ইরানের আর্থিক সামর্থ্যের পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এর প্রাকৃতিক সম্পদ। যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ইরান ছিল গ্যাসের দিক থেকে দ্বিতীয় এবং তেলের দিক থেকে তৃতীয় বৃহত্তম মজুদদার দেশ। ইরান প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল এবং খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। গোল্ডম্যান স্যাক্সের প্রতিবেদন অনুসারে ইরানের একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থনীতির দেশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
হরমুজ প্রণালী: কৌশলগত গুরুত্ব
হরমুজ প্রণালী, যা ৩৪ কিলোমিটার প্রশস্ত, বিশ্বের ২১ শতাংশ তেলের সরবরাহের পথ। যদিও ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তবুও আমেরিকা মাঝে মাঝে তাদের জ্বালানি কিনে থাকে। গত চার বছরে, কিছু পরিমাণ তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্য আমেরিকা ইরান থেকে সংগ্রহ করেছে।
বাণিজ্যের বৈচিত্র্য
ইরান শুধু জ্বালানি নয়, বরং খাদ্যদ্রব্য, অস্ত্র, সিমেন্ট, রাসায়নিক পদার্থ, এবং বিভিন্ন ধাতব পণ্যও রপ্তানি করে। খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে ইরানের আপেল, গম, যব এবং অন্যান্য কৃষি পণ্য বিশ্ববাজারে পরিচিত। ইরানের বিভিন্ন পণ্য, বিশেষত কার্পেট ও হস্তশিল্প, বিশ্বব্যাপী চাহিদা অর্জন করেছে।

ছবি: ফ্রিপিক
বার্টার ও আঞ্চলিক বাণিজ্য
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থেকেও ইরান আনঅফিসিয়াল বাণিজ্যের মাধ্যমে আঞ্চলিক বাজার ধরে রেখেছে। বার্টার, হুন্ডি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে তারা আফগানিস্তান, সিরিয়া, তুরস্ক, চীন ও রাশিয়াতে ব্যবসা করছে।
ভৌগলিক অবস্থান
ইরান ভৌগলিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি অবস্থানে রয়েছে, যা এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের সংযোগ তৈরি করে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের জনগণের ওপর চাপ আসলেও, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো দেশটিকে স্বনির্ভর হতে এবং বিকল্প উন্নয়ন পথ তৈরি করতে সাহায্য করেছে।
নেতৃত্বের প্রভাব
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনির নেতৃত্বে দেশটির সামরিক শক্তি ও বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিকাশ ঘটেছে। খামেনির নেতৃত্বে জনগণের মধ্যে একনায়কতন্ত্রের প্রতি কিছুটা অসন্তোষ থাকলেও, তারা তা দেশের স্বার্থে গ্রহণ করে।
উপসংহার
এই সব কিছু মিলে ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করেছে। যদিও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এখনও বিরাজমান, ইরান তার সামর্থ্য বৃদ্ধি করতে কাজ করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তনের সাথে সাথে ইরানের সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
বিবিসি ও আল জাজিরা