Home স্বাস্থ্য চিকুনগুনিয়া-ছোট মশা, বড় ঝুঁকি!

চিকুনগুনিয়া-ছোট মশা, বড় ঝুঁকি!

উপমা ইসলাম রুপা
৫২ views

বর্ষা মানেই বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা। যা সঙ্গে করে নিয়ে আসে মশাবাহিত রোগ। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েডের পাশাপাশি বর্তমানে চিকুনগুনিয়া অন্যতম। বর্ষায় এর প্রাদুর্ভাব বাড়ে কয়েকগুণ। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ প্রায় কাছাকাছি হলেও চিকুনগুনিয়ার একটি বিশেষ দিক হলো এটি দীর্ঘমেয়াদি গাঁটের ব্যথা সৃষ্টি করে। যা অনেক সময় মাসের পর মাস রোগীকে কষ্ট দিতে থাকে।

চিকুনগুনিয়ার কারণ
চিকুনগুনিয়া চিকভি (CHIKV) নামক একটি RNA ভাইরাস। এটি মূলত ‘এডিস ইজিপ্টি’ নামক মশার মাধ্যমে ছড়ায়। যা শরীরে প্রবেশ করে তীব্র জ্বর ও গাঁটে ব্যথা তৈরি করে। বিশেষ করে বর্ষাকালে, যখন চারপাশে পানি জমে থাকে, তখন এই মশার প্রজনন বাড়ে এবং ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি তীব্র হয়। এই মশা সকালে ও বিকালে বেশি কামড়ায়। এই সময়ে সতর্ক না থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

উপসর্গগুলো কী
চিকুনগুনিয়ার উপসর্গগুলো সাধারণ জ্বরের মতো হলেও কিছু বিশেষ পার্থক্য আছে। আক্রান্ত হওয়ার ৪-৭ দিনের মধ্যে উপসর্গগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। চিকুনগুনিয়ার প্রধান লক্ষণ হলো হঠাৎ জ্বর (১০২–১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। তীব্র জয়েন্ট পেইন (বিশেষত হাটু, কনুই, আঙ্গুলের গাঁট। ত্বকে র‍্যাশ। মাঝে মাঝে বমি বমি ভাব বা ডায়রিয়া। এই ব্যথা কখনও কখনও মাসের পর মাস স্থায়ী হতে পারে। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে। মাথাব্যথা, অবসাদ, ক্ষুধামন্দা সহ চোখ লাল হওয়া (কনজাংকটিভাইটিস)।

চিকিৎসা কীভাবে হয়
IGM ও IGG অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে রোগটি শনাক্ত হয়।

aaa 111

রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত হয়, ছবি ; ইউসিএসএফ বেনিঅফচিলড্রেন হাসপাতাল।

ডাক্তারের পরামর্শ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, চিকুনগুনিয়া সাধারণত প্রাণঘাতী নয়। তবে একে হালকাভাবে নেওয়া ঠিক না। চিকুনগুনিয়া সাধারণত একটি স্বল্পমেয়াদি রোগ, এবং বেশিরভাগ রোগীই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে এজন্য এই রোগ নিয়ে সচেতনতা ও আলোচনা তুলনামূলকভাবে কম। অথচ সব ধরনের রোগের ক্ষেত্রেই চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধ শুধু স্বাস্থ্য বিভাগের একার দায়িত্ব নয়। এটা সমাজের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই সম্ভব। বাসাবাড়িতে সচেতনতা তৈরি এবং মশা বিস্তার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ একই ধরনের মশা (এডিস) ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া উভয় রোগই ছড়িয়ে দেয়।

এই রোগের একটি বড় লক্ষণ হলো গাঁটে অস্বাভাবিক ব্যথা। যা অনেক সময় জ্বর সেরে যাওয়ার পরও দীর্ঘ সময়—৭ দিন থেকে শুরু করে ৩ মাস, এমনকি আরো লম্বা সময় পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

প্রথম ধাপে প্যারাসিটামল জ্বর ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। রোগীর জ্বর কমে গেলে, যদি তার অন্য কোনো জটিলতা না থাকে, তাহলে হালকা মাত্রার ব্যথানাশক যেমন আইবুপ্রোফেন বা এসি প্রোফেন দিয়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। রোগীকে বিশ্রামে রাখতে হবে। প্রচুর তরল খাওয়াতে হবে।

এই অধ্যাপক আরো বলেন, চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে প্রয়োজন সম্মিলিত সচেতনতা ও উদ্যোগ।

homesandgardens 11

ফুলের টবসহ বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখুন, ছবি ; হোমস্যান্ড গার্ডেনস ডট কম।

প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় চিকিৎসা
চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো মশা নিয়ন্ত্রণ। বাসা ও আশপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখুন। ফুলের টব, ড্রাম, ডাবের খোসা, টায়ার এসব স্থানে পানি জমে থাকলে ফেলে দিন বা ঢেকে রাখুন।

লম্বা হাতা জামা ও ফুল প্যান্ট পরুন। মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশা নিরোধক ক্রিম বা রোল-অন ব্যবহার করুন। দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করুন। জানালা ও দরজায় মশা প্রতিরোধী জাল লাগান। আক্রান্ত ব্যক্তি যেন মশারির নিচে বিশ্রাম নেন সেদিকে খেয়াল রাখুন। এতে ভাইরাস অন্যদের মধ্যে ছড়াবে না।

বিশ্বব্যাপী বিস্তার
এক সময় চিকুনগুনিয়া শুধুমাত্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের রোগ ছিল। কিন্তু এখন প্রায় বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ দেশে এর উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (WHO) এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে জোর দিচ্ছে।

চিকুনগুনিয়া প্রাণঘাতী নয়। তবে এটি অত্যন্ত কষ্টদায়ক ও দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার জন্ম দিতে পারে। এডিস মশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া মানেই এই রোগ থেকে বাঁচা। তাই সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।

ব্যথা প্রশমনের জন্য করণীয়
চিকুনগুনিয়ার পরবর্তী সময়ে যারা দীর্ঘমেয়াদি গাঁটের ব্যথায় ভোগেন, তাদের জন্য হালকা ব্যায়াম, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ফিজিওথেরাপি কার্যকর হতে পারে। অনেক সময় চিকিৎসকরা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট দেন । তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।

চিকুনগুনিয়া এখন এক ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি। কিন্তু একটু সচেতন হলেই এ রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। তাই আমাদের সবার উচিত নিজে সচেতন হওয়া ও অন্যকেও সচেতন করা। সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন। মশার দংশন থেকে নিজেকে ও পরিবারকে রক্ষা করুন।
বর্ষায় একটু যত্ন নিলেই পরিবারকে এই যন্ত্রণাদায়ক রোগ থেকে রক্ষা করা সম্ভব। মনে রাখবেন, একটি মশার কামড়ই হতে পারে দীর্ঘমেয়াদী ভোগান্তির কারণ।

 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ