নিয়ম : ছাগল, ভেড়া, দুম্বা কেবল একজনের পক্ষ থেকে কোরবানি করা যাবে। এসব পশু দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মিলে অংশীদারি কোরবানি করলে কারও কোরবানিই হবে না। আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারবে। সাতের অধিক শরিক হলে কারও অংশীদারি কোরবানিই হবে না।
উক্ত নিয়ম ফতোয়ায়ে কাজিখান : ৩/৩৪৯, বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৭-২০৮ বলে মানতে হবে।। জাবের (রা.)-সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘আমরা হজের ইহরাম বেঁধে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে বেরুলাম। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের একটি গরু ও একটি উটে সাতজন শরিক হওয়ার নির্দেশ দিলেন।’ (মুসলিম : ১৩১৮/৩৫১, মুয়াত্তায়ে মালেক : ১/৩১৯)।
নিয়ম : সাতজনে মিলে অংশীদারি কোরবানি করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারও অংশ এক-সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। (যেমন- কারও আধাভাগ, কারও দেড়ভাগ)। এমন হলে কোনো শরিকের কোরবানি হবে না। তেমনিভাবে সম্পূর্ণ হালাল সম্পদ থেকে কোরবানি করতে হবে। হারাম টাকা দ্বারা কোরবানি সহিহ নয়। এ ক্ষেত্রে অন্য শরিকদের কোরবানিও আদায় হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৭)।
নিয়ম : সব অংশিদারের নিয়ত কোরবানির জন্য হতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; কিন্তু পৌঁছে তোমাদের অন্তরের তাকওয়া।’ (সুরা হজ : ৩৭)। তাই যদি কেউ আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশে কোরবানি না করে নিছক গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে, তাহলে তার কোরবানি হবে না। তাকে অংশিদার বানালে শরিকদের কারও কোরবানিই আদায় হবে না। সুতরাং খুব সতর্কতার সঙ্গে শরিক নির্বাচন করা চাই। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৮, ফতোয়ায়ে কাজিখান : ৩/৩৪৯)।
নিয়ম : যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কোরবানি দেওয়ার নিয়তে ক্রয় করে আর সে ধনী হয়, তাহলে তার জন্য এ পশুতে অন্যকে শরিক করা বৈধ। তবে এতে কাউকে শরিক না করে তার একা কোরবানি করাই শ্রেয়। শরিক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরিব হয়, যার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব নয়, তাহলে যেহেতু কোরবানির নিয়তে পশুটি ক্রয় করার মাধ্যমে লোকটি তার পুরোটাই আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছে, তাই তার জন্য এ পশুতে অন্যকে শরিক করা বৈধ নয়। যদি শরিক করে, তাহলে ওই টাকা সদকা করে দেওয়া জরুরি। আর কোরবানির পশুতে কাউকে শরিক করতে চাইলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিতে হবে। (ফতোয়ায়ে কাজিখান : ৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২১০)।
নিয়ম : জবাইয়ের আগে অংশীদারি কোরবানির কোনো শরিকের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কোরবানি করার অনুমতি দেয়, তাহলে তা বৈধ হবে। নইলে ওই শরিকের টাকা ফেরত দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে তার স্থলে অন্যকে শরিক করা যাবে। (আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৩২৬, ফতোয়ায়ে কাজিখান : ৩/৩৫১)।
নিয়ম : কোরবানির পশুতে আকিকা ও হজের কোরবানির নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের নিয়তকৃত ইবাদত আদায় হয়ে যাবে। এমন পশু হেরেম এলাকায় জবাই করতে হবে। অন্যথায় হজের কোরবানি আদায় হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৯, আল-ইনায়া : ৮/৪৩৫-৩৪৬)।
নিয়ম : যেসব পশু অংশীদারি কোরবানি করা জায়েজ, সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কোরবানি করা যায়। (ফতোয়ায়ে কাজিখান : ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৫)।
নিয়ম : কোরবানির পশু ক্রয় বা নির্দিষ্ট করার পর তা দ্বারা কোনোরূপ উপকৃত হওয়া মাকরুহ। (যেমন- হালচাষ করা, তার পিঠে আরোহণ করা, বোঝা বহন করানো, পশম কাটা ইত্যাদি)। যদি কেউ উপকৃত হয়, তাহলে পশম বা হালচাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দেবে। (মুসনাদে আহমদ : ২/১৪৬, ফতোয়ায়ে কাজিখান : ৩/৩৫৪)।
লেখক : খতিব ও গবেষক