হান কাং ১৯৭০ সালের ২৭ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। “সিউল ইনস্টিটিউট আর্টস” এ তিনি দীর্ঘসময় ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর উপর শিক্ষকতা করেন। হান মূলত তার “দ্য ভেজিটেরিয়ান” বইটির জন্য আন্তর্জাতিক পরিচয় লাভ করেন। ২০১৬ সালে ফিকশন বিভাগে তার এই বইটি বুকার প্রাইজ পায়। ২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হান কাং যখন এই খবরটি নোবেল কমিটির কাছ থেকে পান, তখন তিনি কোরিয়ায় তার সিউলের বাড়িতে ছেলের সঙ্গে সদ্য রাতের খাবার শেষ করেছেন। এই সাক্ষাৎকারে, তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম সাহিত্য নোবেল বিজয়ী হিসেবে তার অনুভূতির কথা জানিয়েছেন।
১০ অক্টোবর সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ ঘোষণার পরপর নোবেল কমিটির তরফ থেকে জেনি রাইডেন মুঠোফোনে বিজয়ী কোরিয়ান সাহত্যিক হান কাং এর সাথে তার প্রথম প্রতিক্রিয়া জানতে কথা বলেন। সেই সাক্ষাৎকারের প্রতিলিপি বাংলায় তুলে ধরা হলো-
হান কাং: হ্যালো?
জেনি রাইডেন: হ্যালো, আমি কি হান কাং এর সাথে কথা বলছি?
হান কাং: জ্বি বলছি।
জেনি রাইডেন: শুভ দিন। আমার নাম জেনি রাইডেন। আমি নোবেল প্রাইজ কমিটি থেকে ফোন করছি।
হান কাং: ওহ, আপনার সাথে কথা বলতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
জেনি রাইডেন: আমারও খুব ভালো লাগছে। প্রথমেই আমার অভিনন্দন গ্রহণ করুন।
হান কাং: ধন্যবাদ, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
জেনি রাইডেন: এই মুহূর্তে আপনি কেমন অনুভব করছেন?
হান কাং: সত্যি বলতে আমি খুবই অবাক হয়েছি। এবং ভীষণ সম্মানিত বোধ করছি।
জেনি রাইডেন: আপনাকে যে এবছর সাহিত্যে নোবেল দেওয়া হয়েছে আপনি কীভাবে জানলেন?
হান কাং: আমাকে একজন ফোন করে এই খবরটি জানান। আমি অবশ্য খুবই অবাক হয়েছিলাম। কোরিয়াতে তখন রাত আটটা। আমি আমার ছেলের সঙ্গে মাত্রই রাতের খাবার শেষ করেছিলাম। এটা খুবই শান্তিপূর্ণ একটি সন্ধ্যা ছিল। খবরটা পেয়ে আমি যারপরনাই অবাক হয়েছিলাম।
জেনি রাইডেন: এখন কি আপনি সিউলে আপনার বাড়িতে আছেন?
হান কাং: জ্বি, আমি সিউলে আমার নিজের বাড়িতেই আছি।
জেনি রাইডেন: আজ আপনি কী করছিলেন?
হান কাং: আজ? আমি আজ কাজ করিনি। কিছুটা পড়েছি এবং একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। খুব সাদামাটা একটা দিন ছিল।
জেনি রাইডেন: আপনি বললেন আপনি আপনার ছেলের সঙ্গে আছেন। তার প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
হান কাং: আমার ছেলেও অবাক হয়েছিল। কিন্তু আমরা এনিয়ে কথা বলার এখনো তেমন সময় পাইনি। তবে আমরা দু’জনেই খুব বিস্মিত হয়েছিলাম, এটা সত্যি।
জেনি রাইডেন: জ্বি, আমি তা বুঝতে পারছি। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া আপনার জন্য কী অর্থ বহন করে?
হান কাং: আমি অনেক সম্মানিত এবং নোবেল প্রাইজ কমিটি যে আমাকে বাছাই করলো সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ।
জেনি রাইডেন: আপনি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রথম সাহিত্যের নোবেল পেলেন। এটা ভেবে কেমন লাগছে?
হান কাং: ছোট থেকেই আমি বইয়ের সঙ্গে বেড়ে উঠেছি। তাই আমার অনেক কোরিয়ার সাহিত্য এবং বিদেশি অনুবাদ করা বই পড়া হয়েছে। আমি মূলত কোরিয়ার সাহিত্যের সাথে বড় হয়েছি, যা আমার খুব কাছের। তাই আমি আশা করি এই প্রাপ্তি কোরিয়ার সাহিত্য পাঠকদের জন্য এবং আমার লেখক বন্ধুদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে।
জেনি রাইডেন: আপনি বললেন আপনি সাহিত্যিক পরিবেশ থেকে এসেছেন। কোন লেখকরা আপনার সবচেয়ে বড় প্রেরণার উৎস ছিলেন?
হান কাং: ছোটবেলা থেকে সব লেখকরাই সমানভাবে প্রেরণা জুগিয়েছেন আমাকে। তারা তাদের লেখনীতে জীবনের অর্থ খুঁজছিলেন। কখনও তারা পথ হারিয়েছেন, কখনও তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, এবং তাদের সব প্রচেষ্টা ও শক্তি আমার প্রেরণা ছিল। তাই আমার জন্য কোনো নির্দিষ্ট লেখকের নাম বলা কঠিন।
জেনি রাইডেন: আমি পড়েছি যে সুইডিশ লেখক আস্ট্রিড লিন্ডগ্রেন আপনার অন্যতম প্রেরণা ছিলেন?
হান কাং: জ্বি, যখন আমি শিশু ছিলাম, আমি তার লেখা বই “লায়নহার্ট ব্রাদার্স” খুব পছন্দ করতাম। তাই বলে আমি বলতে পারি না যে তিনি একমাত্র লেখক যিনি আমার শৈশবকে প্রভাবিত করেছেন। যখন আমি বইটি পড়ছিলাম, তখন আমি মানবতা, জীবন এবং মৃত্যু বিষয়ে আমার প্রশ্নগুলোর সঙ্গে এর সংযোগ ঘটাতে পারতাম।
জেনি রাইডেন: কেউ যদি আপনার কাজ আবিষ্কার করতে চায়, আপনি কোন বইটা থেকে পড়া শুরু করার পরামর্শ দেবেন?
হান কাং: আমার বইগুলোর মধ্যে? আমি মনে করি প্রতিটি লেখক তার সর্বশেষ রচিত বইটি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। তাই আমার সর্বশেষ বই “উই ডু নট পার্ট” বা এর আরেক নাম “আই ডু নট বিড ফেয়ারওয়েল” বা, “ইম্পসিবল গুডবাইজ”। আমি আশা করি এই বইটি একটি ভালো শুরু হতে পারে। এবং “হিউম্যান এক্ট্স” সরাসরি এই বইটির সঙ্গে সংযুক্ত, ফলে এটাও একসাথে পড়া যায়। তারপর “দ্য হোয়াই বুক” যা আমার খুব কাছের কারণ এটি অনেকটাই আত্মজীবনীমূলক। এবং অবশ্যই “দ্য ভেজিটেরিয়ান” এর কথাতো বলতেই হয়। তবে আমার মনে হয় শুরুটা “উই ডু নট পার্ট” দিয়ে হতে পারে।
জেনি রাইডেন: আন্তর্জাতিক পাঠকদের কাছে সম্ভবত “দ্য ভেজিটেরিয়ান” সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এই বিশেষ উপন্যাসটি আপনার জন্য কী অর্থ বহন করে?
হান কাং: বইটা আমি তিন বছর ধরে লিখেছিলাম, এবং সেই তিনটি বছর কিছু কারণে আমার জন্য কঠিন বছর ছিল। তাই আমি মনে করি আমি সেই নায়িকার চিত্র এবং তার চারপাশের মানুষের চিত্র, গাছ এবং সূর্যালোকের চিত্র বইটার মাঝে খুঁজে পাওয়ার জন্য লড়াই করছিলাম। সেই তিন বছরে সবকিছুই খুব জীবন্ত ছিল।
জেনি রাইডেন: আমি আর অল্প সময় নিব। আপনি কীভাবে এই নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির মুহূর্তটি উদযাপন করবেন?
হান কাং: এই ফোন কলের পর আমি চা খাব। আমি মদ্যপান করি না। আমি আমার ছেলের সঙ্গে চা খাব এবং আমি শান্তিপূর্ণভাবে এটি উদযাপন করব।
জেনি রাইডেন: খুব সুন্দর। আবারও অনেক অভিনন্দন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
হান কাং: ধন্যবাদ।
জেনি রাইডেন: ঠিক আছে। বিদায়।
হান ক্যাং: ভালো থাকবেন। বিদায়।
(নোবেল প্রাইজের ওয়েবসাইট থেকে সাক্ষাৎকারটি সংগৃহীত)