Home বাণিজ্য রেমিট্যান্সে নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ

রেমিট্যান্সে নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ

ইকবাল হোসেন
৫০ views

রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে নতুন ইতিহাস গড়তে চলেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। এবার ৩০ বিলিয়ন (৩ হাজার কোটি) ডলারের মাইলফলক ছুঁতে চলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শেষ হবে আগামী ৩০ জুন। এই মাসের প্রথম ১৪ দিনে ১১৪ কোটি ৯০ লাখ (১.১৫ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীরা। মাসের বাকি ১৬ দিনে (১৫ থেকে ৩০ জুন) এই হারে এলেও মাস শেষে রেমিট্যান্সের অঙ্ক ২৪৬ কোটি ২১ লাখ (২.৪৬ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে পৌঁছবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) প্রবাসীরা ২ হাজার ৭৫০ কোটি ৬৩ লাখ (২৭.৫১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন। সব মিলিয়ে ১১ মাস ১৪ দিনে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ১৪ জুন) এসেছে ২৮ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে জুন মাসে যদি ২৪৬ কোটি ২১ লাখ ডলার আসে, তাহলে সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে রেমিট্যান্সের অঙ্ক গিয়ে দাঁড়াবে ২ হাজার ৯৯৭ কোটি (প্রায় ৩০ বিলিয়ন) লাখ ডলার।

আর এর মধ্য দিয়ে রেমিট্যান্স আহরণে নতুন ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ। এর আগে এক অর্থ বছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি (২৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলার, ২০২০-২১ অর্থ বছরে।

রোজা ও ঈদ সামনে রেখে গত মার্চে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে, যা ছিল গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭৫ কোটি ১৯ লাখ (২.৭৫ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল গত এপ্রিল মাসে।

গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ২২ লাখ (২৩.৯১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, মূলত হুন্ডি কমে যাওয়ার কারণেই রেমিট্যান্স বাড়ছে। নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে হুন্ডি কমে গেছে। এখন দেশে যে রেমিট্যান্স আসছে তার পুরোটাই বৈধ পথে অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শুরু হয়েছিল গত বছরের জুলাই থেকে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে ওই মাস ছিল উত্তাল; দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। কয়েক দিন ব্যাংক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। সে কারণে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কমেছিল; এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ কোটি (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার। তার আগের তিন মাস অবশ্য ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি এসেছিল।

তবে তারপর থেকে প্রতি মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে; মার্চে এসেছে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি। এপ্রিল মাসে আসে পৌনে ৩ বিলিয়ন ডলার। মে মাসে এসেছে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ চলতি অর্থ বছরের ১১ মাসের ১০ মাসেই (আগস্ট-মে) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। চলতি জুন মাসেও ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আসবে বলে হিসাব বলছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমন দেখা যায়নি।

২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে এসেছিল ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার।

চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে তারা পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার। চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার।

 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ