বজ্রপাত হলো প্রকৃতির একটি বৈদ্যুতিক ঘটনা, যেখানে মেঘ থেকে মাটি বা অন্য মেঘের দিকে তীব্র বিদ্যুতের প্রবাহ ঘটে। এটি বর্তমানে বাংলাদেশে এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত উষ্ণতা বৃদ্ধি, বাতাসে সিসার পরিমাণ বাড়া, অধিক ধাতব পদার্থের ব্যবহারের কারণে প্রতিবছর বাড়ছে বজ্রপাত। এপ্রিল-জুন মাসে বজ্রপাত বেশি হয়। পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকার সাথে সাথে বজ্রপাতের আশঙ্কাও ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিক ধাতব পদার্থের ব্যবহার, মোবাইল ফোন ও টাওয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি, বনাঞ্চল কমে যাওয়া, জলাভূমি ভরাট, নদীর শুকিয়ে যাওয়াসহ এমন নানা কারণে বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
দেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০০ মানুষ মারা যাচ্ছে বজ্রপাতে। এদের ৭২ শতাংশই কৃষক। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, পুলিশ প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বজ্রপাতের মৌসুমকে সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বনের জন্য পরামর্শ দেওয়া হযেছে।
বজ্রপাতের সময় কিছু সতর্কতা ও করণীয় অনুসরণ করলে জীবন রক্ষা পেতে পারে। নিচে বজ্রপাতের সময় করণীয় বিষয়গুলো দেওয়া হলো:
১. ঘরের ভিতরে থাকুন: যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ কোনো ভবনের ভিতরে চলে যান। গাড়ির ভিতর থাকলে দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন। গাড়ি একটি নিরাপদ স্থান হতে পারে।
২. বিদ্যুৎ পরিবাহী জিনিস থেকে দূরে থাকুন: বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, টেলিভিশন, মোবাইল চার্জার, কম্পিউটার ইত্যাদি ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। টেলিফোন বা ল্যান্ডফোন ব্যবহার করবেন না (মোবাইল ব্যবহার করা নিরাপদ, তবে সেটি চার্জে দেওয়া অবস্থায় নয়)। ঘরের ভিতরে থাকলে জানালার কাছাকাছি ও বারান্দায় থাকবেননা।
৩. জলীয় স্থানে থাকবেন না: পুকুর, নদী, খাল বা জলাশয়ে গোসল করা বা মাছ ধরা এড়িয়ে চলুন। ভেজা মাটি বা কাদার উপর দাঁড়িয়ে থাকবেন না।
৪. খোলা জায়গা এড়িয়ে চলুন: খোলা মাঠ, ধানক্ষেত, খালি জমি, উঁচু পাহাড় বা খোলা রাস্তায় থাকবেন না।
৫. উঁচু ও ধাতব বস্তুর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন: টাওয়ার, বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছ, লোহার তৈরি বস্তু (যেমন: সাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা) থেকে দূরে থাকুন।
বজ্রপাতের সময় যেভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন। ছবি: রেডিট
৬. দলবদ্ধভাবে থাকবেন না: বজ্রপাতের সময় একসঙ্গে দাঁড়ালে ঝুঁকি বাড়ে। প্রত্যেকে আলাদা হয়ে নীচু হয়ে বসে পড়ুন। যেমন, পা জোড়া করে মাথা নিচু করে দুই হাত দিয়ে কান ঢেকে বসে থাকুন।
৭. পশু বা গৃহপালিত প্রাণীকে নিরাপদ স্থানে রাখুন: গরু, ছাগল ইত্যাদিকে গাছের নিচে বা খোলা মাঠে রাখা বিপজ্জনক হতে পারে।
৮. বজ্রপাতের সময় জরুরী প্রয়জনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করুন।
৯. কোনো বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে অবস্থান করুন।
১০. প্রতিটি ভবনে বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন।
বজ্রাহত ব্যক্তিকে কী করবেন:
১. অবিলম্বে CPR (হার্ট চালু করার কৌশল) প্রয়োগ করুন যদি হৃদস্পন্দন না থাকে।
২. যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যান।
