Home বাণিজ্য বসুন্ধরা চেয়ারম্যান ও এমডিসহ ৮ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ

বসুন্ধরা চেয়ারম্যান ও এমডিসহ ৮ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক
১০৯ views

আলোচিত ব্যবসায়িক গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবার সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ তাদের পরিবারের আট সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) গতকাল রোববার বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তাদের সবার ব্যাংক হিসাব জব্দের এ নির্দেশনা দিয়েছে।

চিঠিতে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবার সোবহান, তার ছেলে কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর, ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান ও সাফওয়ান সোবহানের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া আহমেদ আকবার সোবহানের তিন পুত্রবধূ সোনিয়া ফেরদৌসী সোবহান, সাবরিনা সোবহান ও ইয়াশা সোবহানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে বলেছে বিএফআইইউ।

বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে, উল্লিখিত ব্যক্তি ও তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হয়ে থাকলে সেসব হিসাবের লেনদেন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা এবং তাদের নামে কোনো লকার থাকলে তার ব্যবহার ৩০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলো।

চিঠিতে তাদের ব্যাংক হিসাব খোলা থেকে শুরু করে সেগুলোর হালনাগাদ লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এছাড়া চিঠিতে তাদের ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত সব ধরনের সচল হিসাবের তথ্য, চলমান ঋণের তথ্য, আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্যাদি এবং লকার সংক্রান্ত তথ্য দুই কর্মদিবসের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে। 

চিঠি পাওয়া একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, নির্দেশনা মত তাদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ থাকবে। অর্থ জমা করার সুযোগ থাকবে। তবে উত্তোলন বা স্থানান্তর করার সুবিধা বন্ধ থাকবে পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত।

222

ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ থাকা সংক্রান্ত বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আলোচিত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে আপনাদের ব্যাংকে পরিচালিত সকল ধরনের সচল ব্যক্তিক হিসাবের লেনদেন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ২৩ (১) (গ) ধারার আওতায় ৩০ দিনের স্থগিত করতে আপনাদেরকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।’

বসুন্ধরা গ্রুপের বিপুল বিপুল জমি দখল, অর্থপাচার ও কর ফাঁকিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুসন্ধান শুরুর মধ্যে এবার বিএফআইইউ আহমেদ আকবর সোবহানসহ পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দিল।

গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসন অবসানের পর সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি আর্থিক খাত এবং বড় কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে তৎপর হয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন।

এরই ধারাবাহিকতায় দেশের সবচেয়ে বড় আবাসন কোম্পানি বসুন্ধরা গ্রুপের কর্ণধার আহমেদ আকবর সোবহান ও তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দেড় লাখ কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল এবং অর্থপাচারের অভিযোগ পাওয়ার কথা তুলে ধরে গত ৫ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধানে নামার সিদ্ধান্তের কথা জানায় সিআইডি।

এর আগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধাভোগী কোম্পানি হিসেবে পরিচিত ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘কর ফাঁকিসহ আর্থিক অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ’ থাকার কথা তুলে ধরে অনুসন্ধান শুরু করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।

এ সংস্থার সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) ২২ অগাস্ট আরও কয়েকটি বড় শিল্পগ্রুপের সঙ্গে বসুন্ধরার বিষয়েও ‘বিভিন্ন পন্থায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও কর ফাঁকির’ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে।

আর বসুন্ধরার মালিকানা হস্তান্তর স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরকে চিঠি দেওয়ার কথা ২ অক্টোবর জানায় এনবিআর।

গত জুলাই–আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিল্পগোষ্ঠীটির চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান তখনকার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সমর্থন জানান।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের চার দিন আগে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপকে দুই বছর ঋণ পরিশোধ না করার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকে থাকা ঋণের জন্য গ্রুপটি এই সুবিধা পেয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ন্যাশনাল ব্যাংকে বসুন্ধরা গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা, যার মধ্যে সরাসরি ঋণ ৩ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা।

এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই মাস আগে জ্বালানি তেল নিয়ে বসুন্ধরাকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেল বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয় বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানিকে। দেশে বর্তমানে জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহ করে একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

বিশেষজ্ঞ ও ভোক্তা অধিকারকর্মীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের ব্যবসা বেসরকারি খাতে দেওয়া হলে মানুষকে তা বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে, যেটা হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ