রত ও পাকিস্তান হঠাৎ করেই গতকাল শনিবার (১০ মে) পূর্ণ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। এই যুদ্ধবিরতি এমন এক সময়ে করা হয়েছে, যখন ভারত-পাকিস্তানের পারস্পরিক হামলা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল এবং দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘর্ষ নতুন মাত্রা নিচ্ছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন এবং এর কৃতিত্ব দাবি করেন। তবে ভারত ও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য উঠে এসেছে—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে। এরই মধ্যে দুই পক্ষই যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলছে, ফলে প্রশ্ন উঠছে—এই শান্তি কতদিন টিকবে? খবর সিএনএনের।
যুদ্ধবিরতি কীভাবে এলো?
শনিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকাল ৮টার কিছু আগে (ভারত ও পাকিস্তানে সন্ধ্যা ৫টার দিকে), ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্ট দিয়ে জানান, “যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সারারাত আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।”
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, দুই দেশ কেবল যুদ্ধবিরতিতেই নয়, বরং একটি নিরপেক্ষ স্থানে আলোচনা শুরু করতেও সম্মত হয়েছে। তিনি জানান, গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে তিনি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছিলেন।
পাকিস্তান সরকার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দ্রুত নিশ্চিত করলেও, ভারতের তথ্য মন্ত্রণালয় জানায়, “এই সমঝোতা দুই দেশের মধ্যে সরাসরি আলোচনার ফল,” এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা স্বীকার করেনি। তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য কেন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ভিন্ন বার্তা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। ভারত বরাবরই আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা প্রত্যাখ্যান করে এবং নিজেকে উদীয়মান পরাশক্তি হিসেবে দেখে; বিপরীতে, পাকিস্তান বরাবরই বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা স্বাগত জানায়, বিশেষত কাশ্মীর ইস্যুতে।
ওয়াশিংটন ডিসির হাডসন ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. অপর্ণা পান্ডে বলেন, “কাশ্মীর নিয়ে ভারত কখনও মধ্যস্থতা মেনে নেয়নি। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করাই একমাত্র উপায়।”
শনিবার ঠিক কী ঘটেছিল?
সকালেও পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্ত। পাকিস্তান জানায়, ভারত তার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যার মধ্যে ইসলামাবাদ সংলগ্ন এলাকাও রয়েছে।
জবাবে পাকিস্তানও ভারতের বিমানঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালায়। কয়েক ঘণ্টা পর ভারতের কাশ্মীর অংশে — বিশেষ করে শ্রীনগর ও জাম্মুতে — বিস্ফোরণের খবর আসে। চার দিনের টানা পাল্টাপাল্টি হামলার পর, আন্তর্জাতিক মহলের চাপ ছাড়া এই সংঘর্ষ আরও বাড়তে পারত বলে আশঙ্কা করছিলেন বিশ্লেষকরা।
সংঘর্ষের সূত্রপাত কীভাবে?
এই দফার সংঘাতের সূচনা হয় কাশ্মীরে — যেটিকে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই নিজেদের অংশ বলে দাবি করে।
২৬ এপ্রিল ভারতের পেহেলগামে একটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় ২৫ ভারতীয় ও এক নেপালি নাগরিক নিহত হন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে “অপারেশন সিন্দুর” নামে পাল্টা অভিযান শুরু করে।
এই সংঘর্ষের ব্যাপ্তি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বিস্তৃত এবং উভয় দেশই একে অপরের অভ্যন্তর পর্যন্ত আক্রমণ চালিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র কেন জড়ালো?
দুই দিন আগেও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছিলেন, “এই যুদ্ধ আমাদের হাতে নেই, আমরাও এর নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারি না।” কিন্তু শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একাধিক গোয়েন্দা তথ্য আসে যা ইঙ্গিত দেয় সংঘাত দ্রুত আরও বড় আকার নিতে পারে। এরপরই স্টেট ডিপার্টমেন্ট সক্রিয় ভূমিকা নিতে বাধ্য হয়।
যুদ্ধবিরতি টিকবে কি?
এটি এখনও বড় প্রশ্ন। যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কাশ্মীরের দুই অংশে বিস্ফোরণের খবর এসেছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, পাকিস্তান একাধিকবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। পাকিস্তানও একই অভিযোগ এনেছে ভারতের বিরুদ্ধে, তবে বলেছে যে তারা “যুদ্ধবিরতির সঠিক বাস্তবায়নে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ”।
পর্যটক হত্যা-পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় উভয় দেশই একাধিক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে—যেমন: ভিসা বন্ধ, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা, এমনকি পানিবণ্টন চুক্তি থেকেও ভারতের সরে আসার ঘোষণা। এসব ব্যবস্থা আদৌ প্রত্যাহার হবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।