Home বিশ্ব ট্রাম্পের আর্থিক মূল্যকে কাজে লাগানোর চেষ্টা

ট্রাম্পের আর্থিক মূল্যকে কাজে লাগানোর চেষ্টা

‘ট্রাম্প মোবাইল’ প্রি-অর্ডার শুরু

২৪ views

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামের আর্থিক মূল্যকে কাজে লাগানোর চেষ্টা শুরু করেছে তার পরিবার। এরই অংশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট  পরিবার একটি নতুন ট্রাম্প-ব্র্যান্ডেড মোবাইল ফোন পরিষেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছে।

ট্রাম্প অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, ট্রাম্পের ছেলেদের মাধ্যমে পরিচালিত ‘যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত’ একটি সোনালি রঙের স্মার্টফোন বিক্রি করা হবে, যার মূল্য ৪৯৯ ডলার (প্রায় ৬০,৯০০ টাকা)। এর সঙ্গে মাসিক পরিষেবা ফি হবে ৪৭ দশমিক ৪৫ ডলার, যা ট্রাম্পের ৪৫তম ও সম্ভাব্য ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার বিষয়কে ইঙ্গিত করছে।

তবে নৈতিক স্খলন পর্যবেক্ষণকারীরা বলছেন, এটি একটি নতুন উপায়, যার মাধ্যমে স্বার্থের সংঘাত ও দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

একজন সরবরাহ চেইন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, পুরোপুরি মার্কিন উপকরণ দিয়ে মোবাইল ফোন তৈরি করা ‘প্রায় অসম্ভব’।

‘এটি অবিশ্বাস্য যে, ট্রাম্পের পরিবার আবার একটি নতুন পথ তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্বে থাকার সময় ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হতে পারেন।’ এ কথা বলেছেন সিটিজেনস ফর রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড এথিক্স ইন ওয়াশিংটনের (সিআরইডব্লিউ) যোগাযোগ পরিচালক মেগান ফকনার।

যদিও ট্রাম্প বলেছেন, তার ব্যবসার দায়িত্ব একটি ট্রাস্টকে দিয়েছেন, যা তার সন্তানরা পরিচালনা করে। হোয়াইট হাউস বলেছে, তিনি সব মার্কিনির স্বার্থেই কাজ করেন।

ট্রাম্প ফোন

ট্রাম্প ফোন, ছবি: ওয়াশিংটন পোস্ট

কিন্তু ফকনার বলেন, ‘এই নতুন উদ্যোগ পুরোনো প্রশ্নগুলোকেই আবার সামনে এনেছে— মানুষ কি এই পরিষেবার গ্রাহক হবে রাজনৈতিক প্রভাবের আশায়? প্রেসিডেন্ট এই শিল্পের নীতিমালা ঠিক করতে গিয়ে কি স্বজনপ্রীতি করবেন?’

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন- ‘যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত’ কথাটির মানে কী? কেননা যুক্তরাষ্ট্রে পুরো স্মার্টফোন বানানো এখনও সম্ভব নয়।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের কেরি বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক টিংলং ডাই বলেন, ‘তাদের এখনো কার্যকর কোনো প্রোটোটাইপ নেই। এটা আদতে অসম্ভব। এটা সম্ভব করতে হলে অলৌকিক কিছু ঘটতে হবে— বৃহৎ উৎপাদন, চাহিদা, আর একটি পূর্ণাঙ্গ চেইন প্রয়োজন।’

এই ঘোষণার ঠিক আগে ট্রাম্প অ্যাপল প্রধান টিম কুককে এই বলে চাপ দেন যে, মার্কিন ব্যবহারকারীদের জন্য আইফোনগুলো যেন যুক্তরাষ্ট্রেই তৈরি করা হয়। গত মাসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি নয় এমন আইফোনের ওপর ২৫ শতাংশ কর বসানোর হুমকি দেন।

বিশ্লেষক লিও গ্যাবি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এখনো তেমন কোনো উচ্চপ্রযুক্তির সরবরাহ চেইন নেই। ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগস্টের মধ্যে এই ফোন বাজারে আনা সম্ভব নয়।’

লিও গ্যাবি আরও জানান, এটা হতে পারে যে, ফোনটি বিদেশ থেকে আমদানি করা যন্ত্রাংশ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে একত্রিত করা হবে— যা ‘যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত’ বলার সুযোগ  তৈরি করে দিতে পারে।

ট্রাম্প সেল

আগস্টে পাওয়া যাবে ট্রাম্প মোবাইল, ছবি : সিএনএন

ট্রাম্প অর্গানাইজেশন বলেছে, ‘পরিশ্রমী মার্কিনিরা এমন একটি ওয়্যারলেস পরিষেবা প্রাপ্য, যা সাশ্রয়ী, তাদের মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাবে ও  নির্ভরযোগ্য সেবা প্রদান করবে।’

এমনকি তারা বিদেশে থাকা সামরিক সদস্যদের পরিবারের জন্য আন্তর্জাতিক কলের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার কথা বলেছে। ফোনটির প্রি-অর্ডার ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। তাদের দাবি, গ্রাহক সেবা প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করবেন।

এই উদ্যোগ ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক কৌশলেরই একটি অংশ—বিভিন্ন পণ্যে নিজের নাম বিক্রি করে ফি ও রয়্যালটি আয় বাড়ানো হচ্ছে। রাজনীতিতে প্রবেশের পর তার ব্র্যান্ডের বাজারমূল্য নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।

সাম্প্রতিক আর্থিক বিবরণীতে তিনি জানিয়েছেন, গত বছর তিনি ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছেন—এর মধ্যে ট্রাম্প ব্র্যান্ডের বাইবেল, ঘড়ি, সুগন্ধি, স্নিকার্স থেকে মিলিয়ন ডলার এসেছে।

ফোর্বস মার্চে জানিয়েছে, ট্রাম্পের সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।

মার্কিন মোবাইল বাজার প্রতিযোগিতায় বর্তমানে আধিপত্য করছে তিনটি বড় কোম্পানি: এটি অ্যান্ড টি, ভেরিজন ও টি-মোবাইল, যারা মাসিক ৪০ ডলারের কমে ফোন পরিষেবা দেয়।

সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট, সিএনএন ও বিবিসি

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ