বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর প্রায় আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও সড়কে এখনও পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফিরেনি। প্রায় প্রতিদিনই যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে ঢাকাবাসীকে।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ও সার্জেন্টরা দায়িত্ব পালনে হিমশিম খাচ্ছেন। শাহবাগ, চাঁনখারপুল, আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড, নিউমার্কেট, সাইন্সল্যাব, বাংলামোটর, কাওরান বাজারসহ সর্বত্র ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্যসহ নিয়ম না মানার সংখ্যাই বেশি।
ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় বাস যেমন চলছে, তেমনি চালক ও সহকারি কেউ আইন মানছে না। অধিকাংশ গাড়ি বা চালকের বৈধ কাগজপত্র নেই। যত্রতত্র থামানো হচ্ছে বাস। ইচ্ছেমতো যাত্রী ওঠানামা করা হয়। বাসের রেষারেষিও চলছে আগের মতো। আর যাত্রী বা পথচারীরাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইন-কানুন মানার প্রয়োজন বোধ করে না।
অন্যদিকে রাজধানীর সবগুলো পয়েন্টেই ট্রাফিক সার্জেন্ট নতুন বদলি বা পদায়ন হয়েছে। পদায়ন ও বদলির কারণে দায়িত্ব পালনে হিমশিম খাচ্ছে তারা। এতে ভোগান্তি বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
রাজধানীতে ৬ বছর ধরে রিকশা চালান আকাশ মাহমুদ। কিন্তু কোন সড়কে রিকশা নিয়ে যাওয়া যাবে, আর কোন সড়কে যাওয়া যাবে না, এটি তার অজানা।
রিকশার পাশাপাশি বাইক, ব্যক্তিগত গাড়ি ও গণপরিবহন চালকরা যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করান। এতে প্রতিটি সিগন্যালেই তৈরি হচ্ছে জটলা।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক শাহবাগে দায়িত্বরত লালবাগ জোনের সার্জেন্ট মোহাইমিনলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, শাহবাগের এই প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি। তাই যেসব রিকশা আসছে সেগুলো ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তবে অনেকে নিষেধ অমান্য করে উল্টো নানান যুক্তি ও অজুহাত দিচ্ছেন।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সবার সহযোগিতা চেয়ে চাঁনখারপুলে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট শিবলী হাসান বলেন, রাজধানীতে নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। এই মোড়ে সব সময় জটল থাকতো। ব্যস্ততম সড়কের রাস্তাটি গুলিস্তান ও হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে যাত্রবাড়ীর দিকে যায়। গুলিস্তানে ফ্লাইওভার একমুখী ও চাপা হওয়ায় যানবাহনের গতি ধীর হয়ে যায়। এর কারণে জ্যামের সৃষ্টি হচ্ছে। তাই হানিফ ফ্লাইওভারে দীর্ঘ যানজট কমাতে সব গাড়ি চাঁনখারপুল মোড় দিয়ে ক্রস করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে জটলা ও জ্যাম কিছুটা কমেছে। পুলিশকে সবাই সহযগিতা না করলে সড়কে যানজট ও শৃঙ্খলা ফেরানো কষ্টসাধ্য।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ চলছে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি। ডিএমপ’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নাজমুল হাসান বলেন, শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছে ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ। এক মাস আগে অবস্থা কি ছিল, বর্তমান অবস্থা কি? সেটা মূল্যায়ন করবে সাধারণ মানুষ। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভালো হলে অবশ্যই সুফল পাবে নগরবাসী। পরিস্থিতি উন্নতির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
সড়কে শৃঙ্খলার বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সেনাবাহিনী যদি প্রশাসনের সাথে মিলে কার্যকর ভূমিকা নেয়, তাহলে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে চাঁদাবাজি ও পার্কিং বাণিজ্য নিমিষেই বন্ধ হয় যাবে। সেই সাথে সড়কে নতুন বাস নামানোর পাশাপাশি পুরোনোগুলো ডাম্পিং করার ব্যবস্থা করতে হবে। রিকশা চলাচল রাস্তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রকৃতপক্ষে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর, সংস্থা ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা আন্তরিক না হলে রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না, পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতিও হবে না। ফলে কর্তৃপক্ষকে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: সাংবাদিক