Home সর্বশেষ আতঙ্কের নগরী তেহরানে জেন-জিদের যুদ্ধ মোকাবেলা

আতঙ্কের নগরী তেহরানে জেন-জিদের যুদ্ধ মোকাবেলা

ফাহমিদা শিকদার
৩২ views

তেহরানের রাস্তায় এখন কেবল আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার ছাপ। কারো হাতে স্যুটকেস, কারো কোলে ছোট্ট শিশু-সবাই ছুটছে কোথাও, যেখানে হয়তো একটু নিরাপদে থাকা যাবে। কেউ পাতাল রেলের দিকে দৌড়াচ্ছে, কেউ ট্রাফিক জ্যামের মাঝে রাত কাটাচ্ছে গাড়ির মধ্যে। অথচ গোটা শহরে নেই কোনো সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র, নেই আগাম কোনো সতর্কতা। তবে অবাক করা মতো হলেও সত্য যে, ভয় আর দুশ্চিন্তার এই নগরীতে একমাত্র আশ্রয় এখন ইন্টারনেট।

ইরানের তরুণ প্রজন্ম-বিশেষত ১৯৯৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া জেনারেশন জি-বড় হয়েছে সেন্সরশিপ, দমননীতি আর অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে। তবুও তারা নিজেদের জন্য গড়ে তুলেছে একটি ভার্চুয়াল পৃথিবী। প্রযুক্তির জগতে তারা মুক্ত, সাহসী, এবং একে অপরের পরম সঙ্গী।

মোমো, ২৪ বছর বয়সী আইটি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র, এখনও তেহরানেই আছে। শহরের চারপাশে যেখানে সন্দেহ, ভয়ের পরিবেশ, সেখানে সে কেন থাকছে? মোমো জানায়, “আমার বাড়িটাই আমার জীবন। এই শহরই আমার ঠিকানা।” শুধু নিজের জন্য নয়, বরং তার রাস্তা থেকে উদ্ধার করা দুই বছরের বিড়ালের কারণেও সে শহর ছাড়েনি।

ডিসকর্ড-যেখানে একসময় মোমো গেম খেলার সময় বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করত, এখন সেই অ্যাপ তার ‘দ্বিতীয় ঘর’। সে বলে, “এখানে আমরা শুধু আড্ডা দিই না, একসাথে সিনেমা দেখি, হাসি-কান্না ভাগ করে নিই, মাঝেমধ্যে ঘুমিয়েও পড়ি একসাথে- অনলাইন।”

2869378

বিদ্রোহ ঠেকাতে বিভিন্ন অ্যাপ বন্ধ করলেও তরুণেরা কোন না কোন উপায়ে বিকল্প ব্যবস্থা বের করে ফেলে, ছবি: দ্যা স্টার

সরকার ২০২৪ সালের এপ্রিলে ‘অশ্লীলতা’র অজুহাতে ডিসকর্ড বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সবাই জানে, এটি ছিল তরুণদের সংগঠিত হওয়ার পথ রুদ্ধ করার চেষ্টা। বন্ধ করা সত্ত্বেও তরুণেরা থেমে থাকেনি। ভিপিএন আর বিকল্প লিঙ্ক দিয়ে তারা আবারও ফিরে এসেছে তাদের ডিজিটাল নিরাপদ আশ্রয়ে।

২৩ বছর বয়সী সামিন বলেন, “গেম খেলছিলাম, হঠাৎ বাইরে বিস্ফোরণের শব্দ। প্রথমে বুঝতেই পারিনি এটা গেমের আওয়াজ, না কি সত্যিকারের বোমা।” ভার্চুয়াল বন্ধুরা কেউ কাউকে চেনে না, অনেকের সঙ্গে দেখা হয়নি কখনো। তবুও তারা একসাথে জন্মদিন পালন করে, কান্না শোনে, বোমার শব্দ ভাগ করে নেয়।

এমনই এক পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া অনলাইন গ্রুপ “ইয়োগা ফর প্রেগন্যান্সি”-যেখানে আগে গর্ভবতী নারীরা যোগব্যায়াম করতেন, এখন তা এক ধরনের যুদ্ধকালীন সহায়তা কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে।

জোহরেহ, যিনি সন্তান জন্ম দিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইরান ফিরেছিলেন, বলেন, “আমি তখন আট মাসের গর্ভবতী। এক রাতে বিস্ফোরণের শব্দে আমার কনট্রাকশনস শুরু হয়। তখন গ্রুপের বন্ধুরা নিঃশ্বাস কন্ট্রোল, গান চালানো, হালকা ইয়োগার মতো উপদেশ দেয়।”

তেহরানে যখন বোমা পড়ে, বিদ্যুৎ চলে যায়, সরকার নিশ্চুপ— তখন জেনারেশন-জি একে অপরের খোঁজ রাখে। তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে অন্তর্জালে তৈরি করেছে সাহস, বন্ধুত্ব আর মানবিকতার অদৃশ্য কিন্তু শক্তিশালী সংযোগ। এ সংযোগ কেবল প্রযুক্তির না, এটি এক ধরনের প্রতিরোধ যেখানে; এই দুর্যোগের সময় তরুণেরা নিজেদের একাকিত্বতে অস্বীকার করার শক্তি পায়।

 

 

 

 

 

 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুন

Hello Bangladesh

বাংলাদেশের একটি অন্যতম অনলাইন সংবাদ পোর্টাল হ্যালো বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে যাত্রা শুরু করা ‘হ্যালো বাংলাদেশ’ সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে কনটেন্ট প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা দেশ বিদেশের সংবাদ, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, ইতিহাস, বিনোদন এবং উদ্ভাবনসহ নানা বিষয়ে প্রতিদিনের আপডেট আপনাদের কাছে পৌঁছে দিতে সদা প্রস্তুত।

Edtior's Picks

Latest Articles

u০০a৯২০২২u০০a০Soledad.u০০a০All Right Reserved. Designed and Developed byu০০a০Penci Design.