গুজরাট আর রাজস্থান সীমান্তের প্রত্যন্ত এক গ্রামে বোন আর মায়ের সঙ্গে থাকে ১৭ বছর বয়সী আরিয়ান আসারি। বাবা সৈনিক ছিলেন, অবসর নেওয়ার পর এখন কাজ করেন আহমেদাবাদ শহরের মেট্রো পরিষেবায়। বোনের নিয়োগ পরীক্ষার সূত্রে এই প্রথম গ্রাম ছেড়ে শহরে আসা আরিয়ানের।
গত ১২ জুন বোনকে নিয়ে আহমেদাবাদ বিমানবন্দর সংলগ্ন মেগানিনগরে বাবার ছোট ফ্ল্যাটে এসে উঠে সে। দুপুরে খেয়ে ভাইবোনকে বাসায় রেখে বেরিয়ে যান বাবা। ছোটবেলা থেকেই আকাশে বিমান দেখলেই ‘হা’ করে তাকিয়ে থাকার অভ্যাস আরিয়ানের। শহরে আসার আগে বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিল আহমেদাবাদ গেলে বিমান দেখা যাবে কিনা। ‘যতো খুশি দেখতে পাবে,’ হেসে ছেলেকে আশ্বস্ত করেছিলেন বাবা।
দুপুরে খাওয়া শেষে ফোন হাতে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় আরিয়ান। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই চোখে পড়ে আকাশে ভেসে থাকা একটি বিমান। ক্যামেরায় বিমানের ওড়া ধরে রাখতে ভিডিও শুরু করে সে। এক ধরনের অস্বাভাবিকতা লক্ষ করে সে বিমানের মধ্যে, যেন উপরে উঠতে চেয়েও পারছে না। এদিক ওদিক দুলছে। ভিডিও করতে থাকে আরিয়ান। খানিক পর একটা দালানের ওপাশে হারিয়ে যায় বিমানটি। মুহূর্তকয়েক পরই আগুনের বিরাট এক গোলা লাফিয়ে ওঠে আকাশের দিকে।
ভয়ে আরিয়ানের শরীর কাঁপতে শুরু করে। বাবাকে ফোন করে সে। বাবা ফোন ধরতেই হড়বড় করে গোটা ঘটনা তাকে জানায়। ‘বাড়িতেই থাকো,’ সবকিছু শোনার পর বলে বাবা, ‘ভিডিওটার কথা কাউকে বলো না।’ কিন্তু উত্তেজনার বশে কয়েকজন বন্ধুকে ভিডিওটা পাঠিয়ে দেয় আরিয়ান। বাকিটা ইতিহাস।
পরদিন থেকেই পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা আর শত শত সাংবাদিকের আনাগোনায় মুখর হয়ে ওঠে তাদের ছোট্ট বাসাটা। পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায় ঘটনার আদ্যোপান্ত শোনার জন্য। ছেলেকে তড়িঘড়ি করে গ্রামে পাঠিয়ে দেন বাবা। মানসিকভাবে ততোদিনে পুরোপুরি বিপর্যস্ত আরিয়ান। ফোনের শব্দ শুনলেও আঁতকে ওঠে।
‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো স্বাভাবিক হয়ে যাবে সে,’ আরিয়ানের বাবার ভাষ্য, ‘কিন্তু মনে হয় না আর কোনোদিন বিমানের শব্দ শুনে আকাশের দিকে তাকাবে আমার ছেলে।’
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস