Home লাইফস্টাইল ‘জেন-জি’দের আকর্ষণে বিপণনের ৭ কৌশল

‘জেন-জি’দের আকর্ষণে বিপণনের ৭ কৌশল

সুপ্রভা জুঁই 
২৬১ views

জেনারেশন জি বা ‘জেন-জি’র জন্য নিত্যনতুন বিপণন পদ্ধতি আজকের যুগে ব্যবসা ও ব্র্যান্ডগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এ প্রজন্মের ব্যবহারকারীরা প্রযুক্তি-সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আরও সচেতন ও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে। ফলে ‘জেন–জি’র জন্য সফল বিপণন কৌশল তৈরি করতে হলে তাদের চাহিদা, আগ্রহ ও আচরণের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে হবে।

চলুন জানা যাক কিভাবে ৭টি কৌশলের মাধ্যমে নিজেদের ব্র্যান্ডের জন্য ‘জেন-জি’দের আকৃষ্ট করতে পারি।

১. মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দেওয়া

জেন-জি যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে কোনো পণ্য দেখে কিনতে চায় তখন পণ্যের চেয়েও প্রস্তুতকারী কোম্পানির প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি থাকে। ৪৫% জেন-জি জানায়, একটি ব্র্যান্ড ‘বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছ’ মনে হলেই তারা সে পণ্য কিনতে আগ্রহী হয়।

তাই সোশ্যাল মার্কেটিং পলিসিতে শুধু পণ্য নয়, বরং প্রতিষ্ঠানের মূল্যবোধ স্পষ্ট করে জানানো জরুরি। পাশাপাশি ব্র্যান্ডের গল্প যতটা সম্ভব শেয়ার করাও দরকার। যেমন- একটি পোশাক কোম্পানির টার্গেট মার্কেট যদি জেন-জি হয়, তাহলে তাদের পোশাকের উপাদান, উৎপাদন স্থল এবং কাজের পরিবেশ সম্পর্কে জানান দিতে হবে।

২. তাদের ভাষায় সংযোগ করা

মার্কেটিং ও কমিউনিকেশন, তথা সহজ বাংলায় বিপণন ও সংযোগ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। যেকোনো জেনারেশনের মত জেন-জি সদস্যদেরও নিজস্ব কিছু শব্দ রয়েছে। সেগুলো ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন করা অপরিহার্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেন-জি, যারা ইনফ্লুয়েন্সার বা কমিউনিটিতে প্রভাব বিস্তার করে বা যারা কন্টেন্ট বানাচ্ছেন নিয়মিত, তাদের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

তাদের কন্টেন্ট দেখে তাদের শব্দভাণ্ডার ও রসিকতার ধরন বুঝে নিতে হবে। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ ও পরিবর্তনশীল। তাই কন্টেন্ট যেন ভাষাগতভাবে জেন-জি সদস্যদের বন্ধুসুলভ হয়, সেজন্য তাদেরকে ব্র্যান্ডের সোশ্যাল মিডিয়া টিমে যুক্ত করা যেতে পারে।

৩. কোনো দল বা মতের অনুসারী না হওয়া

মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সাথে এই বিষয়টি সম্পর্কিত। পরিসংখ্যান বলছে, সমাজের মানুষের প্রতি ‘ভুয়া’ দরদ দেখিয়ে বাস্তবে ফাঁকি দিলে জেন জিকে আকৃষ্ট করা যায় না। প্রযুক্তির জন্য এমন বানোয়াট খবর ধরতে এখন একদম সময় লাগে না। এতে রাতারাতি ব্র্যান্ড ভয়ানক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জেন-জি জানিয়েছে, তারা প্রতি সপ্তাহে অনেক ব্র্যান্ডের পেজ আনফলো, হাইড, এমনকি ব্লকও করে। কারণ হিসেবে রিপোর্টে উল্লেখ আছে, ‘জেন-জি ভেবে নেয় যে হোমপেজে জালিয়াতি কিছু দেখলে তারা ব্র্যান্ডগুলোকে বাতিল করতে দ্বিধা করে না।’ অর্থ প্রদান করা, সুবিধাবঞ্চিতদের পক্ষে দাঁড়ানো, স্বেচ্ছাসেবী কাজ করা এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদির মাধ্যমে কেবল জেন-জি নয়, সবারই মন জয় করা সম্ভব।

unnamed 20

মূল্যছাড় নজর কেড়ে নিতে পারে জেন জিদের

৪. কন্টেন্ট নির্মাতাদের ও ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে কাজ করা

জেন-জি মার্কেটিংয়ের একটি কার্যকর কৌশল হলো তাদের যাদের প্রতি বিশ্বাস রয়েছে, তাদের সাথে কাজ করা। ১৫-২১ বছর বয়সী ব্যক্তিরা সাধারণত তাদের চেয়ে বয়সে বড় ভাই–বন্ধুদের চেয়ে ইনফ্লুয়েন্সারদের অনেক বেশি অনুসরণ করেন। এছাড়া ২৪% জেন-জি নারী বলেন, নতুন পণ্য কেনার বিষয়ে জানতে তারা ইনফ্লুয়েন্সারদেরকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দেখে থাকেন।

ফলে তাদের সাথে কাজ করলে ব্র্যান্ডের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তাদের ভাষায় কাছে পৌঁছানো যায়। জেন-জি এমন ব্র্যান্ড থেকে কেনাকাটা করতে চায় যাদের ওপর ভরসা রাখা যায়। ব্র্যান্ড সম্পর্কে তারা জানতে চান তাদের প্রিয় ইনফ্লুয়েন্সারদের কাছ থেকে, যে কারও কাছ থেকে নয়।

৫. হাস্যরসে কাছে টানা

মর্নিং কনসাল্ট থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেশিরভাগ জেন-জি ইনফ্লুয়েন্সারদের অনুসরণ করে। কেননা তারা বিনোদনমূলকভাবে তথ্য সাজিয়ে কন্টেন্ট তৈরি করে। একই সাথে তারা ঘরোয়া পরিবেশে আকর্ষণীয় কন্টেন্ট বানিয়ে থাকে যা বাস্তবতার কাছাকাছি।

জেন-জি সদস্যদের হাস্যরসের অনুভূতি তীক্ষ্ণ, স্মার্ট ও ডার্ক। রসিকতা গ্রহণ করতে পারার দক্ষতা এই প্রজন্মের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে কমিডির মাঝে ’রোস্টিং’ এত জনপ্রিয়। তাই এই প্রজন্মের কাছে বিনোদন ও একঘেয়েমিতা কী— এ সম্পর্কেও হালনাগাদ থাকা দরকার।

৬. সঠিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা

উপরের কৌশলগুলো শুধুমাত্র তখনই কার্যকর হবে যখন ‘জেন-জি’রা সত্যিই কাঙ্খিত কন্টেন্টগুলো বেশিমাত্রায় দেখা শুরু করবে বা সুযোগ পাবে। এ জন্য নিশ্চিত করতে হবে তাদের পছন্দসই প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা। কারা কোন সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ব্যবহার করছে সেসব জানার জন্য ইন্টারনেটে অনেক উন্মুক্ত সুবিধা আছে।

২০২১ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী, সোশ্যাল প্লাটফর্ম ‘টিকটক’ জেন-জি নারীদের কেনাকাটার সিদ্ধান্তের জন্য তৃতীয় সর্বাধিক প্রভাবশালী বিজ্ঞাপন চ্যানেল। ইনস্টাগ্রাম বিজ্ঞাপন ও ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সারের পোস্টগুলো সবচেয়ে বেশি দর্শকপ্রিয়তা পাচ্ছে।

৭. মূল্যছাড় দিয়ে আকর্ষণ করা

মূল্যছাড় অবশ্য যেকোনো প্রজন্মের জন্যই আকর্ষণীয়। তবে জেন-জিরা বিশেষভাবে মূল্যছাড়ের এই অফারগুলোর প্রতি আগ্রহী। তাদের বেশিরভাগের হাতে তেমন টাকা থাকে না। যে কারণে মিনিমালিস্ট ফ্যাশন, অলংকার ও নতুন ব্র্যান্ডের প্রতি তাদের বেশ আগ্রহ রয়েছে। তাই যদি অন্য কিছু কাজ না করে, তবে মূল্যছাড়ই পারবে সবার নজর কাড়তে।

সার্বিকভাবে, জেন-জির কাছে পৌঁছাতে হলে বিপণন পদ্ধতিতে উদ্ভাবনী পরিবর্তন আনা খুবই জরুরি, যা কেবল ব্যবসার বিকাশে সহায়ক হবে। পাশাপাশি সমাজের মানুষের প্রতি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই নতুন ধারার বিপণন কৌশল সফল হলে তা বাজারে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গাও করে নেবে।

তথ্যসূত্র: হুটসুইট

 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ