Home টপ পোস্ট বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয় যুক্তরাষ্ট্রে

বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয় যুক্তরাষ্ট্রে

ইকবাল হোসেন
১২৫ views
অর্থ পাচার

বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন উপায়ে প্রতি বছর কোটি কোটি ডলার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয় যুক্তরাষ্ট্রে।

ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যান্ড কমব্যাটিং ফাইন্যান্স অব টেররিজম শীর্ষক সর্বশেষ কৌশলপত্রে এমন তথ্য উঠে এসেছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় সরকারকে আন্তর্জাতিক বিধিবিধান অনুযায়ী এ কৌশলপত্র তৈরি করতে হয়।

কৌশলপত্রে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয় এমন  ১০টি দেশ বা অঞ্চলের নাম তুলে ধরা হয়েছে। এই ১০ দেশ হচ্ছে— যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কেম্যান আইল্যান্ড ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে। ফলে এসব দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে, বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। এ ক্ষেত্রে অর্থের অবৈধ ব্যবহারকে কেন্দ্র করে একটি দুষ্টচক্র তৈরি হয়। যেমন, যদি দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদেরা দুর্নীতির অর্থ সফলভাবে পাচার বা লুকিয়ে রাখতে পারেন, তাহলে সে অর্থ যথাযথ জবাবদিহি ছাড়াই ক্ষমতা ধরে রাখতে সহায়ক হয়। আর এভাবে ক্ষমতায় থেকে গেলে দুর্নীতি বা টাকা পাচার শনাক্ত করে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকেই তারা দুর্নীতিগ্রস্ত করতে সক্ষম হন।

কৌশলপত্রে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অবৈধ অর্থের প্রবাহের বড় উৎস হচ্ছে— সরকারি কর্মকর্তা ও প্রভাবশালীদের ‘গ্র্যান্ড’ বা মহাদুর্নীতি, বিভিন্ন ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধ, যেমন চোরাচালান, মাদক ও মানব পাচার, ব্যাংকঋণ কেলেঙ্কারি ও দ্রুত অবলোপন, জাল-জালিয়াতি, অবৈধভাবে কর্মরতদের বিদেশিদের অর্থ অবৈধভাবে লেনদেন এবং বৈধ আয় হলেও কর ফাঁকি দিয়ে ও প্রচলিত বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার আইন লঙ্ঘন করে তা পাচার।

আর অর্থ পাচারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্থিকসহ সব ধরনের অপরাধ লুকানো, কর ফাঁকি, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার আইন ও বিনিয়োগ নীতি লঙ্ঘন, অন্য দেশে নিরাপদ বিনিয়োগ এবং উন্নত দেশের উঁচু মানের জীবনযাত্রার লোভে সেখানকার নাগরিকত্ব লাভ। মূলত বিনিয়োগ ভিসা, স্থায়ীভাবে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য বসবাসের অনুমোদন, বিভিন্ন সেকেন্ড হোম প্রকল্প ও নমনীয় বিনিময় হারের ব্যবস্থা বাংলাদেশের নাগরিকদের অর্থ পাচারে উৎসাহিত করছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের বড় মাধ্যম হুন্ডি। সব ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ডের অর্থ পরিশোধের জন্য হুন্ডির ব্যবহারই বেশি। দেশের রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ীদের অনেকেরই ছেলেমেয়েরা বিদেশে থাকে। তারা মনে করেন, ভবিষ্যৎ সেখানেই, বাংলাদেশে নয়। এ কারণেও অর্থ অন্য দেশে চলে যায়। কানাডার ‘বেগম পাড়া’ এর বড় উদাহরণ। আরেকটি কারণ হচ্ছে দেশে বিনিয়োগের ভালো ক্ষেত্র না থাকা। সুশাসনের অভাবেই মূলত একটি দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়ে থাকে।

এদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক (টিজেএন) বলছে, টাকা পাচারের মূল গন্তব্য হচ্ছে কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্রসহ উন্নত কয়েকটি দেশ, যাদের ট্যাক্সহ্যাভেন বা কর ফাঁকির অভয়ারণ্য বলা হয়। এর মধ্যে শীর্ষ ১০-এ আছে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, কেম্যান আইল্যান্ড, বারমুডা, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ,  হংকং, জার্সি, সিঙ্গাপুর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।

অর্থ পাচার এক ধরনের ক্যান্সার, যা দেশের জাতীয় অর্থনীতির পরিধি সংকুচিত করছে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, পরিস্থিতি উত্তরণে আইনি কাঠামো করলেও তা বাস্তবায়নে সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে। অর্থ পাচার প্রতিরোধে আইনের সংশোধন, কার্যকর প্রয়োগ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ এবং পাচারকারীদের নাম প্রকাশে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সমঝোতা হওয়া উচিত।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অর্থ পাচার প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠন, জাতীয় বাজেটে কালো টাকা সাদা করার অনৈতিক চর্চা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে অর্থ পাচার প্রতিরোধে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ