Home বিজ্ঞান কমছে মৃতভোজী প্রাণী, বাড়ছে মানুষের রোগের ঝুঁকি

কমছে মৃতভোজী প্রাণী, বাড়ছে মানুষের রোগের ঝুঁকি

তাসনিম তাবাসসুম
৩০ views

কাক, শকুন, হায়েনা বা কুকুর—সবার কাছে ময়লা-খেকো প্রাণী হিসেবে পরিচিত হলেও আমাদের রোগ-বালাই থেকে বাঁচাতে নীরবে কাজ করে এরা। কিন্তু দিন দিন কমছে এসব প্রাণী, যার ফলে বাড়ছে প্রাণীবাহিত রোগ-বালাই —নতুন এক গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে।

পরিবেশে মৃত প্রাণীর দেহ দ্রুত খেয়ে ফেলা বা সরিয়ে নেয়া পরিচ্ছন্নতা রক্ষাকারাী কাক, শকুন, হায়েনা বা কুকুর গোত্রের প্রাণীকে বলা হয় মৃতভোজী বা স্ক্যাভেঞ্জার।   

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ১,৪০০ প্রজাতির মৃতভোজী মেরুদণ্ডী প্রাণীর ৩৬ শতাংশই হুমকির মুখে রয়েছে। বড় স্ক্যাভেঞ্জারগুলোর অবস্থা বেশি সংকটাপন্ন। আর ছোট স্ক্যাভেঞ্জাররা তুলনামূলকভাবে টিকে থাকলেও তারা মানুষের জন্য রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে। 

2 4

হায়েনা ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি

প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, বড় মৃতভোজী যেমন শকুন, হায়েনা বিপুল পরিমাণ পঁচা মাংস খেয়ে পরিবেশকে জীবাণুমুক্ত রাখে। আমেরিকা ও ইউরোপে পাওয়া পঁচা মাংসের প্রায় ৭৫ শতাংশই এই প্রাণী খেয়ে ফেলে। শুধু টার্কি, শকুন  বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন দুর্গন্ধযুক্ত মৃতদেহ খেয়ে পরিবেশ পরিষ্কার রাখে।

আর্জেন্টিনার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আট থেকে দশটি অ্যান্ডিয়ান কনডর (শকুন) মাত্র পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে একটি বুনো শুকরের মৃতদেহ পুরো খেয়ে ফেলে। শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নয়, এই প্রক্রিয়া মানুষ ও গবাদিপশুকে মারাত্মক রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী চিন্ময় সোনাওয়ানে জানান, ইথিওপিয়ার মেকেল্লেতে দেখা গেছে, সেখানকার হায়েনারা প্রতি বছর প্রায় ২০০ টন পশু বর্জ্য খেয়ে ফেলে। এতে অ্যানথ্রাক্স বা বোভাইন টিউবারকুলোসিসের মতো ভয়াবহ রোগ মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারেনা। 

condor

দুর্ভাগ্যজনকভাবে বড় স্ক্যাভেঞ্জাররা এখন সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে, ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি

তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বড় স্ক্যাভেঞ্জাররা এখন সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে। অনেক সময় শিকার বা গবাদিপশু রক্ষায় ব্যবহৃত বিষ বা ওষুধ ভুলবশত স্ক্যাভেঞ্জারদের মারতে পারে। আবার বন্যপ্রাণী পাচার বা শরীরের কিছু অংশের চাহিদাও এই প্রাণীর সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে। বিপরীতে ছোট স্ক্যাভেঞ্জার যেমন ইঁদুর, বনবিড়াল, বা কুকুর শহুরে পরিবেশে ভালোভাবেই টিকে যাচ্ছে।

তাদের অনেকেই বড় স্ক্যাভেঞ্জারদের পেছনে পেছনে চলে মৃতদেহের সন্ধান করে এবং বড় প্রাণীদের সাহায্যে মৃতদেহ ছিঁড়ে খাবার সংগ্রহ করে। বড় স্ক্যাভেঞ্জার না থাকলে এই প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয় এবং মৃতদেহ জমে গিয়ে রোগ ছড়ায়।

স্ক্যাভেঞ্জার প্রাণীর বিলুপ্তি সরাসরি মানুষের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলছে। পরিবেশ ও স্বাস্থ্য রক্ষায় এই প্রাণীদের সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।

সূত্র: সায়েন্স নিউজ

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ