Home বিজ্ঞান বদলে যাবে ভূগোল, নতুন মহাসাগর আবিষ্কার!

বদলে যাবে ভূগোল, নতুন মহাসাগর আবিষ্কার!

মোহাম্মদ রবিউল্লাহ
৭৫ views

ভূ-তাত্ত্বিক পরিবর্তনের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে বিশ্ব। ফলে বদলে যাবে পৃথিবীর ভূগোল। হর্ণ অব আফ্রিকায় অবস্থিত আফার ট্রায়াঙ্গেলে ফাটল দেখা দিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ফাটল। এই ধারা চলমান থাকলে ধীরে ধীরে তা পরিণত হবে একটি নতুন মহাসাগরে। যা আমেরিকার খুব কাছে। আর এটি হতে যাচ্ছে পৃথিবীর ষষ্ঠ মহাসাগর।

আফ্রিকা মহাদেশে এমনই সম্ভাবনার খোঁজ পেয়েছেন গবেষকরা। কি কারণে এই মহাসাগর গঠন হতে যাচ্ছে তার কারণও আবিষ্কার করেছেন তারা। ভূ-তাত্ত্বিকদের মতে, আফার ট্রায়াঙ্গলে পরিবর্তনের ফলেই এমনটা হচ্ছে।

আফার ট্রায়াঙ্গল কী
আফার ট্রায়াঙ্গেল হল একটি ভূ-তাত্ত্বিক নিম্নচাপ। যেখানে নুবিয়ান, সোমালি ও আরবীয় এই তিনটি টেকটোনিক প্লেট একসঙ্গে মিলিত হয়। এই প্লেটগুলোর মধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে এটি নতুন করে নয় বরং লাখ লাখ বছর ধরেই ঘটছে এই ফাটল। ২০০৫ সালে গুরুত্বপূর্ণ এই রিফ্ট (ফাটল) প্রক্রিয়াটি গবেষকদের নজরে আসে।

নতুন মহাসাগর

সময়ের  সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে টেকটোনিক প্লেটের ফাটল, ছবি: সায়েন্স ডট হাউ স্টাফ ওয়ার্কস

আফার ট্রায়াঙ্গেল অঞ্চলের গভীর জীবাশ্বের রেকর্ড আধুনিক মানুষের প্রাথমিক পূর্বপুরুষদের সময়কাল থেকে পাওয়া যায়। এটি ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া ও পৃথিবীতে জীবনের বিবর্তনের মধ্যে জটিল সম্পর্কের  প্রমাণ করে।

দূরে সরে যাচ্ছে নুবিয়ান প্লেট
গবেষকরা বলছেন, ইথিওপিয়ান মরুভূমিতে ৩৫ মাইল দীর্ঘ ফাটল খুলে গেছে। এটি হতে পারে আফ্রিকা মহাদেশ বিভক্তের কারণ। সোমালি প্লেট নুবিয়ান প্লেট থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এতে প্রসারিত ও পাতলা হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর ভূত্বক।

টেকটোনিক প্লেটের এমন গতিবিধি পূর্ব আফ্রিকাকে মহাদেশটির বাকি অংশ থেকে দূরে টেনে নিয়ে যাবে। তবে এটি রাতারাতি হচ্ছে না। নতুন মহাসাগর তৈরি হতে সময় লাগবে প্রায় পাঁচ থেকে দশ মিলিয়ন বছর। জিপিএস ডিভাইস, স্যাটেলাইট রাডারসহ নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে ভূ-তাত্ত্বিকরা টেকটোনিক প্লেটের এমন আশ্চর্যজনক গতিবিধির খোঁজ পেয়েছেন।

রিফ্ট

ইথিওপিয়ান মরুভূমিতে ৩৫ মাইল দীর্ঘ ফাটল খুলে গেছে, ছবি: দ্য ব্রাইটার রাইডার

নতুন মহাসাগরের সুবিধা
নতুন মহাসাগর গঠনের পর অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ব্যাপক সুবিধার হাতছানি দিচ্ছে। স্থলবেষ্ঠিত দেশগুলোর জন্য বিশেষ করে বর্তমানে উগান্ডা ও জাম্বিয়ার মতো দেশগুলোও উপকূলরেখা অর্জন করবে। যা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নতুন পথ খুলে দেবে। ফলে তৈরি হবে নতুন বন্দর, মাছ ধরার জায়গা ও সমুদ্রের তলদেশে চালু হবে ইন্টারনেট অবকাঠামো।

এর মধ্যদিয়ে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আমূল বদলে যাবে। ফলে শিল্প ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটবে। এ ছাড়া একটি নতুন সমুদ্রের গঠন স্বতন্ত্র বাস্তুসংস্থানগত পরিবেশের দিকে পরিচালিত করবে। বৃদ্ধি পাবে সামুদ্রিক বৈচিত্র্য। পাশাপাশি সমুদ্র বিবর্তন সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের দ্বার উন্মোচিত হবে।

নতুন মহাসাগর 1

নতুন একটি মহাসাগর গঠন অত্যন্ত জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া, ছবি: দ্য ব্রাইটার রাইডার

নতুন মহাসাগরের অসুবিধা
লাখো বছরের ব্যবধানে নতুন মহাদেশ ও মহাসাগর তৈরি হয়। আসন্ন ষষ্ঠ মহাসাগর অববাহিকা তৈরি হবে। পানির এই নতুন আধারের ফলে আফার অঞ্চলে লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর ও পূর্ব আফ্রিকান রিফ্ট উপত্যকায় বন্যা দেখা দিতে পারে। ফলে পূর্ব আফ্রিকার এই অংশটি নিজস্ব আলাদা মহাদেশ হয়ে যাবে।

নতুন একটি মহাসাগর গঠন অত্যন্ত জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যার মধ্যে মহাদেশীয় ভাঙ্গন থেকে মধ্য-সাগরীয় বৃদ্ধি পর্যন্ত ভাঙ্গনের বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। আফ্রিকার পূর্বদিকের এই মরুভূমিতে দীর্ঘ ৩৫ মাইল এলাকাজুড়ে ফাটল ধরার দাবি বড় ধরনের বিপদের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ফাটল প্লেট

আরব প্লেট প্রতি বছর প্রায় ১ ইঞ্চি হারে আফ্রিকা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, ছবি: ভোকাল ডট মিডিয়া

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০০৫ সালে ইথিওপিয়ার মরুভূমির ফাটল ইস্ট আফ্রিকান রিফ্ট ভ্যালি নামে পরিচিত। তিনটি বড় টেকটনিক প্লেটের নড়াচড়া বাড়লে জোরালো ভূমিকম্পের সম্ভাবনাও থাকছে। গবেষকরা বলছেন, তিনটি প্লেটের মধ্যে দূরত্ব ভবিষ্যতে বাড়তে পারে।

গবেষকরা বলছেন, আরব প্লেট প্রতি বছর প্রায় ১ ইঞ্চি হারে আফ্রিকা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং আফ্রিকান প্লেটগুলো প্রতি বছর ০.২ থেকে ০.৫ ইঞ্চির মতো ধীর গতিতে পৃথক হচ্ছে। এটি আফ্রিকার চূড়ান্ত বিভাজনের একটি স্পষ্ট লক্ষণ। এতে আফ্রিকা ভেঙে তৈরি হতে পারে নতুন মহাদেশ।

তথ্যসূত্র: ইকোটিসিয়াস ও দ্য ব্রাইটার রাইডার

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুন