Home সর্বশেষ তুষারে ঢাকা অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি ‘মাউন্ট ফুজি’

তুষারে ঢাকা অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি ‘মাউন্ট ফুজি’

মোহাম্মদ রবিউল্লাহ
১৪০ views

সারা বিশ্বের পর্যটক ও পর্বতারোহীদের কাছেই জনপ্রিয় একটি স্থান মাউন্ট ফুজি। জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে হনশু দ্বীপে এটি অবস্থিত। এটি দেশটির সবচেয়ে বিখ্যাত পর্বত। বিশ্বের অন্যতম সৌন্দর্যময় এই পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা ৩ হাজার ৭৭৬ মিটার বা ১২ হাজার ৩৮৯ ফুট। অপূর্ব সৌন্দর্য্য আর অনন্য গঠনের এই পর্বতের আকর্ষণে বছরে প্রায় তিন লাখ পর্বতারোহী ছুটে আসেন হনশুতে।

দুই মাস সময় পান পর্বতারোহীরা

তুষারে আবৃত পাহাড়চূড়ার অপার সৌন্দর্য ও একে ঘিরে থাকা পাঁচটি লেকের সৌন্দর্য সমানভাবেই আকর্ষণীয়। প্রতি বছর জুলাই-আগস্ট মাসে এটি পর্বতারোহীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এ সময় মাউন্ট ফুজি অনেকটাই তুষারমুক্ত থাকে। আবহাওয়াও অপেক্ষাকৃত হালকা থাকে।

বছরের বাকি সময়টা পবর্তে আরোহন করাটা খুবই বিপদজনক। কারণ শীতকালে তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও নিচে নেমে যায়। এছাড়া বাতাসের বেগ এত বেশি থাকে যা একজন আরোহীকে প্রায় উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে। এ পর্বতশৃঙ্গের চূড়ায় আরোহণ করতে গেলে প্রায় ১০টি স্টেশন পার হতে হয়। এরমধ্যে পঞ্চম স্টেশন পর্যন্ত গাড়ি নিয়েই ওঠা যায়।

 

মাউন্ট ফুজি 1

সারাদিন অসংখ্যবার রূপ পরিবর্তন সত্যিই মনোমুগ্ধকর এক সৈান্দর্যের সৃষ্টি করে মাউন্ট ফুজি, ছবি: সিএনএন

 

সক্রিয় আগ্নেয়গিরি

এটি একটি লাভা গঠিত সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। ১৭০৭-১৭০৮ সালে এখানে সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটে। মাউন্ট ফুজির জ্বালামুখটি আশ্চর্যজনকভাবে প্রতিসম, যা বছরের বেশ কয়েক মাস বরফাচ্ছাদিত থাকে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যদি মাউন্ট ফুজির প্রবল অগ্ন্যুৎপাত ঘটে, তবে টোকিও শহরটি ছাইয়ের নিচে চাপা পড়ে যেতে পারে।

জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতীক

এ ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি মাউন্ট ফুজিকে নিয়ে জাপানিদের গর্বের শেষ নেই। জাপানিদের কাছে এটি শুধু একটি পর্বত নয়, অন্যতম জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতীকও। কথিত আছে, ৬৬৩ সালে এক ভিক্ষু প্রথমবার এই পর্বত জয় করেন। অন্যদিকে, ৮৬০ সালে স্যার আলোক নামে এক বিদেশি প্রথম ফুজি আরোহণ করেন।

পবিত্র পর্বত

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও মাউন্ট ফুজি জাপানে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। সিনতোজিয়াম ধর্মাবলম্বীদের কাছে ফুজি একটি বিশেষ গুরত্বপূর্ণ তীর্থ স্থান। এটি জাপানের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। উচ্চতার দিক থেকে বিশ্বে এর অবস্থান ৩৫তম। এটি জাপানের তিনটি পবিত্র পর্বতের একটি। অপর দুটি হলো মাউন্ট তাতে ও মাউন্ট হাকু।

 

গভীর খাদ

মাউন্ট ফুজির চূড়ায় গভীর আগ্নেয়গিরির গর্ত, ছবি: জাপান আপক্লোজ

 

বিশ্ব ঐতিহ্যে মাউন্ট ফুজি

পর্যটক ও পর্বতারোহীদের কাছে জনপ্রিয় এই স্থানটি ২০১৩ সালে সাংস্কৃতিক এলাকা হিসেবে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান পায়। রৌদ্রজ্জ্বল দিনগুলোতে সারা টোকিও শহর থেকে এর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। দূর থেকে মাউন্ট ফুজি দেখতে অনেকটা শঙ্কুসদৃশ আকৃতির।

সারাদিনে অসংখ্যবার এর রূপ পরিবর্তন সত্যিই মনোমুগ্ধকর এক সৈান্দর্যের সৃষ্টি করে। এজন্য কখনও এটি শিল্পীর কাছে রঙ্গিন তুলি, কখনওবা ভ্রমণপিয়াসুদের কাছে দুর্লভ কিছু জয়ের হাতছানি।

হিমালয়ের পরে সুন্দর পর্বত

মাউন্ট ফুজি কখনও স্থানীয়দের কাছে উপাসনার আরাধ্য, কখনও শিল্পীর চোখে ক্যানভাসের বিষয়ভাবনা, কখনওবা পর্যটকের প্রশ্নাতীত গন্তব্য। এই সুউচ্চ জাপানি পর্বতটি পৃথিবীর বুকে প্রকৃতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। কারও কারও মতে, হিমালয়ের পরে এই মাউন্ট ফুজিই বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর পর্বত।

আগ্নেয়গিরি

পিক সিজনে মাউন্ট ফুজির গমনপথে প্রায়ই ভিড় দেখা যায়, ছবি: ডয়চে ভেলে

 

দর্শনীয় স্থান

ফুজি সংলগ্ন লেক কাওয়াগুচিকো, রিসোর্ট এরিয়া হাকোন, কামাকুরা, ফুজি শিবাজাকুরা ফেস্টিভাল ও ইনোসিমা মাউন্ট ফুজির দর্শনীয় স্থান। কাওয়াগুচিকো ফুজির ৫টি লেকের একটি। পর্বতটির বিখ্যাত ৩৬টি ভিউর অনেকগুলোই এই লেক থেকে দেখা যায়। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফুজির বরফাবৃত চূড়ার প্রতিবিম্ব ফুটে ওঠে লেকের টলটলে পানিতে। লেক পাড়ের চমৎকার রিসোর্টে রাত্রিযাপন করতে পারবেন, দেখতে পাবেন ঘরের জানালা থেকেই অপূর্ব ফুজিকে।

ফুজি সংলগ্ন রিসোর্ট এরিয়া হাকোন থেকে উপভোগ করা যায় প্রাকৃতিক আগ্নেয় উষ্ণ প্রসবণে স্নানের আনন্দ। যাকে বলা হয় অনসেন। এটি মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি এনে দেয়।

বিশালাকৃতির বুদ্ধমূর্তি, মন্দির, কুঠি, ঐতিহাসিক নিদর্শন ও সার্ফিং করার চমৎকার পরিবেশ রয়েছে কামাকুরায়। এই বিচ থেকে মাউন্ট ফুজিকে ভিন্ন এক রূপে দেখা যায়।

এপ্রিলের শেষভাগ থেকে মে মাসের শেষ ভাগ পর্যন্ত ফুজির শ্বাসরুদ্ধকর ফুলেল রূপ দেখতে শিবাজাকুরা ফেস্টিভালের জুড়ি মেলা ভার। ৬ একর জায়গাজুড়ে ফোটে ৮০ হাজারেরও বেশি শিবাজাকুরা ফুল। এটি এক ধরণের পাহাড়ি ফুল। হালকা ঢালু পাহাড়ের গায়ে এই ফুলের বিকাশ যেন বিছিয়ে দেওয়া রঙ্গিন চাঁদর। চমৎকার লাল, গোলাপি আর সাদা ফুলের মেলায় হারিয়ে যাবার উৎসবে ভেসে যান পর্যটকরা।

 

মাউন্ট ফুজির দর্শনার্থী

ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মুখর জাপানের মাউন্ট ফুজি, ছবি: বিবিসি

 

ইনোসিমা সাগামি বে এর একটি দ্বীপ। গ্রীষ্মের সময় বীচের আবহাওয়া থাকে খুবই চমৎকার। তাই পর্যটকদের ভিড়ও হয় সে সময়। টোকিও থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার দূরত্বে এর অবস্থান। কামাকুরার কাছেই। এই দ্বীপ নিজে একটি অনন্য সৌন্দর্য্যের ভান্ডার। তার সাথে বাড়তি পাওনা ফুজির আরেকটি ভিন্ন এঙ্গেলের রূপ।

লাখো দর্শনার্থীর সূর্যোদয় দেখা 

এই পর্বতটির বিখ্যাত ঢাল থেকে প্রতি বছর লাখো দর্শনার্থী সূর্যোদয় দেখতে যান। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্বতটি দেখতে অতিরিক্ত পর্যটক ভিড় করছেন। দর্শনার্থীরা পর্বতে আবর্জনা ফেলছেন। অনুপযুক্ত গিয়ার নিয়ে হাইকিং করেছে। যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে। দর্শনার্থীরা আহত হচ্ছেন।

গত জুলাই মাসে কর্তৃপক্ষ নতুন ব্যবস্থা নিয়েছে। কতজন প্রতিদিন পর্বতারোহণ করতে পারবে, তাও ঠিক করে দিয়েছে। এখন কর দিয়ে পর্বতে চড়তে হবে। বর্তমানে পর্বতারোহীদের জনপ্রতি ২ হাজার ইয়েন বা ১৩ ডলার দিতে হয়। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪ হাজার পর্বতারোহী যেতে পারে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন, জাপান আপক্লোজ ও বিবিসি

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ