Home প্রযুক্তি এবার কানাডার মানুষের মাথায় চিপ বসাবে ইলন মাস্কের নিউরালিংক

এবার কানাডার মানুষের মাথায় চিপ বসাবে ইলন মাস্কের নিউরালিংক

ফাহমিদা বৃষ্টি
১৪৩ views

আপনার মনের ইচ্ছায় চলবে স্মার্টফোন বা কম্পিউটার! শুনতে অসম্ভব শোনালেও এটাই সম্ভব করে দেখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউরাটেকনোলজি প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক। এজন্য ব্রেন কম্পিউটার ইন্টারফেসেস (বিসিআইএস) প্রযুক্তির তারহীন চিপ তৈরি করেছে টেক বিলিওনিয়ার ইলন মাস্কের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি। এর মাধ্যমে মানুষ মস্তিষ্ক থেকে সংকেত পাঠিয়ে কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে কাজ করতে পারবে।

‘অসম্ভব’ এই কাজের পরীক্ষা চালানোর জন্য এক হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক মস্তিষ্কে চিপ বসাতে সম্মতি জানালেও এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী দুজন নাগরিকের মাথায় এটি বসানো হয়েছে। এবার কানাডায় ব্রেন চিপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর অনুমতি পেয়েছে নিউরালিংক।

নিউরালিংকের ঘোষণা অনুসারে, তাদের চিপে ৬৪টি নমনীয় পলিমার সুতা রয়েছে। মানুষের মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ড রেকর্ড করার জন্য ১০২৪টি একক ইউনিট রয়েছে। নিউরালিংকের চিপে ব্যান্ডউইথ বাড়ানোর উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে।

কোনো ত্রুটি ছাড়াই মানুষের ব্রেইনে চিপ প্রতিস্থাপন করতে পারবে  এমন একটি রোবট তৈরির চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি। আগে এ ধরনের চিপ হতো তারযুক্ত এবং তা মাথার খুলি ছিদ্র করে বসানো হতো। এতে মস্তিষ্কে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে নিউরালিংকের চিপটি তারহীন। তাই এই ঝুঁকি নেই বললেই চলে।

কানাডায় ব্রেন চিপটি স্থাপনে সহযোগিতা করবে ইউনিভার্সিটি হেলথ নেটওয়ার্ক হাসপাতাল। বিষয়টি স্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের টরন্টো শাখা এই জটিল নিউরোসার্জিক্যাল অপারেশনের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।

neuralink medical

নিউরালিংকের ব্রেন চিপ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো চারটি অঙ্গ পক্ষাঘাতগ্রস্ত এমন রোগীদের চিন্তাশক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন যন্ত্র নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা।
ছবিঃ মেডিকেল এক্সপ্রেস

ইতিমধ্যে নিউরালিংক নিয়ে বিশ্বের বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ সম্ভাবনার কথা বলছে, কেউ আবার এতে খুঁজে পাচ্ছেন ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত। প্রথম দিকে নিউরালিংক এই চিপ স্থাপনের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করে বিষয়টিকে অনেকটা ধোঁয়াশায় রেখেছে। এতে অনেক বিজ্ঞানী হতাশ হয়েছেন।

তবে নিউরালিংকের তৈরি মস্তিষ্কের চিপ নিয়ে বেশ আশাবাদী নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার উট্রেখটের স্নায়ুবিজ্ঞানী ও ইন্টারন্যাশনাল বিসিআই সোসাইটির প্রেসিডেন্ট মারিস্কা ভ্যানস্টিনসেল। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আমি আশা করি, নিউরালিংকের বিজ্ঞানীরা এটিকে নিরাপদ বলে প্রমাণ করবেন। এটি মস্তিষ্কের সংকেত রেকর্ড ও ডিকোড করার ক্ষেত্রে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর হবে।

নিউরালিংকের ব্রেন চিপ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো কোয়াড্রিপ্লেজিয়া, অর্থাৎ চারটি অঙ্গ পক্ষাঘাতগ্রস্ত—এমন রোগীদের চিন্তাশক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন যন্ত্র নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা। এটি কাজে লাগিয়ে গুরুতর প্যারালাইজড বা দৃষ্টিশক্তিহীন ব্যক্তিকে তার চিন্তার মাধ্যমে কম্পিউটার, রোবোটিক হাত, হুইলচেয়ার বা অন্যান্য ডিভাইস নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেওয়া হবে।

এ বছর মোট আট জনের মস্তিষ্কে চিপ বসানোর পরিকল্পনা আছে নিউরালিংকের। দুজনের মস্তিষ্কে ইতিমধ্যে চিপ প্রতিস্থাপিত হয়েছে। প্রথম ব্যক্তি হিসেবে নোলান আরবাঘের মস্তিষ্কে নিউরালিংক চিপ স্থাপন করা হয়। প্যারালাইজড আরবাঘ নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানান, শারীরিক অক্ষমতার কারণে অন্যদের ওপর নির্ভরতা কমাতে তাকে সাহায্য করছে নিউরালিংকের চিপ।

অপারেশনের পর বর্তমানে তিনি নিজের ইচ্ছাশক্তি কাজে লাগিয়ে ল্যাপটপের স্ক্রিনের চারপাশে মাউসের কার্সার নাড়াতে পারেন। পাশাপাশি খেলতে পারেন দাবা আর ভিডিও গেমও। নিউরালিংক অবশ্য জানিয়েছে, আরবাঘকে নিবিড়ভাবে অন্তত ৫ বছর পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ