সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র কাছরিবাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে দেশজুড়ে। তবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে হামলার নেপথ্য কারণ জানা গেছে। কাছরিবাড়ির স্টাফরা স্থানীয় এক ব্যক্তিকে পাস না নিয়ে ভেতরে বাইক পার্ক করার অভিযোগে মারধর করে। প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল থেকে কাছারি বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী হিমু হ্যালো বাংলাদেশকে জানান, সিরাজগঞ্জের রূপগঞ্জের এক প্রবাসী ঈদের ছুটিতে ঘুরতে যান কাছারিবাড়িতে। ওইদিন প্রচণ্ড দর্শনার্থীর চাপা থাকায় স্টাফরা তাকে পাস ছাড়াই ভেতরে বাইক রাখার কথা বলে। পরে বাইক নিয়ে বের হবার সময় পাস না থাকায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে মারধর করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি, মানববন্ধব ও বিক্ষোভ করে স্থানীয়রা।
তিনি আরো জানান, মানববন্ধন শেষে কাছারিবাড়ির সামনে দিয়ে আসার সময় হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। যেহেতু তারা মানববন্ধবনের আয়োজন করেছিল। সেহেতু দায় তাদেরই নিতে হবে। তবে হামলাকারীরা বহিরাগত ছিল বলে ধারণা করছেন সাংস্কৃতিক কর্মী হিমু।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আসলাম আলী জানান, গত রোববার ৮ জুন বিকেলে দর্শনার্থী শাহ নেওয়াজ রবীন্দ্র কাছরিবাড়িতে ঘুরতে যায়। এ সময় দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য নিয়ে টিকেট দিলেও মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের জন্য টাকা নিয়েও কোন টোকেন দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে শাহনেওয়াজের সঙ্গে কাছরিবাড়ির নিরাপত্তা কর্মীদের কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রবীন্দ্র কাছরিবাড়িতে নিরাপত্তা কর্মীরা দর্শনার্থীকে লাঞ্ছিত করে।
জানা গেছে, লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুরের দিকে শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে স্থানীয়রা। পরে বিক্ষোভ মিছিলটি শাহজাদপুরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে ঢুকে পড়ে। এ সময় রবীন্দ্র কাছারিবাড়ির কাস্টোডিয়ানের অফিস, লাইব্রেরি ও অডিটোরিয়ামের জানালা ও দরজা ভাঙচুর করে। এ সময় অডিটোরিয়াম, বিদ্যুৎ ও বাগান পরিচারক সিরাজুল ইসলামকে মারধর করে। খবর পেয় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রসঙ্গত, শাহজাদপুর উপজেলায় রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি। ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মাণ করা দোতলা ভবনটি এখন পরিচিত রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর নামে। ১৮৪০ সালে শাহজাদপুরের জমিদারি কিনে নেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। জমিদারির সঙ্গে তাদের মালিকানায় আসে কাছারি বাড়িটিও। শাহজাদপুর জমিদারি দেখাশোনার কাজে মাঝেমধ্যে এই বাড়িতে আসতেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৬৯ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাড়িটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে।