গত আগস্টে দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে ৪০ কোটি ৫২ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এনেছে ট্রাস্ট ব্যাংক। ব্যাংকটির মাধ্যমে ২৯ কোটি ৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। ২০ কোটি ৬৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আনার মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক উঠে এসেছে তৃতীয় স্থানে। চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছে যথাক্রমে জনতা ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ১৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৬৫ লাখ ডলার দেশে এসেছে । এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ছাড়া বাকি চারটি ব্যাংকেই আগস্টে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সামগ্রিকভাবে আগস্টে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে উল্লম্ফন ঘটেছে। গত মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২২২ কোটি ১৩ লাখ ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রবাসীদের পাঠানো এ অর্থের পরিমাণ ২৬ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে)। ২০২৩ সালের আগস্টে দেশে মাত্র ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। সে হিসাবে গত মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৩৯ শতাংশ।
দেশে জুলাইয়ে ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে ৮ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। কিন্তু গত মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে ২৯ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটির রেমিট্যান্স আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪৩ শতাংশ। এ প্রবৃদ্ধি ট্রাস্ট ব্যাংককে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণের দ্বিতীয় স্থানে তুলে এনেছে। এর আগে কখনো ব্যাংকটির মাধ্যমে এত রেমিট্যান্স দেশে আসতে দেখা যায়নি।

বিপরীত চিত্র দেখা গেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ক্ষেত্রে। দেশের মোট রেমিট্যান্স প্রবাহের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি আসত ব্যাংকটির মাধ্যমে। কিন্তু আগস্টে রেমিট্যান্সে ইসলামী ব্যাংকের এ হিস্যা ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে। জুলাইয়েও দেশের সবচেয়ে বড় এ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে ৪৫ কোটি ডলার। আগস্টে তা আরো কমে ঠেকেছে ৪০ কোটি ডলারে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধ ও তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকটির মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী অর্থ লেনদেন করা যায়নি। এ কারণে বিশ্বের বৃহৎ রেমিট্যান্স হাউজগুলো ব্যাংকটির কাছে রেমিট্যান্সের ডলার বিক্রি কমিয়ে দিয়েছিল। ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে যেসব রেমিট্যান্স দেশে আসত, তার একটি অংশ ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংকসহ অন্য ব্যাংকগুলোয় চলে গেছে।
ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত ১১ আগস্টের পর এক সপ্তাহ রেমিট্যান্স প্রবাহ কমলেও মাসের শেষ দিকে তা আবারো স্বাভাবিক হয়ে আসে। পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের পর ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার পাশাপাশি আমানতের প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আগস্টের প্রথম তিনদিন দেশে রেমিট্যান্স আসে মাত্র ৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ ওই সময় প্রতিদিন মাত্র ৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর পর থেকে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যায়। ৪ থেকে ১০ আগস্ট প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার। ১১ থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত আসে ৬৫ কোটি ১৪ লাখ ডলার। ১৮ থেকে ৩১ আগস্ট প্রবাসীরা পাঠান ১০৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিটেন্স কমেছিল। ওই মাসে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে যা ছিল ৭২৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ (২.৫৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ ডলার; টাকার হিসাবে দৈনিক রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল এক হাজার কোটি টাকা।
একক মাসের হিসাবে জুন মাসের রেমিটেন্স ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৬০ কোটি (২.৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। গত বছরের জুনের চেয়ে এই বছরের জুনে ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।