কোরবানির জন্য পশু নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, এটি শরিয়াহর নির্দিষ্ট শর্ত ও গুণাবলির ওপর নির্ভর করে। কোরবানির জন্য ইসলামি শরিয়াহ ও হাদিসের আলোকে কোন পশু উত্তম এই বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
প্রধান বৈশিষ্ট
যে পশুটি কোরবানি করা হবে, তার ওপর কোরবানিদাতার পূর্ণ মালিকানা থাকতে হবে। বন্ধকি পশু, ধার করা পশু বা পথে পাওয়া পশু দ্বারা কোরবানি করা যাবে না। গৃহপালিত সব ধরনের পশু তথা- ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ এবং উট দিয়ে কোরবানি করা বৈধ। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু (যেমন- হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি) দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নয়। তেমনিভাবে হাঁস-মুরগি বা কোনো পাখি দিয়েও কোরবানি করা বৈধ নয়। (ফতোয়ায়ে কাজিখান : ৩/৩৪৮)
কোরবানির পশুর বয়স
গরু ও মহিষ দুবছর এবং উট পাঁচ বছর পূর্ণ হলে তা দিয়ে কোরবানি করা বৈধ। ছাগল, দুম্বা ও ভেড়া এক বছর পূর্ণ হতে হবে। দুম্বা ও ভেড়া যদি এক বছর পূর্ণ না হয়, বরং বছরের বেশি অংশ অতিবাহিত হয় এবং দেখতে স্বাস্থ্যগতভাবে এক বছরের বাচ্চার মতো মনে হয়, তাহলে সেরূপ দুম্বা ও ভেড়া দিয়েও কোরবানি করা বৈধ।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) কোরবানি ও হজ-ওমরার পশুর ক্ষেত্রে উটের মাঝে পাঁচ বছর বয়স অতিক্রমকারী, গরু-মহিষের ক্ষেত্রে দু’বছর অতিক্রমকারী এবং বকরি ও ভেড়ার ক্ষেত্রে এক বছর অতিক্রমকারী পশুর কথা বলতেন। (মুয়াত্তায়ে মালেক : ৭৫৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা মুসিন্নাহ ছাড়া জবাই করো না। (মুসিন্নাহ হলো- ৫ বছর বয়সী উট, ২ বছরের গরু ও ছাগলের ক্ষেত্রে ১ বছর)। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে ছয় মাস বয়সী ভেড়া বা দুম্বা।’ (মুসলিম : ১৯৬৩)।
উত্তম কোরবানি
কোরবানির পশু মোটাতাজা ও নিখুঁত হওয়া উত্তম। (মুসনাদে আহমদ : ৬/১৩৬)। আবুল আশাদ্দ সুলামি তার বাবার সূত্রে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সাত ব্যক্তির সপ্তমজন ছিলাম। এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের প্রত্যেককে এক রৌপ্যমুদ্রা করে জমা করতে বললেন। আমরা জমাকৃত সাত রৌপ্যমুদ্রা দিয়ে একটি কোরবানির পশু কিনে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমরা এটি বহু দামে কিনেছি।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘উত্তম কোরবানি তা, যা অধিক মূল্যবান ও মোটাতাজা হয়ে থাকে।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৫৫৩৩)।
খাসিকৃত পশু দিয়ে কোরবানি করা উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোরবানি করার ইচ্ছা করতেন, তখন দুটি বড় মোটাতাজা শিং ও সুন্দর রঙবিশিষ্ট মেষ কিনতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩১১৩)। আবু রাফে (রহ.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) দুটি মোটাতাজা খাসিকৃত ভেড়ার কোরবানি করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ২৬৬৪৯)।
গর্ভবতী পশুর কোরবানি
গর্ভবতী পশু কোরবানি করা বৈধ। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কোরবানি করা মাকরুহ। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায়, তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে। কেউ চাইলে এর গোশতও খেতে পারবে। (ফতোয়ায়ে কাজিখান : ৩/৩৫০)।
কোরবানির পশু ক্রয় করার পর জবাইয়ের আগে বাচ্চা প্রসব করলে ওই বাচ্চার গোশত খাওয়া যাবে না। পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। তবে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। (ফতোয়ায়ে কাজিখান : ৩/৩৪৯, ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ৫/৩০১)।
লেখক : খতিব ও গবেষক