ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েনের মধ্যেও গত পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে পণ্য রপ্তানি আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ভারতে ৮০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার কোটি (১০ বিলিয়ন) ডলারের বেশি। অর্থাৎ বাংলাদেশ যত পণ্য আমদানি করে তার অনেক কমই রপ্তানি করে থাকে।
অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে ২১৩ কোটি (২.১৩ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। ভারতে রপ্তানি করে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় বাংলাদেশের সেটাই প্রথম।
তার আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) ভারতে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ আয় করেছিল ১৯৯ কোটি ১৪ লাখ (১.৯৯ বিলিয়ন) ডলার। যা ছিল ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে ৫৫ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি।
তবে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেই রপ্তানিতে ভাটা পড়ে; আয় নেমে আসে ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ (১.৫৭ বিলিয়ন) ডলারে।
গত জুলাই মাসে অর্থ বছরের শুরুতেই বাংলাদেশে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়। তা আগস্টের শুরুতেই জনবিস্ফোরণে রূপ নিলে পতন ঘটে শেখ হাসিনার সরকারের। তিনি পালিয়ে আশ্রয় নেন ভারতে। এরপর থেকে ঢাকা-নয়া দিল্লি কূটনৈতিক টানাপড়েন চললেও নভেম্বরে এসে তা তীব্রতা পায় হিন্দু ধর্মীয় নেতা চিন্ময় ব্রহ্মচারী গ্রেপ্তারের পর। তার জেরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে এক বিক্ষোভ থেকে বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন।
অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বৈরিতার দিকে চলার প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় সংগঠন ও ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এই উত্তেজনার মধ্যেই রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গত বৃহস্পতিবার রপ্তানি আয়ের দেশভিত্তিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে গত পাঁচ মাসে ভারতে পণ্য রপ্তানিতে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে।
গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভারতে ৮০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ৭০ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।
২০১১ সালে ভারত বাংলাদেশকে অস্ত্র ও মাদক বাদে সব পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দেয়। তবে সেই সুবিধা খুব বেশি কাজে লাগাতে পারছিল না বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা।
ওই বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশের বেশ কিছু কারখানার কাছ থেকে পোশাক নিয়ে টাকা দেয়নি ভারতীয় কোম্পানি লিলিপুট। সে জন্য বেশ কয়েক বছর পোশাক রপ্তানিতেও ভাটা পড়েছিল।
এরপর ভারতে রপ্তানি ধীরে ধীরে বাড়ছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো দেশটিতে পণ্য রপ্তানি আয় ১০০ কোটি বা ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। পাঁচ বছরের মাথায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেই আয় দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে তার আগে মাত্র চারটি অর্থবছরে ভারতে পণ্য রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের বেশি হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ভারতের বাজারে ১২৮ কোটি (১.২৮ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ১২৫ কোটি (১.২৫ বিলিয়ন) ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে ১০৯ কোটি ৬২ লাখ (১.০৯ বিলিয়ন) ডলারে নেমে আসে।
বাংলাদেশ ভারতে মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানি করে থাকে। এছাড়া কাঁচা পাট ও পাটজাতপণ্য, সুতা, প্লাস্টিক পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে।