বায়ুদূষণের কারণে প্রতি সপ্তাহে ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি খরচ হচ্ছে ব্রিটেনে। এই খরচ হচ্ছে মূলত স্বাস্থ্যঝুঁকি, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) চিকিৎসা খরচ ও কর্মক্ষমতা হ্রাসের কারণে। চিকিৎসকরা বলছেন, দেশটির ৯৯ শতাংশ মানুষ এখন ‘বিষাক্ত বাতাসে’ শ্বাস নিচ্ছে।
দেশটির রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস (আরসিপি) জানিয়েছে, দূষিত বাতাসে প্রতি সপ্তাহে ৫০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটছে। কম মাত্রায় হলেও বায়ু দূষণ শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গের ক্ষতি করছে।
আরসিপি জানিয়েছে, বায়ু দূষণের কারণে মানুষের মৃত্যুর হার ও সুস্থ জীবনযাপনের সময় কমে যাচ্ছে। এর প্রভাব ব্যক্তি, সমাজ, অর্থনীতি এবং জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা খাত—সবখানেই পড়ছে। এই হুমকি আগের কোনো ধারণার চেয়ে আরও গুরুতর বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের বায়ু দূষণে সপ্তাহে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে, ছবি : দ্য বিসনেস গ্রীন
বায়ুদূষণ ভ্রূণের বিকাশ, ক্যানসার, হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণাগুলোর বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে এবং আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে ২৭ বিলিয়ন পাউন্ড। তবে ডিমেনশিয়ার মতো অন্যান্য প্রভাব যুক্ত করলে এ ক্ষতির পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে।
বায়ুদূষণে একজন মানুষের জীবন গড়ে ১ দশমিক ৮ বছর পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান মৃত্যু ও রোগের কারণ—যেমন ক্যানসার বা ধূমপানের মতোই ভয়ংকর। এই সংকট মোকাবিলায় সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেছে কলেজটি। তাদের আহ্বান, বায়ু দূষণকে এখনই জনস্বাস্থ্যের বড় ইস্যু হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।

ব্রিটেনে বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর প্রাণহানি হয় ৩০ হাজার , ছবি : লিডস ডট ইউকে
ইংল্যান্ডের চিফ মেডিকেল অফিসার প্রফেসর ক্রিস হুইটি জানান, বায়ুদূষণ হলো আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে বড় পরিবেশগত হুমকি, যা জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে প্রভাব ফেলছে। গত ৩০ বছরে যুক্তরাজ্য অনেক দূর এগিয়েছে, অনেক দূষক গ্যাসের পরিমাণ কমেছে, কিন্তু তারপরও এটি এখনো দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা এবং অকাল মৃত্যুর বড় কারণ।
আরসিপির প্রেসিডেন্ট ডা. মুমতাজ প্যাটেল বলেন, ‘বায়ু দূষণকে আর শুধু পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে দেখার সময় নেই, এটি এখন একটি জনস্বাস্থ্য সংকটে রূপ নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে—যার বেশির ভাগই প্রতিরোধযোগ্য। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও আমরা আর বহন করতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি অন্য কোনো কারণে ৩০ হাজার প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুকে মেনে না নিই, তাহলে পরিষ্কার বাতাসকেও আমাদের নিরাপদ পানি বা নিরাপদ খাবারের মতো গুরুত্ব দিতে হবে। এটি মানুষের মৌলিক অধিকার এবং আমাদের অর্থনীতির ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ।’
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান ও রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস