Home প্রবাস ১৭ বছরেই সাইবার হিরো মালয়েশিয়া প্রবাসী শোভন

১৭ বছরেই সাইবার হিরো মালয়েশিয়া প্রবাসী শোভন

৪৯ views

বাড়ি শেরপুরের ঝিনাইগাতী। বয়স ১৭ বছর। নাম মোঃ শাহরিয়ার শানাজ শোভন। তবে তার বেশি পরিচিতি “shuvonsec” নামে। এরই মধ্যে নাসা, সনি, মেটা, অ্যামাজন ও গুগলের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমে গুরুত্বপূর্ণ সাইবার ত্রুটি সনাক্ত করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। বর্তমানে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সাইবারজায়ায় তথ্যপ্রযুক্তিতে ডিপ্লোমা করছেন তিনি।

নৈতিক হ্যাকার হিসেবে শোভন নিজের জ্ঞান অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে গিটহাব ও ওয়েবসাইটে বিনামূল্যে চেকলিস্ট ও গাইড প্রকাশ করছেন। তার প্রেরণামূলক উক্তি “আমি হ্যাক শিখি না, আমি শিখতে হ্যাক করি” তরুণ সাইবার বিশেষজ্ঞদের অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।

১৭ বছর বয়সী এই কিশোর হ্যাকার নাসার সিস্টেমে ত্রুটি বের করার পর মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা তাকে স্বীকৃতি দেয়। ইউনিভার্সিটি অব সাইবারজায়ার ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

shovon ceremony

ওয়ার্ল্ড টেলিকমিউনিকেশন ডে অনুষ্ঠানে অন্যদের সঙ্গে মালয়েশিয়া প্রবাসী শোভন, ছবি : প্রতিনিধি

সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আবেগের কথা জানিয়ে শোভন বলেন, ‘আমি হ্যাকিং শেখার জন্য শিখি না, আমি শেখানোর জন্য হ্যাক করি।’ অনলাইনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি (হ্যাকিং) শেখা শুরু করার জন্য সঠিক সময় বা কোর্সের অপেক্ষা করি না। আমি সিস্টেম ভাঙি, অনুসন্ধান করি এবং এভাবেই আমি আসলে শিখি।’

বাংলাদেশের এই ইথিক্যাল হ্যাকার সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) থেকে একটি আনুষ্ঠানিক প্রশংসাপত্র পাওয়ার পর আলোচনায় এসেছেন। তার অর্জন ছিল—নাসার সিস্টেমে একটি গুরুতর নিরাপত্তা ত্রুটি খুঁজে বের করা এবং দায়িত্বশীলদের তা জানানো।

শোভন ২০২৪ সালের ১১ জুন নাসার সিস্টেমে ‘ইনসিকিউর ডাইরেক্ট অবজেক্ট রেফারেন্স’ (আইডিওআর) এবং ‘সার্ভার-সাইড রিকোয়েস্ট ফরজারি’ (এসএসআরএফ) নামক দুটি হ্যাকিং কৌশল একত্র করে একটি গুরুতর গোপনীয়তা-সম্পর্কিত ক্রুটি উন্মোচন করেন। তিনি বলেন, ‘এগুলো একসঙ্গে ব্যবহার করে আমি সংবেদনশীল ডেটা অ্যাকসেস করি, যেখানে বিপুল পরিমাণে ব্যক্তিগত তথ্য ছিল। যদি এর অপব্যবহার করা হতো, তাহলে ফিশিং আক্রমণ বা ডেটা ফাঁসের ঘটনা ঘটতে পারত।’

shovon nasa


মালয়েশিয়া প্রবাসী শোভনকে নিয়ে প্রকাশিত ইতিবাচক একটি পোস্টার, ছবি : প্রতিনিধি

শোভন দুর্বলতাটি কাজে না লাগিয়ে নাসার আনুষ্ঠানিক ‘ভালনারেবিলিটি ডিসক্লোজার পলিসির’ মাধ্যমে সংস্থাটিকে জানিয়ে দেন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাসা প্রযুক্তিগত দক্ষতার স্বীকৃতি দিয়ে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠায় শোভনকে।

শোভন দ্য পেনিনসুলাকে বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমি অবাক হয়েছিলাম। আমি কখনো আশা করিনি, নাসা আমার মতো কাউকে খেয়াল করবে। আমি কেবলই আমার পছন্দের কাজটি করছিলাম—বাগ খুঁজে বের করছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ত্রুটি খুঁজে পাওয়ার ‘সেই মুহূর্তটা আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে, ছোট একটি জায়গা থেকেও বৈশ্বিক প্রভাব ফেলা সম্ভব।’

শোভনের সাইবার সিকিউরিটির পথে যাত্রা শুরু হয় কৈশোরে। ইউটিউব টিউটোরিয়াল, বিনামূল্যের অনলাইন কোর্স এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা অধ্যয়ন তাকে এই পথে নিয়ে আসে। তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়াকে প্রযুক্তি এবং সাইবার সিকিউরিটিতে দ্রুত বিকাশমান একটি কেন্দ্র বলে মনে হয়। এটি বাড়িরও কাছে এবং এখানকার মানুষও খুব আন্তরিক।’

ইথিক্যাল হ্যাকিংকে প্রায়শ ভুলভাবে বোঝানো হয়। এটি কম্পিউটার সিস্টেমে নিরাপত্তা ত্রুটিগুলো উন্মোচন করার একটি আইনি এবং দায়িত্বশীল উপায়। শোভন দ্য পেনিনসুলাকে জানান, ইথিক্যাল হ্যাকিং হলো কোম্পানিগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে হ্যাকারদের দক্ষতা ব্যবহার করা। আমি আমার কিশোর বয়স থেকেই এটা করছি। খারাপ লোকেরা খুঁজে বের করার আগেই আমি দুর্বলতাগুলো সনাক্ত করি।’

shovon day

ওয়ার্ল্ড টেলিকমিউনিকেশন ডে অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়া প্রবাসী শোভন, ছবি : প্রতিনিধি

শোভনের অর্জন নাসাতেই থেমে থাকেনি। তিনি সনি এবং মেটার মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোতেও নিরাপত্তা ত্রুটি খুঁজে পেয়েছেন। সনিতে তিনি এমন একটি বাগ আবিষ্কার করেন, যা ব্যক্তিগত ডেটায় প্রবেশাধিকার দিত। মেটায় তিনি একটি গোপনীয়তা সমস্যা উন্মোচন করেন, যা কোড ট্রিকসের মাধ্যমে লুকানো প্রতিক্রিয়াগুলো দৃশ্যমান করে দিত। এই আবিষ্কারগুলো তাকে বৈশ্বিক সাইবার সিকিউরিটি সম্প্রদায়ের প্রশংসা এনে দিয়েছে।

তিনি ২ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী নিয়ে গঠিত সাইবার সিকিউরিটি প্রশিক্ষণ প্ল্যাটফর্ম ট্রাইহ্যাকমিতে বিশ্বব্যাপী শীর্ষস্থানও অর্জন করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মূলত দুই ধরনের বাগে মনোযোগ দিই—আইডিওআর এবং ইনফরমেশন ডিসক্লোজার। এগুলো আমার বিশেষত্ব।’ তিনি আরও বলেন, বার্প স্যুট, নিউক্লাই এবং হ্যাকারওয়ান ও বাগক্রাউডের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো তার নিয়মিত টুলকিটের অংশ।’

বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেলেও শোভন তার শেকড় ভোলেননি। তিনি বাংলাদেশে সাইবার সিকিউরিটি সচেতনতা বাড়াতে চান। তার মতে, বাংলাদেশ এখনো ডিজিটাল হুমকির জন্য অপ্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বেশির ভাগ সংস্থা নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখে না। কোনো সঠিক বাগ রিপোর্টিং সিস্টেম নেই। আমি এটা পরিবর্তন করতে সাহায্য করতে চাই।’

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ