কয়েক মাস ধরে বেশ অস্থিরতা বিরাজ করছে দেশের সোনার বাজারে। দাম বাড়ার পরদিন আবার কমে যায়। তার পরদিন আবার বেড়ে যায়। গত এপ্রিলে রেকর্ড ১২ বার ওঠানামা করেছে সোনার দর। সর্বশেষ গত আগস্ট মাসে চারবার বেড়েছে মূল্যবান ধাতুটির দাম। দামের এমন ঘন ঘন উত্থান-পতনে বেশ বিভ্রান্তিতে পড়েছেন স্বর্ণালংকারের ক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে বড় উত্থান-পতন ডলারের দরকে প্রভাবিত করেছে। যার প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। অন্যদিকে যখনই বিশ্ব অর্থনীতিতে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দেয় তখনই এর সরাসরি প্রভাব পড়ে সোনার বাজারে। কারণ বিনিয়োগের নিরাপদ গন্তব্য এ খনিজ ধাতু। তা ছাড়া জুয়েলারি পণ্য হলো গহনা, যার কাঁচামাল বুলিয়ন বিক্রেতাদের কাছ থেকে কেনা হয়। তারা আন্তর্জাতিক বাজারের দাম অনুসরণ করেন। ফলে বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে সোনার দাম বাড়ে বা কমে।
বিশ্বব্যাপী সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করে ধাতুটির দাম বাড়া বা কমা। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র প্রচুর পরিমাণে সোনার রিজার্ভ রাখে। তাদের এই রিজার্ভের একটা প্রভাব থাকে সোনার বাজারে। তা ছাড়া যখন ডলারের সংকট বা দাম বাড়ে তখন সোনার বাজারও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এসব যুক্তি যথার্থ বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরাও।

২২ ক্যারেটের প্রতিভরি ১ লাখ ২৬ হাজার ৩২১ টাকা । ছবি: পিক্সেল.কম
গহনাপ্রেমী ক্রেতারা বলছেন, অস্বাভাবিক দামের কারণে এমনিতেই সোনার গহনা ক্রয়ে দশবার চিন্তা করতে হয়। এর মধ্যে সকালে এক দর, বিকেলে আরেক দর। এমন পরস্থিতিতে গহনা কেনা এখন দুরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে গহনা কেনার শখকে লালন করা থেকে বিরত না থেকে উপায় নেই। আবার কারও কারও অভিযোগ, বিশ্ববাজারের দোহাই দিলেও অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সোনার ভরিতে দামে ফারাক থাকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
রেকর্ড দাম হওয়ার পর দেশের বাজারে সোনার দাম গতকাল রোববার কিছুটা কমানো হয়েছে। সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ১ হাজার ৬২১ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ২৬ হাজার ৩২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম কমার প্রেক্ষিতে এই দাম কমানো হয়েছে। আজ সোমবার থেকে নতুন দাম কার্যকর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে সোনার দাম বাড়ে বা কমে। ছবি: পিক্সেল.কম
নতুন মূল্য অনুযায়ী, সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৬২১ টাকা কমিয়ে এক লাখ ২৬ হাজার ৩২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৫৪০ টাকা কমিয়ে এক লাখ ২০ হাজার ৫৮২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৩২৯ টাকা কমিয়ে এক লাখ ৩ হাজার ৩৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৯৭ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ হাজার ৪৫০ টাকা।