সামাজিক দায়বদ্ধতা (কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি বা সিএসআর) খাতে ব্যাংকগুলোর ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে ব্যাংকগুলোর ব্যয় কমেছে প্রায় ৩৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য উঠে এসেছে। ছয় মাস পর পর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এতে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) ব্যাংকগুলো সিএসআর খাতে ব্যয় করেছিল এক হাজার ৮৫ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে খরচ করেছে ৬৬২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সিএসআরে ব্যাংকগুলোর ব্যয় কমেছে ৪২৩ কোটি টাকা।
ব্যাংকের বাইরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গেল অর্থ বছরে ৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। তার আগের বছর খরচ করেছিল ৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি বছরই তাদের মুনাফার অংশ থেকে সিএসআর খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে অনুদান দিয়ে থাকে।
আবার ব্যয়ের বেশিরভাগ অর্থ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে অন্যান্য খাতে খরচ করেছে। এ থেকে বোঝা যায়, ব্যাংকগুলোর অগ্রাধিকারের তালিকায় পরিবর্তন এসেছে অথবা আর্থিক সংকটের কারণে অনুদান কমিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি-জুন ২০২৪ ষাণ্মাসিকে দেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে অন্যান্য খাতে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১৬৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। হিসাব অনুযায়ী এই অঙ্ক মোট সিএসআর ব্যয়ের ৫৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকগুলো দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে স্বাস্থ্য খাতে। এ খাতে ব্যাংকগুলোর ব্যয় ৭১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। হিসাব অনুযায়ী মোট সিএসআর ব্যয়ের ২৩ দশমিক ২৮ শতাংশ এ খাতে ব্যয় করা হয়েছে। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকগুলো তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে শিক্ষা খাতে ৬৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। যা মোট সিএসআর ব্যয়ের ২০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। শিক্ষা খাতের ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংকগুলো থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানকল্পে সিএসআর ব্যয় করা হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ প্রদান এবং শিক্ষা খাতের অবকাঠামো উন্নয়নেও সিএসআর ব্যয় করা হয়েছে।
আরও উল্লেখ্য, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট তহবিলেও অনুদান প্রদান করেছে। পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন-অভিযোজন খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। যা মোট সিএসআর ব্যয়ের ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকৃত মুনাফার অংশ থেকেই সিএসআর খাতে ব্যয় করা হয়। নিয়ম মেনে কয়েকটি ব্যাংক অর্থ ব্যয় করলেও বেশিরভাগই পরিচালকদের ইচ্ছেমতো ব্যয় করে থাকে। এক্ষেত্রে পরিচালকদের এলাকা বেশি প্রাধান্য পায়।
২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে আটটি সিএসআর খাতে কোনো ব্যয় করতে পারেনি। সেগুলো হলো– বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স, কমিউনিটি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান।