ঋতু পরিবর্তনের সময়ে আবহাওয়ার ‘মুড সুইং’ খুব স্বাভাবিক ঘটনা। কখনো তীব্র গরম আবার কখনো ঝুম বৃষ্টি। আবহাওয়ার এই অবস্থায় আমাদের স্বাস্থ্যে বেশ বাজে প্রভাব পড়তে পারে। মূলত এ সময়ে জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথাসহ নানান রোগ দেখাদেয়।
মানবদেহ একটি জটিল এবং অভিযোজিত যন্ত্র, যা বিভিন্ন পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম। তারপরও আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় অনেকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট সর্দি, জ্বর, কাশি, গলাব্যথাতে আক্রান্ত হন। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম দূর্বল তাঁরা বেশি সংক্রমিত হন।

প্রতিরোধ
কথায় বলে, ‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম’। তাই রোগ হওয়ার আগে আমাদের প্রতিরোধ করার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। সাধারণত ইমিউন সিস্টেম দূর্বল থাকার কারণে মানুষ সবচেয়ে বেশি অসুখে ভুগে থাকে। ঋতু পরিবর্তনের সময় ভোগান্তির মাত্রা আরও বাড়ে। তাই সবার আগে আমাদের ইমিউন সিস্টেম বা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে।

ইমিউন সিস্টেম বাড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা। খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাবার। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, লেবুজাতীয় ফল, কলা, আপেল, পেঁপে, গাজর, দুধ, টক দই, ডিম, মরিচ, আদা, রসুন, হলুদ, ব্রকলি, পালং শাক, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, বীজ (বিশেষ করে কুমড়ো ও সূর্যমুখীর বীজ), সবুজ চা, তেলযুক্ত বড় মাছ, ছোট মাছ, চর্বিমুক্ত গরুর মাংস ও মুরগির মাংস। পাশাপাশি কমাতে হবে অতিরিক্ত লবণ ও চিনিযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার। ধূমপানের ধারে কাছেও যাওয়া যাবে না।
নিয়মিত শরীরচর্চা করলে রোগবালাই অন্তত একশো হাত দূরে থাকে। এজন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ মিনিট ব্যায়াম অথবা ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করতে হবে। তবে যত যাই কিছু করুন না কেন, ঘুম ঠিকমতো না হলে কিন্তু সবকিছুই বৃথা। তাই দিনে অন্তত ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
প্রতিকার
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষদের সর্দি, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা হলে চিকিৎসক না দেখিয়ে পাড়ার ফার্মেসি থেকে মুখস্ত ওষুধ কিনে সেবন করার বদঅভ্যাস বহুদিনের। ভালোভাবে দ্রুত সুস্থ হতে হলে এই অভ্যাস থেকে বের হতে হবে। সর্দি, কাশি, জ্বর হলে সবার আগে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তাঁরা পরীক্ষানিরীক্ষা করে বের করবেন রোগ ভাইরাস নাকি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের জন্য হয়েছে। মনে রাখতে হবে দুটির চিকিৎসা পদ্ধতি একদম আলাদা। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ সেবন করতে হবে।

ঋতু পরিবর্তনজনিত রোগে আক্রান্ত হলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। তাই এ সময়ে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তবে ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি নয়, কুসুম গরম পানি। পাশাপাশি ডাবের পানি, ফলের জুস, স্যালাইনও পান করতে হবে।
গলায় ব্যথা হলে একটা পাতলা স্কার্ফ দিয়ে পেঁচিয়ে রাখলে ব্যথা অনেকাংশে কমে আসে। ঘরের বাইরে বের হলে মাস্ক পরাটা জরুরি। না হলে সর্দি-কাশি তো সারবেই না, বরং আপনার থেকে অনেকেই সংক্রমিত হতে পারে।