Home বিশ্ব সবাইকে তেহরান ছাড়তে বললেন ট্রাম্প

সবাইকে তেহরান ছাড়তে বললেন ট্রাম্প

১৮ views

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের রাজধানী তেহরানের বাসিন্দাদের শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেন। কানাডার আলবার্টায় জি সেভেন সম্মেলনে ট্রাম্প ওই মন্তব্য করেন। তার এই কথা বলার কিছুক্ষণ পর থেকেই তেহরানে বিকট বিস্ফােরণের শব্দ পাওয়া যেতে থাকে।

আর তারপরই ইরান আর ইসরায়েলের মধ্যে পঞ্চম দিনের মত যখন হামলা-পাল্টা হামলা চলছে, তখন সংঘাত ছাপিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ওই বার্তা উঠে এসেছে আলোচনার কেন্দ্রে।

ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে এক বার্তায় সবাইকে তেহরান ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘যারা তেহরানে আছেন, দয়া করে এখনই শহরটি ছেড়ে দিন। খুবই জরুরি।’

ট্রাম্প তার পোস্টে উল্লেখ করেন যে, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না। একইসাথে তেহরানের বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।

জি সেভেন সম্মেলনের জন্য সোমবার কানাডায় থাকলেও মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছেন বলে জানা গেছে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে। কানাডায় থাকাকালীন এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমনও ইঙ্গিত দেন যে, ইসরায়েল আর ইরান শীঘ্রই সমঝোতায় আসতে যাচ্ছে।

এক প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ইরানকে ৬০ দিন সময় দিয়েছিলাম পরমাণু চুক্তিতে আসার জন্য। আর ৬১তম দিনে কী হলো আপনারা সবাই দেখেছেন। আমি প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছি। আর আমি যেমন বলেছি, আমার মনে হয় দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হবে। আমার মনে হয় চুক্তি না করলে, ইরান বোকার মত কাজ করবে।’

হামলা

ইরানের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল, ছবি : বিবিসি

বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন তেহরানের মানুষকে সরে যাওয়ার কথা বলে ইরানকে চাপের মুখে ফেলে ইসরায়েলের সাথে সমঝোতা করানোর চেষ্টা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

এদিকে, ওয়াশিংটনে ফিরেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডেকেছেন। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ পররাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালককে নিয়ে গঠিত। এই পরিষদ প্রেসিডন্টেকে জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ে উপদেশ দিয়ে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরানে ইসরায়েলের চলমান অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র যোগ দেয়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকলেও ওয়াশিংটন ইসরায়েলের চলমান অভিযানে যোগ দেবে না।

এদিকে, এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সেখানে সেনা উপস্থিতি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ। তবে, তিনি জানিয়েছেন যে মধ্যপ্রাচ্যে ‘অতিরিক্ত সেনা উপস্থিতি’ নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত জানানো হলেও তা কেবলমাত্র ওই অঞ্চলে ওয়াশিংটনের ‘সুরক্ষা’ নিশ্চিত করার জন্য করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সোমবার তার করা এক পোস্টে উল্লেখ করেছেন যে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে নিরস্ত করার জন্য ওয়াশিংটন থেকে একটি ফোনকলই যথেষ্ট। তবে, কূটনৈতিকভাবে সংঘাত থামানোর নানা প্রচেষ্টা চলতে থাকলেও ইসরায়েল আর ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মিসাইল ও বিমান হামলা থামছে না।

সোমবার রাতে তেহরানের বেশ কিছু এলাকাসহ ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলা করে ইসারয়েলি বাহিনী। টানা ইসরায়েলি হামলা আর শহর ছেড়ে যাওয়ার হুমকি জারি থাকায় সোমাবার দুপুর থেকেই তেহরান ছেড়ে যেতে থাকে হাজার হাজার মানুষ।

সোমবার রাতে তেহরানের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক জ্যামও দেখা গেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবন ছাড়াও পশ্চিম ইরানের দুটি মিসাইল ঘাঁটিতে হামলা করেছে ইসরায়েল। ইরানও ইসরায়েলের বড় শহরগুলোতে হামলা অব্যাহত রেখেছে। আজ মঙ্গলবার ভোরেও তেল আভিভ, জেরুসালেমসহ ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি শহরে সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে।

ইসরায়েল-ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলার কারণে ইসরায়েলে অবস্থানরত নাগরিকদের ‘যত দ্রুত সম্ভব’ সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে চীনা দূতাবাস।

তেহরান

গতকালও তেহরানের একটি বড় অংশের বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে “অবিলম্বে” অন্যত্র সরে যেতে বলেছে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী (আইডিএফ), ছবি : বিবিসি

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলে নিযুক্ত চীনা দূতাবাস জানায়, “চীনের সব নাগরিককে অনুরোধ করা হচ্ছে, তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে যেন স্থল সীমান্ত দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ইসরায়েল ত্যাগ করে।”

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “জর্ডানের দিকে রওনা দেওয়াই সবচেয়ে ভালো বিকল্প।”

চীনা দূতাবাস সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে। বেসামরিক অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, সাধারণ মানুষের প্রাণহানি বাড়ছে, আর নিরাপত্তা পরিস্থিতির চরম অবনতি হচ্ছে,” বিবৃতিতে বলা হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে বিস্ফোরণের পর ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে, যদিও ইরানি সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই ঘটনা আরও বড় কিছু সংকেত দিতে পারে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা তেহরানের জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ও পরিস্থিতির উন্নয়নের দিকে নজর রাখছেন।

সূত্র : বিবিসি, সিবিসি ও ইউএস টুডে

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ