অতিরিক্ত গরম আর থেমে থেমে বৃষ্টিতে এডিসের প্রকোপ বাড়ছে। চোখ রাঙাতে শুরু করেছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগ ও সিটি করপোরেশন থেকে ডেঙ্গু সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ঈদের ছুটিতে ডেঙ্গুর চোখ রাঙানি আরও বাড়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
সাধারণত গ্রীষ্মকাল ডেঙ্গু রোগের মৌসুম হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বছরজুড়েই ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এডিস বছরব্যাপী প্রজনন এবং বংশবিস্তার করছে। এসব কারণেই দেশে এখন ডেঙ্গু সংক্রমণ সারা বছর ধরেই চলছে।
অতীতে শহরের বাসা-বাড়িতে আবাসিক ধরনের মশা (এডিস ইজিপটাই) ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটালেও বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের বুনো মশাও (এডিস এলবোপিকটাস) ডেঙ্গুর বাহক হিসেবে কাজ করছে। গত কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত যতজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন, এর সংখ্যা গতবারের চেয়ে অনেক বেশি।
ঈদের ছুটিতে শহর ও নগরী অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে। এসময় বাসাবাড়ির আঙিনা, সানসেটের ওপর, বারান্দা বা ছাদে পানি জমে এডিস মশার বংশবিস্তারের সুযোগ বাড়ছে। এছাড়া কোরবানির পশু জবাইয়ের পর জমাকৃত বর্জ্যে পানি জমে থাকা থেকেও এডিসের বংশবিস্তার হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিকদেরও যতটা সম্ভব খেয়াল রাখতে হবে, বাসাবাড়িতে বৃষ্টির পানি যেন লম্বা সময় জমে না থাকে। ফ্রিজের নিচে, এসির নিচে, ফুলের টব, ছাদ ও বাসার চারপাশে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুনে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে। সেজন্য সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
দেশে চলতি বছরের ৯ জুন পর্যন্ত ৪ হাজার ৯৭৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন ২৩ জন। যেখানে গত বছর এ সময় দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩১। মারা গিয়েছিলেন ৩৭ জন।
দেশে ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয় ২০২৩ সালে। পুরো বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। আর মারা গিয়েছিলেন ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০০০ সালে নতুন করে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়ে পরবর্তী ২৩ বছরে এত সংক্রমণ বা মৃত্যু হয়নি, যা ২০২৩ সালে হয়েছিল।
জ্বর হলে পরীক্ষা করানোর পরামর্শ চিকিৎসকের
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে।
প্রচুর পানি, ডাব, ওরস্যালাইন এবং ফলমূলের রস খেতে হবে। প্যারাসিটামলের বাইরে অন্য কোনো ধরনের ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না।

জ্বর হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে, ছবি; এমসি গিল।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশার বাসস্থান কমাতে হবে। বাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ করে রাখতে হবে যেন বাড়িতে কোনো মশা প্রবেশ করতে না পারে। এডিস মশা সাধারণত সকাল এবং সন্ধ্যায় কামড়ায়। তাই এই সময় বাড়ির জানালা এবং দরজা বন্ধ রাখতে হবে।
মশা নিধনের জন্য স্প্রে, কয়েল ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে। শিশুদের জন্য মশার প্যাচ, মশার ব্যান্ড, মশা প্রতিরোধের স্কিনকেয়ার পণ্য ব্যবহার করতে পারেন।
মশার কামড় থেকে বাচঁতে লম্বা হাতাওয়ালা পোশাক, ফুল প্যান্ট, মোজা এবং জুতা পরিধান করুন। এই পোশাকগুলো আপনার জন্য প্রতিরক্ষামূলক কাজ করবে।
মশার কামড় থেকে বাঁচতে নিয়মিত দিনে ও রাতে মশারির নিচে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। শিশুদের ক্ষেত্রে দুই স্তর বিশিষ্ট মশারি ব্যবহার করা ভালো। বাসা-বাড়ির জানালায় মশারি ব্যবহার করা নিশ্চিত করুন ।
ডেঙ্গু জীবাণুবাহী মশা বংশবিস্তার করে জমানো পানিতে। তাই বাড়ির আশেপাশে কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
নিয়মিত বাড়ির আশেপাশে দেখতে হবে কোথাও পানি জমে আছে কিনা। ট্যাংকের পানি ব্যবহার করার সময় ভালোভাবে ঢাকনা দিয়ে রাখতে হবে।
মশা সাধারণত অন্ধকার এবং স্যাতঁস্যাতেঁ স্থানে দেখা যায়। ঘরে মশার প্রবেশ বন্ধ করতে ঘর সবসময় আলো বাতাসপূর্ণ রাখাটা জরুরি। তাহলে মশার হাত থেকে বাঁচতে পারবেন।