এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণের জন্য জাহাজের আবেদন কমেছে সেই কবে! যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও দ্রুত যাতায়াতের জন্য অনেকেরই প্রথম পছন্দ বিমান। তবে বর্তমান সময়ে ভ্রমণপিপাসু মানুষদের অন্যতম আকর্ষনের বস্তু বিলাসবহুল ক্রুজ শিপ বা প্রমোদতরী। সমুদের নীল জলরাশি ও দিগন্ত বিস্তৃত আকাশের মিতালি উপভোগ করার সুযোগসহ নানাধরনের আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা রাখা আছে বিলাসবহুল ক্রুজগুলোতে। এসব আধুনিক প্রমোদতরীতে ভ্রমণের জন্য মুখিয়ে থাকেন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার পর্যটক।

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় লাক্সারিয়াস ক্রুজ শিপ হলো ‘আইকন অব দ্যা সিজ’। চলতি বছরের জানুয়ারির ২৮ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মায়ামি বন্দর থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ৩৬৫ মিটার দীর্ঘ অর্থাৎ প্রায় ১ হাজার ২০০ ফুট এই সুবিশাল প্রমোদতরির ওজনও বেশ দশাসই। প্রায় আড়াই লাখ টনেরও একটু বেশি। এটি কানাডার টরোন্টোতে অবস্থিত ৫৫৩ মিটার উচ্চতার সিএন টাওয়ারের প্রায় দ্বিগুণ। অন্যদিকে ইতিহাস বিখ্যাত বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় জাহাজ টাইটানিকের চেয়ে পাঁচ গুণ বড়।

‘আইকন অব দ্যা সিজ’ রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি মার্কিন ক্রুজ লাইন কোম্পানির মালিকানাধীন। তাদের মালিকানায় আছে বিশ্বের সব আইকনিক বিলাসবহুল জাহাজ। যেমন, ইউটোপিয়া অব দ্যা সিজ, ওয়ান্ডার অব দ্যা সিজ, সিম্ফনি অব দ্যা সিজ, হারমনি অব দ্যা সিজ ইত্যাদি। এই দানবাকৃতির ক্রুজ শিপটি ফিনল্যান্ডের তুর্কু শহরে অবস্থিত ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় শিপইয়ার্ড ‘মায়ার তুর্কু’তে নির্মাণ করা হয়েছে।
বিলাসিতার কোন কমতি নেই আইকন অব দ্যা সিজে। ২০ তলাবিশিষ্ট জাহাজটিতে যাত্রীদের জন্য রাখা আছে অভিনব সব বিনোদনের ব্যবস্থা। এতে রয়েছে সমুদ্রে ভাসমান বিশ্বের বৃহত্তম ‘ওয়াটার পার্ক’। এর নাম রাখা হয়েছে ‘ক্যাটাগরি সিক্স’। এই ওয়াটার পার্কে আছে রেকর্ডসংখ্যক ৬টি ওয়াটার স্লাইড। তবে যারা একান্তে বিলাসি অবসর সময় কাটাতে চান তাঁদের জন্য থাকছে ৭টি পুল এবং ৯টি ওয়ার্লপুলের সুব্যবস্থা। আরও আছে পানির কৃত্রিম ঝরনাধারা ও আন্ডারওয়াটার পার্ক।
জাহাজটি মোট আটটি আলাদা অংশে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগের বৈশিষ্ট্য আলাদা। কোনোটি তরুণ যুগলদের জন্য, আবার কোনোটি বৃদ্ধদের জন্য। শিশুদের জন্যও আছে আলাদা এলাকা, যেখানে কেবল শিশুদের জন্য নির্ধারিত সেবাই মিলবে। এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের জন্য রয়েছে গেমিং ওয়ার্ল্ড। এক কথায়, একজন যাত্রী যেমন ধরনেরই ছুটি কাটাতে চান না কেন, তার চাহিদা পূরণ করবে প্রমোদতরিটি। ভোজনরসিকদের জন্য রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেরা ৪০ ধরনের ডাইনিং মেন্যু পাওয়া যাবে জাহাজটিতে। এছাড়া অন্যান্য খাবারের সুবিধা তো থাকবেই। কেবল আহারই নয়, জাহাজটিতে থাকছে একাধিক পানশালাও।

নিরাপত্তাব্যবস্থাতেও বিশ্বের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে জাহাজ কর্তৃপক্ষ। যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম আইকন অব দ্য সিজ। এত রকমের বিলাসিতার আয়োজন রয়েছে যে প্রমোদতরিতে, সেই ‘আইকন অব দ্য সি’ বানানো হয়েছে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে, দাবি রয়্যাল ক্যারিবীয় গ্রুপের। তারা জানিয়েছে, জাহাজটির ইঞ্জিন চলছে তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) মাধ্যমে। যদিও পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, এই পদ্ধতিতে বাড়তে পারে দূষণের মাত্রা। তবে এই অভিযোগ মানতে নারাজ কর্তৃপক্ষ।
বছরজুড়ে ক্যারিবিয়ান সাগরে চলবে ‘আইকন অব দ্য সিজ’। এ জাহাজ ৭,৬০০ জন যাত্রী ও ২,৮০৫ জন ক্রুসহ সর্বমোট প্রায় ১০ হাজার মানুষ নিয়ে যাত্রা করতে সক্ষম। প্রতিবার যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি থেকে ৭ রাতের জন্য পূর্ব ও পশ্চিম ক্যারিবীয় অঞ্চলে চলাচল করবে। সাত দিনের যাত্রায় জনপ্রতি খরচ নির্ধারণ করেছে ২ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় তার পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা কিছু কম বেশি। জীবনের অবসরের মুহূর্তগুলো প্রিয়জনের সাথে কাটানোর জন্য যে কেউ চাইলে ঘুরে আসতে পারেন বিশ্বের বৃহত্তম প্রমোদতরি ‘আইকন অব দ্যা সিজে’।