বিশ্বখ্যাত দানবীর আগা খান ৮৮ বছর বয়সে পর্তুগালে মারা গেছেন। দাতব্য সংস্থা আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (একেডিএন) এক বিবৃতিতে তার মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘লিসবনে ইন্তেকাল করেছেন তিনি। মহামান্যের পরিবার ও বিশ্বব্যাপী ইসমাইলি সম্প্রদায়ের প্রতি সমবেদনা জানায় সংস্থাটি।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার চেষ্টা করছি, যেমনটি আগা খান চেয়েছিলেন। তার মনোনীত উত্তরসূরির নাম শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে। বিশ্বের দেড় কোটি ইসমাইলি মুসলিমের ৪৯তম বংশানুক্রমিক ইমাম বা আধ্যাত্মিক নেতা ছিলেন তিনি।
নিজের রিয়েল এস্টেট ব্যবসার মডেলের সামনে ১৯৬০ সালের আগা খান, ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস
তিনি চার দেশের নাগরিক ছিলেন। ব্রিটিশ, ফরাসি, সুইস ও পর্তুগিজ নাগরিকত্বের অধিকারী এই ধনকুবের বিশ্বের দরিদ্র মানুষের সহায়তায় প্রচুর অর্থ দান করেছেন। ১৯৫৭ সালে তার দাদা স্যার সুলতান মোহাম্মদ শাহ আগা খান মারা গেলে ২০ বছর বয়সে শিয়া ইসমাইলি মুসলিমদের ইমাম নিযুক্ত হন।
তার সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৮০০ মিলিয়ন ডলার থেকে ১৩ বিলিয়ন ডলার। এই সম্পদ তিনি পারিবারিক উত্তরাধিকার, ঘোড়া পালন ও রেসলিং, পর্যটন ও রিয়েল এস্টেটের বিনিয়োগ থেকে উপার্জন করেছিলেন। আগা খানের দাতব্য সংস্থা শত শত হাসপাতাল, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রকল্প পরিচালনা করে, মূলত উন্নয়নশীল বিশ্বে।
১৯৫৩ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় তরুণ আগা খান, ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস
পাকিস্তানের করাচিতে আগা খান ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া হার্ভার্ড ও এমআইটির যৌথ উদ্যোগে আগা খান প্রোগ্রাম ফর ইসলামিক আর্কিটেকচার চালু করেন। ভারতীয় ঐতিহ্যের সংরক্ষণেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, বিশেষ করে দিল্লির ঐতিহাসিক হুমায়ুনের সমাধির সংস্কারে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাথে দানবীর আগা খান, ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস
প্রিন্স শাহ করিম আল হুসেইনি আগা খান ১৯৩৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কাটে কেনিয়ার নাইরোবিতে। পরে তিনি সুইজারল্যান্ডে ফিরে গিয়ে লে রোজি স্কুলে পড়াশোনা করেন। এরপর হার্ভার্ডে ইসলামের ইতিহাস নিয়ে পড়ালেখা করতে আমেরিকা পাড়ি জমান। প্রিন্স করিম আগা খান বিলাসবহুল জীবনযাপন উপভোগ করতেন। বাহামায় একটি ব্যক্তিগত দ্বীপ, একটি সুপার-ইয়ট ও ব্যক্তিগত বিমান ছিল তার।
ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস ও তার প্রয়াত মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন আগা খান। রাজা তৃতীয় চার্লসকে এই সমাজসেবীর মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত বন্ধুর এই মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত রাজা চার্লস। তিনি আগা খানের পরিবারের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ রাখছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ রাজপুত্রকে দূরদর্শিতা, বিশ্বাস ও উদার মানুষ এবং অসাধারণ একজন নেতা হিসেবে বর্ণনা করে শ্রদ্ধা জানান।
তথ্যসূত্র: বিবিসি ও নিউ ইয়র্ক টাইমস
