অন্তর্বর্তী সরকার মোবাইল ইন্টারনেট সেবায় কর বাড়ানোর চিন্তা করছে। মোবাইল ইন্টারনেট সেবায় নতুন করে ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করতে পারে। বিষয়টি এখন সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিবেচনাধীন। সরকার কর বাড়ালে মোবাইল অপারেটরগুলো সেবা মূল্য বাড়াতে পারে। এতে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মোবাইল অপারেটররা জানিয়েছে, এই হারে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হলে প্রতি ১০০ টাকা রিচার্জের (মোবাইল ফোনে ভরা) বিপরীতে সরকার শুধু কর বাবদ পাবে প্রায় ৩০ টাকা। তরঙ্গ, লাইসেন্স ও অন্যান্য ফি তো রয়েছেই। এখন মোবাইল ফোনে ১০০ টাকা ভরলে ২৮ টাকার মতো নিয়ে যায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের ১০০ টাকা আয়ের ৫৪ টাকার বেশি কর ও ফি বাবদ চলে যায় সরকারের কোষাগারে।
আওয়ামী লীগ সরকার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে, অর্থাৎ গত জুনে মোবাইল ফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছিল। এখন সম্পূরক শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও সারচার্জ মিলিয়ে মোট করভার ৩৯ শতাংশের বেশি।
সরকার এমন একটি সময়ে মোবাইল ইন্টারনেট সেবায় আবার কর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে, যখন দেশে নিত্যপণ্য ও সেবার দাম চড়া। মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি। অপারেটররা বলছে, জীবনযাত্রার ব্যয়, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও অন্যান্য কারণে মুঠোফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর মাসে মুঠোফোনের গ্রাহক দাঁড়ায় ১৮ কোটি ৮৭ লাখ (এক ব্যক্তির একাধিক সিম থাকতে পারে), যা গত জুনের চেয়ে ৭৩ লাখ কম। অন্যদিকে জুনের চেয়ে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৭ লাখ কমে ১৩ কোটি ২৮ লাখে নেমেছে।
জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোবাইল ইন্টারনেট সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ছিল ৩ শতাংশ। এর পর থেকে ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। সম্পূরক শুল্ক ছাড়া রয়েছে ভ্যাট, ১৫ শতাংশ। ১ শতাংশ সারচার্জও আদায় করে সরকার। এ ছাড়া প্রতিটি সিম বিক্রিতে ৩০০ টাকা করে কর নেয় সরকার, যা গত অর্থবছরে ছিল ২০০ টাকা।
মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরের ওপর করপোরেট ৪৫ শতাংশ। মানে হলো, কোম্পানিগুলো ১০০ টাকা মুনাফা করলে ৪৫ টাকা আয়কর নেয় সরকার।
জিএসএমএ ২০২৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের করনীতি নিয়ে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, মুঠোফোন খাতে সমপর্যায়ের বাজার ও প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর বাংলাদেশে। মোবাইল ফোন সেবা খাতে বাংলাদেশে ২০২১ সালে বিভিন্ন কর ও ফি হার ছিল ৫৫ শতাংশ, যা সাব সাহারা অঞ্চলে ৩৫ শতাংশ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় ২৪ শতাংশ, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ২৪ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক গড় ২২ শতাংশ। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেপাল, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের ওপর করপোরেট কর অনেক বেশি।