ত্বক শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ। স্বাস্থোজ্জ্বল স্বাভাবিক ত্বক আমাদের সবার কাম্য। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের দূষণ, বিরূপ আবহাওয়া, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অপর্যাপ্ত ঘুম, ধূমপান ইত্যাদির কারণে ত্বক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তবে এদের চেয়েও ত্বকের আরও বড় শত্রু রয়েছে। তা হলো সূর্য।
প্রতিদিন আমাদের ত্বক দুই ধরনের সূর্যরশ্মির মুখোমুখি হয়। ইউভি-এ ও ইউভি-বি রশ্মি। ইউভি-এ রশ্মি ত্বকের ভিতর পর্যন্ত প্রবেশ করে বিশেষ প্রোটিন কোলাজেনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। যার ফলে বলিরেখা, ফাইন লাইনের মতো সমস্যা দেয়া। অর্থাৎ ত্বকে বয়সের ছাপ বোঝা যায়। এদিকে ইউভি-বি রশ্মি সানবার্ন বা পোড়াত্বকের জন্য দায়ী। এই রশ্মির জন্য ত্বকের হাইপারপিগমেন্টেশন বা কালো দাগ হয়ে থাকে। অন্যদিকে দুই রশ্মিই ত্বকের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

সূর্যরশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে সুরক্ষা পেতে সানস্ক্রিনের কোন বিকল্প নেই। বাজারে মোট তিন ধরনের সানস্ক্রিন পাওয়া যায়। কেমিক্যাল ব্লকিং, ফিজিক্যাল ব্লকিং ও মিক্সড সানস্ক্রিন। কেমিক্যাল সানস্ক্রিনগুলো প্রথমে ইউভি রশ্মিকে ত্বকে শোষণ করে নেয় ও পরে ছেড়ে দেয়। এই ধরণের পণ্যের প্রধান একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট হলো অ্যাভোবেনজন, অক্সিবেনজন,অক্টিসালেট, অক্টোক্রাইলিন, হোমোসালেট ও অক্টিনোক্সেট। ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনকে মিনারেল সানস্ক্রিনও বলা হয়। ত্বকের ওপর বসে থাকে আর ইউভি রশ্মিকে প্রতিফলিত করে। এর প্রধান উপাদান জিঙ্ক অক্সাইড ও টাইটেনিয়াম ডাইঅক্সাইড।
আর আছে মিক্সড সানস্ক্রিন। এতে কেমিক্যাল ও মিনারেল সানস্ক্রিনের উপাদানগুলো এক সঙ্গে ফর্মুলেট করা থাকে। বর্তমানে এই ধরণের সানস্ক্রিনের জনপ্রিয়তা অনেক।
যেকোনো ধরনের সানস্ক্রিন কেনার আগে দেখতে হবে এটি ইউভি-এ ও ইউভি-বি রশ্মি থেকে ত্বককে কতটা সুরক্ষা দেয়। এই সুরক্ষা মানদন্ড হলো এসপিএফ, পিএ মিটার ও ব্রড স্পেকট্রাম। এসপিএফ ত্বককে ইউভি-বি রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়। ইউভি-এ রশ্মির জন্য আছে পিএ+, পিএ++, বা পিএ+++ অথবা ব্রড স্পেকট্রাম।
হুট করে যাচাই-বাছাই না করে ত্বকে সানস্ক্রিন বা সানব্লক লাগানো ঠিক নয়। অন্যান্য যেকোনো প্রসাধনীর মতো ত্বকের ধরন বুঝে এটি ব্যবহার করা উচিৎ।
বেশিরভাগ সময় দেখা যায় তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের সানস্ক্রিন ব্যবহারের পর ত্বকে অতিরিক্ত ঘাম হয়। তাই এ ধরনের ত্বকে জেল ও ম্যাটিফাইং সোয়েট-প্রুফ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিৎ। ক্রিম সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে চাইলে অয়েল-ফ্রি ফর্মুলা বেছে নিতে হবে।
ব্রণ-প্রবণ ত্বকে অয়েল-ফ্রি ফর্মুলার, নন-কমেডোজেনিক মিনারেল সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। সংবেদনশীল ত্বকের জন্যও মিনারেল অর্থাৎ জিঙ্ক অক্সাইড বা টাইটেনিয়াম ডাইঅক্সাইড সমৃদ্ধ, সুগন্ধ-মুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার উচিৎ।

শুষ্ক ত্বকে কেমিক্যাল বা মিক্সড সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যাবে। এই ক্ষেত্রে সেরামাইড, হায়ালুরোনিক এসিড, পেপটাইড আছে কিনা দেখে নিতে হবে। এই উপাদানগুলো ত্বক আর্দ্র রাখে।
মনে রাখতে হবে সানস্ক্রিন বছরের ৩৬৫দিন ব্যবহার করতে হবে। কারণ সূর্যের কোন ছুটি নেই। এমনকি মেঘলা দিনেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। ব্র্যান্ডভেদে সানস্ক্রিনের কার্যক্ষমতা দুই বা তিন ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। এই সময়সীমার পর পুনরায় এটি ব্যবহার করতে হবে।