শুরু হয়ে গেছে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গাপূজা। উৎসবের এই দিনগুলোতে চলে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরাঘুরি, ভরপুর আড্ডা, জম্পেশ খাওয়াদাওয়া। এমন উৎসবে সবাই চায় নিজেকে একটু সুন্দর ও পরিপাটি করে সাজাতে। তবে ঋতুর পরিক্রমায় এ সময়টা রোদ-বৃষ্টির সঙ্গে ভ্যাপসা গরমের গোলমেলে তাণ্ডবে অস্থির। তাই এই আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখেই সাজের দিকে নজর না দিলে মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে আনন্দ করা হয়ে যায় মাটি। আবার কোন সাজই উৎসব সম্পূর্ণ হয় না। এ সময় তাই ভরসা কয়েক বছর ধরে বিউটি ট্রেন্ডে রাজত্ব করা নো-মেকআপ লুক। ভ্যাপসা গরম আবহাওয়ার জন্য এ ধরনের মেকআপ খুবই উপযোগী। কারণ এমন মেকআপে সাজের পাশাপাশি থাকবে স্বস্তির নিঃশ্বাস। আসুন জেনে নেই, নো- মেকআপ করার ধাপগুলো।

পূজার সাজেও ট্রেন্ডি নো-মেকআপ লুক । ছবি: হরিতকী
ত্বকের প্রস্তুতি
সুন্দর নিখুঁত মেকআপ লুক পেতে চাইলে সবার আগে ত্বক ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। সবার আগে ক্লিনজার দিয়ে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর ময়েশ্চারাইজিং মাস্ক বা সিরাম ব্যবহার করতে পারেন। মাস্ক হিসেবে অ্যালোভেরা জেল বেশ ভালো। তবে এতে অ্যালার্জি থাকলে এটি এড়িয়ে যাওয়া ভালো। বাজারে এখন অনেক ধরনের শিট মাস্ক পাওয়া যায়, যা ত্বকের জন্য আর্দ্রতা বাড়ায়। সিরামের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় নায়াসিনামাইড বা হায়ালুরনিক এসিড। এগুলো ত্বক সমানভাবে উজ্জ্বল ও আর্দ্র করে। এরপর ব্যবহার করুন জেল ময়েশ্চারাইজার বা তেলমুক্ত হাইড্রেটিং ক্রিম। সানস্ক্রিনের কথা ভোলা যাবে না।

নো-মেকআপ লুকে স্নিগ্ধ পূজার সাজ। ছবি: পরমা
বেজ মেকআপ
শুরুটা হবে প্রাইমার দিয়ে। মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী করতে এটি ব্যবহার করতে হবে। এরপরই ফাউন্ডেশনের পালা। এক্ষেত্রে হালকা ফর্মুলার লিকুইড ফাউন্ডেশন বেছে নিতে হবে। এটি হতে হবে ত্বকের থেকে এক শেড উজ্জ্বল। এর বদলে চাইলে বিবি ক্রিম বা টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। যারা একদমই মেকআপ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না বা নো-মেকআপ মেকআপ লুক পছন্দ করেন তাঁদের জন্য এ ধরনের প্রোডাক্ট আদর্শ।
যদি ত্বকে অনেক বেশি দাগ-ছোপ থাকে তাহলে সেখানে কনসিলার ব্যবহার করুন। না থাকলে একেবারে এড়িয়ে যেতে পারেন।

নো-মেকআপে সাজের পাশাপাশি থাকবে স্বস্তির নিস্বাস । ছবি: পরমা
কন্টুর নাকি ব্লাশঅন
একটা সময় মেকআপে কন্টুরের বেশ ভালো চল ছিল। এখনও যে নেই ব্যাপারটা তা নয়। তবে বেশিরভাগ মেকআপের ক্ষেত্রে কন্টুরিং করার প্রবণতা কমে এসেছে। সময় এখন ব্লাশঅনের। মেকআপপ্রেমীদের পছন্দের মেকআপ আইটেম এটি। গালের দুই পাশে, নাকের হাড়ে, অথবা গালের উঁচু হাড়ে খুবই অল্প পরিমাণে ক্রিম বা লিকুইড ব্লাশ লাগাতে হবে। মভ, পিচ বা ডাস্টি পিংক ইত্যাদি শেড বেছে নেওয়া যায়। এভাবে ত্বকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফুটে উঠবে।
অবশ্য এখনের আবহাওয়া খুবই অনিশ্চিত। এই রোদ, এই বৃষ্টি। বৃষ্টির কথা চিন্তা করে ব্লাশঅনের বিকল্প হিসেবে লিকুইড টিন্ট বেছে নিতে পারেন। কারণ, এটি ত্বক শুষে নেয়। লিকুইড টিন্ট ত্বকের ওপর বসে থাকে না। তাই পানি সহজে এটা ধুয়ে ফেলতে পারে না।

চোখ ও ঠোটের সাজের পরিবর্তন এনে পূজার রাতের সাজ। ছবি: লা রিভ
হাইলাইটার
নো-মেকআপ মেকআপ লুকে অনেকে হাইলাইটার ব্যবহার করেন না। কিন্তু পূজা বলে কথা! একটু হাইলাইটার দেওয়া যেতেই পারে। চিকবোন বা গালের হাড় ও নাকের হাড়ে সামান্য পরিমাণ হাইলাইটার লাগাতে হবে।
চোখের সাজ
চোখের সাজটা পুরোপুরি নির্ভর করছে নিজের রুচি ও ব্যক্তিত্বের ওপর। জমকালো পোশাকের সাজে চোখের মেকআপটা একটু ভারি হলেই ভালো দেখায়। আবার মিনিমাল পোশাকে হালকা চোখের সাজ। বর্তমান সৌন্দর্য ধারায় নানা ধরনের চোখের মেকআপ আছে। যেমন, স্মোকি আই, নিউট্রাল আই, অ্যাঞ্জেল আই, কালারড আইলাইনার, মাস্কারা ইত্যাদি। এর মধ্যে স্মোকি আই সব পোশাক ও সব মেকআপের সঙ্গে ভালো মানিয়ে যাবে।
ফিউশনধর্মী লুকে বিভিন্ন রঙের আইলাইনার, মাস্কারা দিয়ে চোখ সাজাতে পারেন। পোশাকের রঙের সঙ্গে মিক্স বা ম্যাচ করে। চোখের আইশ্যাডোও এভাবে ব্যবহার করতে পারেন। তবে রাতের সাজে আইশ্যাডো একটু শিমারি বা গ্লিটারি হলে ভালো হয়।

সাজ যখন রুচির পরিচয়।ছবি: পরমা
ঠোঁটের সাজ
সবশেষে ঠোঁটের পালা। বিউটি ট্রেন্ডে ন্যুড শেডের লিপস্টিকের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। রোজকার মেকআপে সবার প্রথম পছন্দ এ ধরনের লিপস্টিক। তবে উৎসবের সময় পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে বা বৈপরিত্য এনে গাঢ় শেডের লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। যেমন, ক্ল্যাসিক লাল লিপস্টিক, নব্বই থেকে ট্রেন্ডে ফিরে আশা বাদামি লিপস্টিক, বেরি লিপস্টিক, পিংক লিপস্টিক ইত্যাদি।