Home বিশ্ব মৃত্যু, ক্ষুধা আর ধ্বংসস্তূপের নগরী গাজা

মৃত্যু, ক্ষুধা আর ধ্বংসস্তূপের নগরী গাজা

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৩৪ views

ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের এক বছর হলো আজ। তেলআবিবে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর গাজায় পাল্টা বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। হামাসের হামলায় ১২শ ইসরায়েলি প্রাণ হারালেও ওইদিন থেকে গত এক বছরে ৪২ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। তাদের এ হত্যাযজ্ঞ এখনও চলছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, ভোর সাড়ে ৬টা। ইসরায়েলজুড়ে একের পর এক রকেট নিক্ষেপ করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। মাত্র ২০ মিনিটে আয়রন ডোমকে পাশ কাটিয়ে কয়েক হাজার রকেট ছোড়ে সংগঠনটি। এরপর জল, স্থল ও আকাশপথে দখলদার রাষ্ট্রের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ঢুকে পড়ে হামাস যোদ্ধারা। প্রথমেই কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায় তারা। বেশ কয়েকটি বসতির নিয়ন্ত্রণের দাবিও করে।

ইসরায়েলে হামাসের কয়েক ঘণ্টার ওই অভিযানে প্রাণ হারান প্রায় ১২শ মানুষ। নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে গাজায় ফেরত চলে যায় হামাস যোদ্ধারা, সঙ্গে জিম্মি হিসেবে নিয়ে যায় প্রায় ৩শ জনকে। গাজার নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠীটি সেই সামরিক অভিযানের নাম দেয় অপারেশন আল আকসা ফ্লাড। অতর্কিত এ আক্রমণের ধাক্কা কাটিয়ে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাতে খুব বেশি সময় নেয়নি ইসরায়েল।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাৎক্ষণিক যুদ্ধের ঘোষণা দেন। গাজায় হামাসবিরোধী অভিযানের নামে শুরু হয় বোমা বর্ষণ। অবরুদ্ধ অঞ্চলটির ওপর সম্পূর্ণ অবরোধ জারি করে নেতানিয়াহু প্রশাসন। বিদ্যুৎ, পানি, খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়ে নিরীহ ফিলিস্তিনিরা।

ওইদিনই হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়ে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা। সব ধরনের সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়। অন্যদিকে, সাধারণ ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয় ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মিত্ররা। গাজা যুদ্ধের মধ্যে অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ধরপাকড় বাড়ায় ইসরায়েল। সেখানে এক বছরে ১১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় এক লাখ মানুষ। তথ্য বলছে, নিহতদের মধ্যে ১৬ হাজারের বেশি ‍শিশু। নিখোঁজ হয়েছেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ।  ভবনের ধ্বংসস্তূপে তাদের প্রাণনাশ হয়। ৩০৬ জন মানবিক সহায়তাকর্মী ও ৯ শতাধিক চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন উপত্যকায়।

গাজা

গাজা যুদ্ধের এক বছর পরও সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে। ছবি: এনবিসি নিউজ

গাজায় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১৯ লাখের বেশি, যা উপত্যকাটির মোট বাসিন্দার ৯০ শতাংশ। মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশি বিপর্যয়কর খাদ্যসংকটের মধ্যে রয়েছে। এক বছরে গাজার ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। আনুমানিক ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৯১টি আবাসিক ইউনিট ধ্বংস হয়েছে। উপত্যকার ৬৮ শতাংশ সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে ১৯টি বন্ধ হয়ে গেছে; আরও ১৭টি চলছে খুঁড়িয়ে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত সেপ্টেম্বরে বলেন, তিনি এমন হারে মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ আর কখনও দেখেননি।

এদিকে চলমান গাজা যুদ্ধের মধ্যেই ইসরায়েল-লেবানন সংঘাত ও ইরানের সঙ্গেও ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করছে, যা যেকোনো সময় সরাসরি যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ১ বছরে যুদ্ধ ও উত্তেজনা ছড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যেও

ফিলিস্তিনে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল এক বছর আগে, ধীরে ধীরে তা বিস্তৃতি লাভ করছে। গত শনিবার রাতে ইসরায়েলের ভয়ংকর হামলার সাক্ষী হলো লেবানন। এদিকে গাজায়ও হামলা এখনো চলছে। এরই মধ্যে সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলা, তেহরানে অভিযান চালিয়ে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। পাল্টা জবাবে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান।

গাজায় হামলার প্রতিবাদে হামাসের সমর্থনে লোহিতসাগর ও ইসরায়েলে মাঝেমধ্যেই হামলা চালাচ্ছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। তাদের দমনে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশের বাহিনী। সম্প্রতি সিরিয়ায়ও হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ইসরায়েল শুরু করেছিল, সেই যুদ্ধকে ঘিরে অশান্ত হয়ে উঠেছে পুরো মধ্যপ্রাচ্য। এই পরিস্থিতিতে লেবানন ও গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিভিন্ন দেশে গতকাল রোববার বিক্ষোভ হয়েছে।

ইসরায়েলে বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে গত শনিবার এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় হামলা শুরুর এক বছরের মাথায় ইসরায়েল এখন সাতটি ফ্রন্টে লড়াই করছে। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল এখন সভ্যতার শত্রুদের বিরুদ্ধে সাতটি ফ্রন্টে আত্মরক্ষা করছে।

এর মধ্যে রয়েছে উত্তরে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ, গাজার হামাস, ইয়েমেনের হুতি, পশ্চিম তীরে সন্ত্রাসী এবং ইরাক ও সিরিয়ার শিয়া মিলিশিয়ারা। আর এই সব ফ্রন্টের নেপথ্যে রয়েছে ইরান। গত সপ্তাহে তারা সরাসরি ইসরায়েলে ২০০ টির বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।’

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইরান যে মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, বিশ্বের অন্য কোনো দেশ তাদের ভূখণ্ড ও জনগণের ওপর এই মাত্রার হামলা বরদাশত করবে না, ইসরায়েলও না। নিজের ভূখণ্ড ও নাগরিকদের রক্ষা করা শুধু অধিকারই নয়, বরং এটি ইসরায়েলের দায়িত্ব। নিশ্চিতভাবেই সেই দায়িত্ব পালন করা হবে।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ