় হুমকি। ইসরায়েল একাধিকবার ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে হামলার হুমকি দিয়েছে। একে একে নিহত হয়েছেন ইরানের বিজ্ঞানীরাও, যার পেছনে ইসরায়েলের হাত রয়েছে বলে তেহরানের অভিযোগ। এদিকে, ইরান মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বাড়াতে লেবাননে হেজবুল্লাহ, গাজায় হামাস ও ইসলামিক জিহাদকে সমর্থন দিয়ে আসছে। এতে দুই দেশের মধ্যে ছায়াযুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান সরাসরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবে না। বরং ‘প্রক্সি ফোর্স’ ব্যবহার করবে। তুর্কি বিশ্লেষক মুরাত আসলান বলছেন, ইরান জানে যুদ্ধে জড়ালে দেশের ভেতরে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সরকারবিরোধী শক্তিগুলো সক্রিয় হয়ে উঠবে।

ইসরায়েলের ভয় কোথায়
ইসরায়েল আয়তনে ছোট, জনসংখ্যায় কম। বিশাল ইরান যদি একদিন পরমাণু অস্ত্র তৈরি করে ফেলে, তবে ইসরায়েলের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে বলে মনে করে তেল আবিব।

চূড়ান্ত সংঘাত কি সময়ের অপেক্ষা
দুই দেশই এখনো সরাসরি যুদ্ধে যেতে চায় না। তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীল পরিবেশে একটিমাত্র ভুল সিদ্ধান্ত ভয়ংকর সংঘাত ডেকে আনতে পারে।

সূত্র : বিবিসি

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ