বিশ্ব রাজনীতির কোনো অঘটন বা সামরিক হস্তক্ষেপ ঘটার আগেই যদি তার পূর্বাভাস পাওয়া যেত? তবে দারুণ হত। আশ্চর্য হলেও সত্য একদল বিশ্লেষকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি পেন্টাগনের আশপাশে পিৎজার বিক্রির আচমকা বৃদ্ধি এমনই এক পূর্বাভাস হিসেবে কাজ করে!
এই অবস্থার দুইটি নামও দেওয়া হয়েছে। ‘পিৎজা মিটার’ বা ‘পেন্টাগন পিৎজা ইনডেক্স’। ধারণাটি প্রথম নজরে আসে যখন ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের আগে পেন্টাগনের আশপাশে পিজ্জা জয়েন্টগুলোতে রাতের বেলায় হঠাৎ প্রচুর পিৎজা অর্ডার করা হয়। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে, ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পর, ২০০৩ সালের ইরাক আক্রমণের ঠিক আগে এবং আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলার সময়েও।
গবেষকরা লক্ষ্য করেন, যতবার যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের সামরিক পদক্ষেপের দিকে এগোয়, ততবারই পেন্টাগনের কর্মীরা অতিরিক্ত সময় অফিসে থাকেন। ফলে দ্রুত ও সহজ খাবার হিসেবে পিৎজার চাহিদা বেড়ে যায়।
এই ধারাবাহিকতা থেকে ‘পিৎজা’ মিটার’ নামক একটি অনানুষ্ঠানিক সূচক গড়ে ওঠে। যা নিরীক্ষণ করে বোঝার চেষ্টা করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো গোপনে কোনো বড় সামরিক সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। পেন্টাগন পিৎজা রিপোর্ট নামে সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক এক্স অ্যাকাউন্ট আছে, যা পেন্টাগনের কাছে পিৎজা স্পটগুলিতে রিয়েল-টাইম পায়ে হেঁটে যাতায়াতের অবস্থা ট্র্যাক করে। এটি সরকারি ভবনে দেরি করে কাজ করা কর্মকর্তাদের অবস্থান জানান দেয়, যা সম্ভাব্য সংঘাতের ইঙ্গিত হিসেবে ধরে নেয়।
সম্প্রতি ইসরায়েল ইরানে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে পেন্টাগন পিৎজা রিপোর্ট পেন্টাগনের খুব কাছে চারটি পিৎজা জয়েন্টে অর্ডার বেড়ে যাওয়া নিয়ে একটি পোস্ট শেয়ার করে। আবার যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণের এক ঘণ্টা আগে একই অবস্থা লক্ষ্য করা যায়।
তবে এটিকে একেবারে ‘নির্ভুল পূর্বাভাস’ ভাবার সুযোগ নেই। কখনো কখনো এ বাড়তি অর্ডার হতে পারে প্রশিক্ষণ মহড়া, নিরাপত্তা চর্চা বা ভিন্ন কোনো কারণে। তবুও পিজ্জার অর্ডার কখন যে কূটনৈতিক বা সামরিক অস্থিরতার ‘সিগন্যাল’ হয়ে ওঠে তা পেন্টাগনের ইতিহাস জানে।
এই মজার কিন্তু গভীর বিশ্লেষণ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়- আধুনিক গোয়েন্দা বিশ্লেষণ শুধু গোপন তথ্য নয়, বরং অত্যন্ত সাধারণ ঘটনার মধ্যেও অসাধারণ সূত্র খুঁজে পেতে সক্ষম। আর কখনো কখনো তা লুকিয়ে থাকে এক টুকরো গলানো চিজ আর পেপারনির নিচে!
সূত্র : ফক্স নিউজ ও ইউরো নিউজ
