বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকের অংশ শাপলা। এটি রয়েছে জাতীয় প্রতীকের আইনগত সংজ্ঞায়। তবু নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ‘শাপলা’ ফুলকে তাদের নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে চেয়েছে। এমন দাবিকে কেন্দ্র করে নতুন প্রশ্ন উঠেছে-একটি জাতীয় প্রতীক বা প্রতীকের অংশ কি রাজনৈতিক দলের প্রতীক হতে পারে?
নির্বাচন কমিশনে ২২ এপ্রিল নিবন্ধনের আবেদন জমা দিয়েছে এনসিপি। দলটি প্রথম পছন্দ হিসেবে চেয়েছে শাপলা, পাশাপাশি রেখেছে কলম ও মোবাইল চিহ্ন। এনসিপির নেতাদের মতে, শাপলা জনতার প্রতীক, গণঅভ্যুত্থানের প্রতীক, এমনকি গ্রামীণ বাংলার সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত এক পরিচিত চিহ্ন।
ইসির প্রতীকের তালিকায় নেই শাপলা
২০০৮ সালে সংশোধিত নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় মোট ৬৪টি প্রতীকের অনুমোদন রয়েছে। সেখানে রয়েছে আম, কাঁঠাল, কাস্তে, লাঙল, ঘড়ি, সাইকেল, খাট ইত্যাদি বহু পরিচিত প্রতীক, কিন্তু নেই শাপলা।
ইসির (নির্বাচন কমিশন) এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান তালিকায় শাপলা নেই, সুতরাং এটি পেতে হলে কমিশনের পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত ও আইনগত পর্যালোচনা দরকার।
নাগরিক ঐক্যও চেয়েছিল ‘শাপলা’
এনসিপির আগে ২০২৪ সালের জুনে নিবন্ধনের সময় প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’কে চেয়েছিলো নাগরিক ঐক্য। তখন তাদের দেয়া হয়েছিল ‘কেটলি’। গত সপ্তাহে ‘কেটলি’ প্রতীক বাদ দিয়ে আবারও শাপলা চেয়ে আবেদন করে দলটি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন নাগরিক ঐক্যকে জানিয়ে দেয়, শাপলা জাতীয় প্রতীক হওয়ায় সেটি বরাদ্দযোগ্য নয়। বরং তারা দলটিকে অন্য প্রতীক বেছে নিতে বলে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে এনসিপির দাবি অনেকের কাছেই বিস্ময়কর। কারণ একই প্রতীক দুই দল চাইলে, এবং তা আবার জাতীয় প্রতীক হলে, নির্বাচন কমিশনের অবস্থান একরকম হওয়ার কথা।
এ বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, ‘যেহেতু জাতীয় প্রতীক হওয়ায় শাপলা আমাদের দেয়া হয়নি। সেহেতু আশা করি এ প্রতীকটি অন্য কোনো দলও পাচ্ছে না। পেলে তখন সেটা নিয়ে কথা বলা যাবে।’
আইন কী বলছে?
১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ ১৩০ অনুযায়ী, বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক হলো পানিতে ভাসমান একটি শাপলা ফুল। এই প্রতীকের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ধানের শীষ ও পাটপাতা এবং তারকা চিহ্ন।
এই আইনের ৪ ধারায় বলা আছে, এ প্রতীকের কোনো অপব্যবহার আইনত দণ্ডনীয়। এক বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশ্লেষক ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘জাতীয় প্রতীক আইনত সংরক্ষিত। জাতীয় পতাকা বা প্রতীকের মতোই শাপলা প্রতীক হিসেবে ব্যবহারে বিধিনিষেধ রয়েছে। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার অনুমতি নেই।’
‘কাঁঠাল থাকলে শাপলা কেন নয়?’
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলছেন, ‘জাতীয় ফল কাঁঠাল একটি দলের প্রতীক হতে পারলে, জাতীয় ফুল শাপলাও হতে পারে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে ২২ জুন সন্ধ্যায় সাক্ষাৎ শেষে নির্বাচন ভবনের নিচে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
নাহিদ বলেন, আমাদের প্রথম পছন্দ শাপলা। আশা করছি, জনগণের মার্কা হিসেবে, গণঅভ্যুত্থানের মার্কা হিসেবে, গ্রাম বাংলার প্রতীক হিসেবে এনসিপি শাপলা পাবে। শাপলা মার্কা নিয়ে আগামী দিনে নির্বাচনে অংশ নেব।
তিনি বলেন, ‘ইসির যে আইন আমরা পর্যালোচনা করেছি, সেখানে এ ধরনের কোনো বাধা নিষেধ নেই। জাতীয় ফল হিসেবে কাঁঠাল একটি দলের মার্কা হিসেবে রয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখিনি বলে আমরা শাপলা প্রতীক চেয়ে আবেদন করেছি।’
‘শাপলা’ জাতীয় প্রতীক হিসেবে পরিচিত এমন প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জাতীয় প্রতীক কেবল শাপলা নয়; শাপলা, ধানের শীষ, তারকা-এগুলো মিলিয়ে জাতীয় প্রতীক।’
আবেদন নিয়ে পর্যালোচনা করছে কমিশন
নির্বাচন কমিশন এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘আবেদন পেয়েছি, সব দিক পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’