ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবির সুপ্রিয়া দেবী আমাদের অত্যন্ত প্রিয় একজন অভিনেত্রী। তার আসল নাম কৃষ্ণা বন্দোপাধ্যায়, ডাকনাম বেনু। আর পর্দায় আমরা তাকে চিনি সুপ্রিয়া দেবী নামে। তিনি ভারতের ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার ও পশ্চিম বংগের ‘বঙ্গভূষণ’ পুরস্কার পেয়েছেন। ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের নামকরা এই অভিনেত্রীকে তুলনা করা হতো হলিউড অভিনেত্রী সোফিয়া লরেনের সঙ্গে। সুপ্রিয়ার চাহনি, হাসি, ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সোফিয়ার মিল খুঁজে পেয়েছিলেন তার ভক্তরা। সাদাকালো পর্দায় তার সাবলীল উপস্থিতি খুব সহজেই দর্শকের মন কেড়ে নিতো।
ভারতের প্রখ্যাত পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ তার টক শো ‘ঘোষ এন্ড কোম্পানি’ এর এক পর্বে সুপ্রিয়া দেবীকে নিয়ে মজার একটি গল্প বলেন। তিনি বলেন, বেণুদি’র (সুপ্রিয়া দেবী) কাছে বম্বে থেকে প্রোডিউসার চমৎকার একটি সিনেমার অফার নিয়ে আসেন। এর জন্য বেণুদিকে কিছু শর্ত জুড়ে দেন প্রোডিউসার। তাকে নাচ শিখতে হবে, হিন্দি শিখতে হবে এবং রোগা হতে হবে। সব শর্তেই রাজি হলেন বেণুদি। চুক্তিপত্রে সাইন করার সময় জানলেন যে অক্টোবর মাস থেকে শুটিং শুরু। চুক্তি অনুযায়ী চেক দেওয়া হলো বেণুদিকে। এমন সময় বেণুদির খেয়াল হল তাঁকে মাস দুই আগে থেকে রোগা হতে হবে। অর্থাৎ খাওয়ার উপর স্বাভাবিকভাবেই বিধিনিষেধ চলে আসবে। হঠাৎ তিনি উঠে যেয়ে চেকটা এনে প্রোডিউসারকে ফেরত দেন। প্রোডিউসার তো অবাক! বেণুদি বললেন, ‘‘এটা রেখে দিন।‘’ একথা শুনে প্রোডিউসার কারণ জানতে চাইলে বেণুদি বলেন, ‘’শুনুন! জুলাই মাস, বর্ষাকাল, ইলিশ মাছ উঠবে। চারটে ভাত খাব না বছরে একবার ইলিশ দিয়ে! বাঙ্গালির মেয়ে!’’
যতই বাংলার সোফিয়া লরেন হন না কেন ঐ বাঙালি মেয়ের ইলিশ প্রীতিটাই হলো মূল কথা। বম্বে থেকে বাঙালি কোনো অভিনেত্রীর জন্য চলচ্চিত্রের অফার আসাটা কোনো ছোট ঘটনা নয়। অভিনেত্রী জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে একটি চলচ্চিত্র। এরসাথে আর্থিক প্রসঙ্গটিও গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সুপ্রিয়া দেবীর ইলিশের নানাপদ খাওয়ার বাসনার কাছে এসব নস্যি।
