Home বিশ্ব হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি ইরানের, বাড়ছে উদ্বেগ

হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি ইরানের, বাড়ছে উদ্বেগ

৩৯ views

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছে। আর এ উত্তেজনার মধ্যে ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। যা এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে। বৈশ্বিক জ্বালানি পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই জলপথ বন্ধ হয়ে গেলে সম্ভাব্য ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিলের (এনআইএসি) প্রেসিডেন্ট জামাল আবদি এই হুমকিকে ইরানের ‘ট্রাম্প কার্ড’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জামাল আবদি বলেন, ‘এটি প্রতিরোধের একটি প্রধান রূপ হতে পারে। অবশ্য ইরান আগেও এ ধরনের হুমকি দিয়েছে। কিন্তু স্পষ্টতই কখচোকপয়েন্ট নো কার্যকর করেনি। ধারণা করা হয়, হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়া মানে বিশ্ব অর্থনীতির শ্বাসরোধ করা। অর্থনীতিতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এটি খুব ছোট একটা জলপথ, তাই এটিকে একটি বানানোর জন্য যে ধরনের সক্ষমতা ও আক্রমণ দরকার, ইরানের পক্ষে সম্ভবত তা সম্ভব।’

আবদি আরও বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছর ধরে যে খারাপ ব্যাপারগুলোর বিষয়ে সতর্ক করে আসছি, এই যুদ্ধ কেমন হতে পারে সেগুলোর একটি চেকলিস্ট এখন বাস্তবে রূপ নিতে দেখছি। হরমুজ প্রণালির বিষয়টি, আমি মনে করি, এমন একটি পদক্ষেপ হবে যা অনেক বিশ্বনেতা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনে এই ধারণা তৈরি করবে যে, “ঠিক আছে, এখন আপনাদের ইরানিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলিদের সহায়তায় নামতে হবে। ”’

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। এতে তেলের দাম আকাশচুম্বী হবে এবং বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এর ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি আরও প্রকট হবে। যেখানে ইসরায়েল ইরানে হামলার পরই বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে।

হরমুজ প্রণালি বন্ধে ইরানের এই হুমকিকে একটি কৌশলগত চাল হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা আঞ্চলিক সংঘাতের গতিপথ পরিবর্তন করতে চাচ্ছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ছাড় আদায় করারও একটি কৌশল এটি। তবে এই ‘ট্রাম্প কার্ড’ শেষ পর্যন্ত কী পরিণতি নিয়ে আসে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক এড হিরস আল-জাজিরাকে বলেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর এর দ্রুত এবং মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হিরস বলেন, ‘এই প্রণালি দিয়ে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পরিবাহিত হয়, যা বিশ্বব্যাপী তেলের বাজারের প্রায় ২০ শতাংশ। সৌদি আরব বা কুয়েতের জন্য ওই এলাকা থেকে বের হওয়ার কোনো সহজ বিকল্প পথ নেই।’

হিরস ব্যাখ্যা করেন, এই পরিবহন অর্ধেক কমিয়ে দিলে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১২০ ডলারের বেশি বেড়ে যাবে—এই প্রভাব খুব দ্রুত বিশ্বের সবার ওপর পড়বে। হিরস আরও যোগ করেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিলে ট্রাম্প ইরানে হামলা করার একটি অজুহাত পেয়ে যাবেন।

হিরসের মতে, বিশ্ব অর্থনীতিতে আঘাত করা, বৈশ্বিক বাজারে তেলের প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে সরাসরি মার্কিন অর্থনীতিতে আঘাত করা, সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার প্রয়োজনীয় অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে।

সূত্র: আল জাজিরা

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ