Home বাণিজ্য স্বর্ণে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় নজর রাখতে হবে

স্বর্ণে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় নজর রাখতে হবে

ইকবাল হোসেন
১১৫ views

স্বর্ণকে বলা হয় অর্থের সবচেয়ে স্থায়ী রূপ। হাজার বছর ধরে মূল্যবান এই ধাতুর চোখ ধাঁধানো ঔজ্জ্বল্য, দীপ্তি আর চাকচিক্য মানুষকে অভিভূত করে চলেছে। হয়তো সে কারণেই এর মূল্য কখনও শূন্যে নামেনি। বরং দিন যতো যাচ্ছে, ততোই বাড়ছে এর মূল্য। বৈশ্বিক ও জাতীয় অনিশ্চয়তার মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হচ্ছে স্বর্ণ।স্বর্ণকে বলা হয় অর্থের সবচেয়ে স্থায়ী রূপ। হাজার বছর ধরে মূল্যবান এই ধাতুর চোখ ধাঁধানো ঔজ্জ্বল্য, দীপ্তি আর চাকচিক্য মানুষকে অভিভূত করে চলেছে। হয়তো সে কারণেই এর মূল্য কখনও শূন্যে নামেনি। বরং দিন যতো যাচ্ছে, ততোই বাড়ছে এর মূল্য। বৈশ্বিক ও জাতীয় অনিশ্চয়তার মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হচ্ছে স্বর্ণ।

দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম প্রতিনিয়ত  বাড়ছে। স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে স্বর্ণের দাম ৮৪৪ গুণ বেড়েছে। ১৯৭১ সালে স্বর্ণের ভরি ছিল ১৭০ টাকা। গত ৩১ অক্টোবর ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম উঠেছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫২৬ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। বর্তমানে দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২২৭ টাকায়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩০ হাজার ৯৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি এক লাখ ১২ হাজার ২৮৯ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯২ হাজার ১৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

স্বর্ণের দামের সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) জানিয়েছে, বিশ্ববাজারে ঘণ্টায় ঘণ্টায় স্বর্ণের দাম ওঠানামা করায় দেশের বাজারে ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে বা ২-১ দিনের ব্যবধানে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। 

বিশ্ববাজারেও ওঠানামার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে স্বর্ণের দাম। গত এক মাসে স্বর্ণের দাম নিম্নমুখী থাকলেও বর্তমানে ফের ঊর্ধ্বমুখী। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মূল্যের ওঠানামা, তেলের দাম বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা সংকটের কারণে স্বর্ণের দাম ওঠানামা করে। সিএনএন জানায়, ২০২৪ সালে সোনার দাম ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। গত মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৭৪৮ ডলারে উঠেছে। ফলে দেখা যায়, এ বছর সোনার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে একের পর এক রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে।

 

সোনার দাম কমেছে

বর্তমানে দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২২৭ টাকায়। ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ

 

স্বর্ণ কেন নিরাপদ বিনিয়োগ?
অনিশ্চয়তার মধ্যে ক্রেতারা সাধারণত সোনার বাজারে ছোটেন। তারা মনে করেন, অর্থনীতির অবস্থা খারাপ হলে শেয়ার, বন্ড কিংবা মুদ্রার চেয়ে সোনার দাম মোটামুটি স্থিতিশীল থাকবে। মার্কিন ব্যুরো অব লেবারের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০০৮ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে সোনার দাম নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। বৃদ্ধির হার ছিল ১০১ শতাংশের বেশি।

দিন দিন স্বর্ণের অলংকার অনেকেরই ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের গহনা বিক্রি কমেছে। তবে যারা স্বর্ণকে নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করেন, তাদের কাছে এর চাহিদা বেড়েছে। কারণ, স্বর্ণ তেল ও গ্যাসের মতো শেষ হয়ে যায় না। নানা হাত ঘুরে তা শেষ পর্যন্ত পৃথিবীতেই থাকে। তাই স্বর্ণের স্থায়িত্ব আছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু মানুষ নিরাপদ ভেবে স্বর্ণে বিনিয়োগ করে যান। স্বল্প আয়ের মানুষজনের কাছে স্বর্ণে বিনিয়োগের আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, স্বর্ণের দাম বাড়লে বা কমলে তাতে আকাশ-পাতাল ফারাক হয় না। তাই স্বর্ণের বাজারের অস্থিরতা স্বত্বেও এখনও ভরসার আরেক নাম স্বর্ণ।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অর্থনীতিবিদ  অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন,  এটি এমন এক বিনিয়োগ যা কিনলে ও জমিয়ে রাখলে বড় ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না। তাই স্বর্ণ হয়ে ওঠে বিপদের বন্ধু। 

তিনি বলেন, স্বর্ণে বিনিয়োগের আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, স্বর্ণের দাম বাড়লে বা কমলে তাতে আকাশ-পাতাল ফারাক হয় না। ফলে এটি ঝুঁকিমুক্ত।

 

gb

ছবি: ফ্রীপিক

 

বিনেয়োগের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে
নতুন ক্রেতার জন্য মূল বিবেচ্য, তিনি আসলে কেন সোনা কিনতে চান। মার্কিন বাজার বিশ্লেষক জোসেফ কাভাটোনির জিজ্ঞাসা হলো, তিনি কি বিনিয়োগ বহুমুখী করতে চান নাকি নিরাপদ বিনিয়োগ করতে চান। এরপরের বিবেচ্য হলো, বিনিয়োগকারী কি সোনাভিত্তিক কোনো আর্থিক পণ্যে বিনিয়োগ করবেন, নাকি তিনি ধাতু হিসেবে সোনা কিনতে চান।

ধাতু হিসেবে সোনা কিনলে কিছু বিষয় তখন বিবেচনায় নিতে হবে। সোনা কীভাবে সরবরাহ করা হবে, কোথায় রাখা হবে—এসব বিষয়। আরেকটি বিবেচনার বিষয় হলো, খুচরা বাজার থেকে সোনা কিনলে তার গায়ে লেখা দামের সঙ্গে স্পট মার্কেটে সোনার দামে পার্থক্য কী, সেটা জানা।

এখানেই শেষ নয়। একজন বিনিয়োগকারীকে জানতে হয়, তিনি যে সোনা কিনছেন, তা কতটা খাঁটি এবং এই সোনা কোথা থেকে এসেছে। সোনার অলংকার হলে তার দাম অনেক ক্ষেত্রে নির্ভর করে ডিজাইন এবং তা শিল্পগুণসম্পন্ন কি না, তার ওপর। এই দুই কারণে সোনার দাম অনেকটাই বেড়ে যায়।

অন্যদিকে সোনাভিত্তিক আর্থিক পণ্য এসব বিবেচনা থেকে একজন বিনিয়োগকারীকে মুক্তি দেয়। জোসেফ কাভাটোনির কথায়, ‘এটা অনেকটা শেয়ার কেনার মতো। এখন অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে, যেখানে আপনি কমিশন ছাড়াই এগুলো কিনতে পারবেন। সুতরাং এই বিনিয়োগে আপনি খুব কম অর্থ খরচ করেই ঢুকতে পারেন বা বের হতে পারেন।’

 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ