Home বাণিজ্য ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: বাংলাদেশের ৪ খাতে প্রভাব পড়ার শঙ্কা

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: বাংলাদেশের ৪ খাতে প্রভাব পড়ার শঙ্কা

ইকবাল হোসেন
১৩ views

ইরান ও ইসরাইলের সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা তৈরি করেছে। এটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে রূপ নিলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক  প্রভাব পড়তে পারে। এরমধ্যে চারটি খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

প্রথমত, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাবে। দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক শ্রমবাজার ও প্রবাসী আয়ে প্রভাব পড়বে। তৃতীয়ত, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বিঘ্নিত হবে। সবশেষ,  মূল্যস্ফীতি বাড়বে ও প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হবে। 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে এই যুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে এই প্রভাবের গভীরতা নির্ভর করবে, যুদ্ধ কতটা দীর্ঘ স্থায়ী হয় তার ওপর। 

অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে বাংলাদেশের তেলের দাম বেড়ে যাবে। শুধু এটা বাংলাদেশের জন্য না আন্তর্জাতিক অনেক দেশের জন্য ক্ষতিকর। ইরান যদি হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয় তাহলে তেলের দাম অনেক বেড়ে যাবে। যার প্রভাবে উৎপাদন থেকে শুরু করে আমদানি রপ্তানি বাজারেও পড়বে। কর্মসংস্থান কম হবে, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। 

বাংলাদেশ জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভরশীল। এসব জ্বালানি মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি হয়। এর মধ্যে এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) এবং ক্রুড অয়েল (অশোধিত তেল) অন্যতম। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি বড় অংশ গ্যাস ও তেলের ওপর নির্ভরশীল, বিশেষত এলএনজি ও পরিশোধিত জ্বালানি তেল। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়বে, যার প্রভাব সরাসরি পড়বে শিল্প উৎপাদন, পরিবহন, কৃষি ও খুচরা বাজারে। বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার ও ওমান থেকে এলএনজি আমদানি করে। এসব দেশের একাধিক কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি আছে। কাতার থেকে এলএনজি আমদানির একমাত্র পথ হরমুজ প্রণালি। হরমুজ প্রণালি ইরান দীর্ঘ মেয়াদে বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে এলএনজি আমদানির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার বড় শঙ্কা রয়েছে। তাতে গ্যাস সরবরাহে প্রভাব পড়বে। এ পরিস্থিতিতে এলএনজি আমদানির ব্যয় বাড়লে তার ভার ব্যবসায়ীদের কাঁধেই বর্তাবে। এতে দেশের শিল্পোৎপাদনে প্রভাব পড়বে। শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির গতি কমে যাবে। সামগ্রিকভাবে আরও বিপদে পড়বে অর্থনীতি।

যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে বাংলাদেশের বৈদেশিক শ্রমবাজার ও প্রবাসী আয়ে প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করে। ইরান ও তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোয় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে এই অঞ্চলে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে। এর আগেও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের সময় বাংলাদেশি শ্রমিকেরা দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। এই যুদ্ধে যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সমর্থনে এগিয়ে আসছে এবং ইরান মুসলিম দেশগুলোর সহায়তা চাইছে, তাতে এটি শিগগির আঞ্চলিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশে কাজের সংকট হবে। ফলস্বরূপ, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমবে। গত কয়েক মাসে দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, এতে বড় কৃতিত্ব রেমিট্যান্সের (প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ)। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য অস্থির হলে রেমিট্যান্স কমবে। এটি দেশের অর্থনীতিতে বড় আঘাত করবে। 

বর্তমানে বাংলাদেশের মোট আমদানির ৩০ শতাংশই তিন ধরনের পণ্যে। এর মধ্যে রয়েছে-জ্বালানি তেল, খাদ্য এবং সার। এই পণ্যগুলোর অধিকাংশই হরমুজ প্রণালি দিয়ে আমদানি হয়। যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে আমদানি বাণিজ্য বিঘ্নিত হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি রপ্তানিনির্ভর। তৈরি পোশাক খাত বৈদেশিক আয়ের প্রধান উৎস। পণ্য পরিবহনে বিলম্ব হলে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। ফলে ক্রয়াদেশ বাতিলের ঝুঁকি, মূল্যছাড় দিতে বাধ্য হওয়া বা বাজার হারানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বিষয়। খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবন–জীবিকায় প্রভাব ফেলে এবং অর্থনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী চাপ সৃষ্টি করে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকোচনের ধারায়ও চলে যেতে পারে। ২০২২ সালে দেশে যে ডলারের সংকট ও মূল্যস্ফীতিজনিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়, তার পেছনেও ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত জ্বালানির তেলের মূল্যবৃদ্ধি। সেই যুদ্ধের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতে এখন ইরান-ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলায় ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।

বিজিএমইএর নতুন সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ইরান ও ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা আমাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেলে তার প্রভাব সবার ওপর পড়বে। তৈরি পোশাকশিল্পও বাদ যাবে না।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ